বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ও প্রভাবশালী নারী অপরাহ উইনফ্রে। মাত্র নয় বছর বয়সে নির্যাতনের শিকার হয়ে নিজ বস্তি থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন।
সম্প্রতি বিখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। এ আয়োজনে বিশেষ বক্তা হিসেবে অপরাহ উইনফ্রে আমন্ত্রিত হন। তবে তার বক্তৃতার বড় অংশজুড়ে ছিল ব্যর্থতার গল্প। তিনি তার বক্তৃতায় বলেন, তুমি যত উপরেই উঠে যাও। একদিন অবশ্যই আসবে যখন তোমাকে সেই উচ্চতা থেকে পড়ে যেতে হবে। জীবনে একবার হলেও তোমাকে ব্যর্থ হতে হবে। এটা জীবনেরই অংশ।
অপরাহ তার বক্তৃতায় বারবার নিজের প্রসঙ্গই নিয়ে আসেন। জনপ্রিয় টেলিভিশন উপস্থাপিকা অপরাহ উইনফ্রে টক শো দিয়ে ২৫ বছর জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিলেন। তবে তার আগের গল্প খুবই ভয়াবহ। ক্যারিয়ারের শুরুতে তার প্রতিটি অনুষ্ঠানকে ‘ফ্লপ শো’ হিসেবে উল্লেখ করা হতো।
কিন্তু সময়ের সঙ্গে তিনি হয়ে উঠেছেন গণমাধ্যম ধনকুবের। আন্তর্জাতিকভাবে জনপ্রিয় টক শো ‘দ্য অপরাহ উইনফ্রে শো’ তাকে একাধিক এমি অ্যাওয়ার্ড এনে দিয়েছে। এ শো টেলিভিশনের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি প্রচারিত বলে বিবেচনা করা হয়।
এ সম্পর্কে উইনফ্রে হার্ভার্ডের সমাবর্তন বক্তৃতায় বলেন, জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় ছিল সেটি। কঠিন সময় পার করাটাই জীবনের প্রধান যুদ্ধ। এ যুদ্ধে জয়ী হলেই আত্মবিশ্বাস পাওয়া যায়। যার সূত্র ধরেই আজ আমি হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগ পেয়েছি। একটি কথা মনে রেখ- কঠিন সময় বা বিপদই শেষ না। এ মুহূর্ত অতিক্রম করবেই। যখন তুমি ব্যর্থ হবে, তাকে ব্যর্থতা মনে করবে না। ব্যর্থতা মানেই জীবন তোমাকে নতুন আরেকটি নতুন পথে নিয়ে যাচ্ছে।
তুমি জীবনের সাফল্য এবং আনন্দময় মুহূর্ত তখনই পাবে যখন তোমার একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকবে। একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য। যেখানে তোমার সর্বোচ্চ শক্তি, শ্রম, মেধা বিলিয়ে দেবে। তোমার মানবতাবোধ কাজে লাগাবে। মনুষ্যত্ববোধ অর্জন করাটাই আসল। সেই সঙ্গে তোমার সর্বোচ্চ বিলিয়ে দাও তোমার পরিবারের জন্য। এমনকি তোমার আশেপাশের মানুষের জন্য। তবেই তুমি জীবনের আনন্দ খুঁজে পাবে।
তোমাদের কাছে হার্ভার্ড নামটি আছে। তোমাদের কাগজে এ নাম বিরাট একটি ভূমিকা পালন করবে। এটা তোমাদের জন্য কলিং কার্ডের মতো। কিন্তু তোমাদের প্রত্যেকে নিজের কাছে একটি আলাদা সার্টিফিকেট অর্জন করতে হবে।
কোনো টাইটেল দিয়ে এর পরিমাপ করা সম্ভব না। যুদ্ধ করতে হবে। মানুষের জন্য, জাতির জন্য কিছু করার চেষ্টা করতে হবে। কারণ যেদিন তুমি কোনো কাজে পরাজিত হবে। হতাশায় নিমজ্জিত হবে। তখন সেই ছোট ছোট গল্পগুলো হতাশার গর্ত থেকে তোমাকে তুলে আনবে।
হর্ভার্ডের পড়াশোনা করার যোগ্যতা তোমাদের সৌভাগ্য করে তুলেছে। তোমাদের ওপর সারা বিশ্বের মানুষের দোয়া আছে। তোমরাই পারো এ দুঃখী পৃথিবীর মুখে হাসি ফোটাতে। এ কাজটি তোমরা করতে পারবে। আমি বিশ্বাস করি। তোমরাই পারবে।
কোনো অনুষ্ঠানে যখন কোনো পারফর্মার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে আমাকে প্রশ্ন করে, সব ঠিক আছে? সেই একই প্রশ্ন আমি তোমাদের করতে চাই। সব ঠিক আছে? এর অর্থ হলো- তোমরা কি আমাকে শুনতে পাও? আমাকে দেখতে পাও? আমি যা বললাম তার গুরুত্ব কি তোমরা বুঝতে পেরেছ?
অনুবাদ: শেরিফ সায়ার
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৫ ঘণ্টা, ৮ জুন, ২০১৩
সম্পাদনা: সাব্বিন হাসান