প্রত্যেক সফল পুরুষের পেছনেই নাকি কোনো না নারী থাকে। ইতিহাসের দিকে তাকালে এমন হাজারো প্রমাণও মিলবে।
তেমন উদাহরণ অবশ্য স্টিভ জবসের স্ত্রী লরেন পাওয়েল জবসের গল্পেই উঠে আছে। সদ্য প্রভাবশালী ম্যাগাজিন ফোর্বাস ধনীদের তালিকা প্রকাশ করেছে। এ ধনীদের নব্য তালিকায় অচিরেই পাওয়েল জবসের নাম উঠে আসবে।
এরই মধ্যেই এ খবর আলোচনার জন্ম নিয়েছে। প্রযুক্তিবিশ্বে ছাড়িয়ে থাকা সাধারণ মানুষের হৃদয়ের গভীরে ঠাঁই করি নিয়েছেন স্টিভ জবস। তিনি এখন শুধু একজন ব্যক্তি নন। তিনি বিশ্ব ইতিহাসের একজন আইকন। মানুষের জীবনধারাকে বদলে নতুন এক জগতে নিয়ে যাওয়া এ উদ্ভাবকের স্ত্রী পাওয়েল জবস একাধারে ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক। তিনি স্টিভ জবস ট্রাস্টেরও উদ্যোক্তা।
স্টিভের বর্ণাঢ্যময় জীবনে বহু ব্যক্তির কথা উঠে আসে। কিন্তু তার স্ত্রীকে নিয়ে খুব কমই আলোচনা হয়। স্টিভ যেমন প্রচন্ড পরিমাণ মিডিয়া প্রেমিক ছিলেন। তবে ঠিক উল্টো ছিলেন পাওয়েল। তিনি মিডিয়ার সামনে খুব একটা আসতে পছন্দ করেন না। আড়ালে নিজের কাজ করে যাওয়া পছন্দ। কোনো কাজের প্রচার প্রচরণাও পাওয়েলের অপছন্দ।
অথচ শিক্ষা নিয়ে পাওয়েল বিশ্বজুড়ে কাজ করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে স্টিভ জবস চলে যাওয়ার পর তিনি মানুষের সঙ্গে কিছুটা মেশা শুরু করেছেন। মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে পাওয়েল শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
সম্প্রতি একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে হাজির হন পাওয়েল। সেখানে তিনি জোর দিয়ে চলমান সময়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করেন। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন আইন এবং অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন অন্যতম।
পাওয়েলের কাজ সম্পর্কে পারিবারের এক আত্মীয় বলেন, স্টিভের চলে যাওয়ার থেকেই পাওয়েল খুব হতাশায় ডুবে ছিলেন। তবে ভেঙে পড়েনি। পারিবারিক দায়িত্ব চমৎকারভাবেই সামাল দিয়েছে। তার মধ্যে নিজের কাজের ব্যাপারে পাওয়েল খুবই যত্নশীল। স্টিভের স্ত্রী হিসেবে মানুষ তাকে যতটা না চেনে তার চেয়ে বেশি পরিচিত হবে নিজের যোগ্যতায়। এমনটাই হবে পাওয়েলের সঙ্গে।
ধনীদের তালিকায় অচিরেই লেখাবে নিজের নাম। এমন বক্তব্য শুনে পাওয়েল বলেন, কয়েকটা সংখ্যার জন্য ধনী-গরীব বিষয়টি আমার একদমই পছন্দ না। আমার ধনী হওয়াতে কোনো লাভ নেই। প্রতিটি মানুষ যেদিন ধনী হবে সেদিনই একটি সুন্দর পৃথিবী আমরা দেখতে পাবো।
স্টিভ চলে যাওয়ার পর থেকেই পরিবার সামাল দেওয়ার জন্য বিভিন্ন ব্যবসায় মনোযোগী হন পাওয়েল। এ ছাড়া শিক্ষাখাতকে নতুন দিশা দেওয়ারও চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
পাওয়েল জবসের বয়স এখন ৪৯। বড় হয়েছেন ওয়েস্ট মিলফোর্ডে। পড়াশোনা করেছেন ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভেনিয়া। পড়াশোনা শেষ করেই একটি ট্রেড প্রতিষ্ঠানে চাকরি শুরু করেন। এক পর্যায়ে চাকরি বাদ দিয়ে আবার স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে ব্যবসা বিষয়ে পড়তে শুরু করেন। সালটা ১৯৮৯। যখন স্টিভ জবস বক্তৃতা দেওয়ার জন্য প্রায়ই স্ট্যানফোর্ডে আসতেন।
এ প্রসঙ্গে স্টিভ তার বায়োগ্রাফিতে বলেন, হুট করেই আমার ডান পাশে তাকালাম। মুগ্ধ হয়ে দেখলাম অসাধারণ সু্ন্দর একটি মেয়ে। মুগ্ধতা আটকে রাখতে পারিনি। কথা বলার জন্য নিজের আবেগ আটকে রাখতে না পেরে নিজে থেকেই পরিচিত হলাম। তারপর কথা বলা শুরু। এভাবেই সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। তার দুবছর পরেই আমাদের বিয়ে হয়।
পাওয়েল ১৯৯৭ সাল থেকেই শিক্ষাখাতে কাজ করছেন। তার একটি সংগঠন নিম্নবিত্ত মেধাবী শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার খরচ যোগানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
তবে অভিবাস আইন নিয়ে পাওয়েল খুবই চিন্তিত। তিনি এ নিয়ে জনমত গড়ে তোলারও চেষ্টায় আছেন। অভিবাসন নিয়ে তিনি একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের কথাও ভাবছেন।
মজার বিষয় হচ্ছে কোনো কাজের তথ্যই পাওয়েল নিজে থেকে গণমাধ্যমে প্রকাশ করেননি। এসব প্রকাশ পায় তার পরিচিত সব মানুষের কাছ থেকেই। পাওয়েল নিরবে থাকতিই পছন্দ করেন। তিনি কাজে বিশ্বাস করেন। স্টিভের প্রতি তীব্র ভালোবাসা নিয়ে তিনি কাজে আরো উদ্যোমী হন।
স্টিভ সম্পর্কে স্ত্রী পাওয়েল বলেন, কে বলে স্টিভ নেই! আমাদের সঙ্গেই আছে। সারা পৃথিবীতে স্টিভের উদ্ভাবন ছড়িয়ে যাচ্ছে। সুতরাং স্টিভ সঙ্গেই আছে। আর খুব ভালোই আছে।
বাংলাদেশ সময় ২০৩৯ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১৩
সম্পাদনা: শেরিফ সায়ার, বিভাগীয় সম্পাদক/ সাব্বিন হাসান, আইসিটি এডিটর