ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

শবে বরাত এবং কিছু কথা

তামীম রায়হান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:১৩, জুন ২৪, ২০১৩
শবে বরাত এবং কিছু কথা

প্রতিবছর শবে বরাত এলে মুসলমানদের মধ্যে নতুন করে উদ্দীপনা জেগে ওঠে। মূলত শবে বরাতের মাধ্যমেই যেন আমরা রমজানের পবিত্র আবহে প্রবেশের প্রস্তুতি নিয়ে থাকি।



রাতভর মসজিদে মসজিদে ওয়াজ-মাহফিল এবং দুআ-মুনাজাতে ব্যস্ত সময় পার করেন আল্লাহ প্রেমিক মুসলমানরা। শবে বরাত উপলক্ষে আমাদের এমন নব উদ্দীপনা নিয়ে কেউ কেউ হাদীস ও কুরআনের আলো এনে ধুম্রজাল তৈরির চেষ্টা করেন, এ চেষ্টা কখনো কখনো সীমালঙ্ঘন করে এবং এতে সাধারণ মুসলমানরা বিভ্রান্ত হন।

এ রাত সম্পর্কে হাদীসের কিতাবসমূহে যা বর্ণিত হয়েছে সেসবের মধ্যে বায়হাকী শরীফের বর্ণনাটি উল্লেখযোগ্য। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (সা.) এ রাতের ব্যাপারে বলেছেন, আল্লাহ পাক এ রাতে বান্দাদের প্রতি নিমগ্ন হয়ে ঈমানদারদের মাফ করে দেন এবং কাফেরদের আরও সুযোগ দেন। আর হিংসাপরায়ণ লোকদের ঝুলিয়ে রাখেন যতক্ষণ না তারা হিংসা ছেড়ে দেয়। ইবনে মাজাহ এবং অন্যান্য হাদীসগ্রন্থে বর্ণিত হাদীসসমূহের সারমর্ম এটিই।

যেহেতু এ রাতে আল্লাহ পাক বান্দাদের দিকে বিশেষভাবে মনোযোগী হয়ে থাকেন, তাই এ রাতটুকু আল্লাহ পাকের শানে ইবাদত ও জিকির-আজকারে কাটিয়ে দেওয়া অবশ্যই সচেতন ঈমানদারের পরিচয়। তবে এটুকু করতে গিয়ে যেন আমরা রুটি-হালুয়া কিংবা আতশবাজির অবৈধ উৎসবে মেতে না উঠি, সেদিকেও লক্ষ রাখা বিশেষ প্রয়োজন। যে রাতে আল্লাহ পাক আমাদের দিকে তার বিশেষ দৃষ্টি দিচ্ছেন, ঠিক সেই মুহূর্তে যদি আমরা উৎসবে হৈ হুল্লোড়ে মেতে থাকি তবে তা কেমন জঘন্য বেআদবি, একটু কি ভেবে দেখেছেন?

শবে বরাতে নিজের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য বিশেষভাবে দুআ ও মুনাজাত করা উচিত। তবে এ সংক্রান্ত কোনো বিশেষ নামাজ কিংবা বিশেষ দুআর কথা কুরআন-হাদীসের কোথাও উল্লেখ নেই। শবে বরাতের পরদিন রোজা রাখার ব্যাপারেও কোথাও জোর নির্দেশনা নেই তবে রাখলে তা অবশ্যই পূণ্যের খাতায় ধর্তব্য।

শবে বরাতের এ সাধারণ সীমারেখার ভেতর থেকে আমরা নিজেদের পরকালীন প্রয়োজনে যে কোনো আমলই করি না কেন, তা অবশ্যই মহান শক্তিমান আল্লাহ পাক দেখছেন এবং বিবেচনা ভেদে তা কবুল করে নিচ্ছেন। শবে বরাত সংক্রান্ত সহীহ হাদীস কিংবা দুর্বল হাদীসের বিভ্রান্তিতে জড়িয়ে নামাজ-জিকির-ইবাদত বাদ দিয়ে ঘরে বসে থাকারও কোনো অর্থ নেই। যারা এসব ছড়িয়ে মুসলমানদের আমল থেকে বিরত রাখার নিন্দনীয় প্রচার কাজে ব্যস্ত, তারা দ্বীন ইসলামের মূল মর্মার্থ থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছেন।

যে কোনো উপলক্ষে যে কোনো সময়ে বান্দা তার রবের কাছে সমর্পিত হলেই মহান আল্লাহ পাক খুশি হন। আমরা জানিনা আমাদের ঠিক কোন সময়ের সামান্য অশ্রু কিংবা আহাজারি তিনি কবুল করে নিয়ে আমাদের চিরধন্য করবেন। কাজেই প্রতিটি প্রহর বিশেষ করে বরকতময় রজনীগুলোতে তার কাছে হাত পেতে কান্নাকাটি করার সুবর্ণ সুযোগ হেলায় হারানো উচিত নয়।

শবে বরাত সংক্রান্ত হাদীসসমুহে হিংসুক ব্যক্তিদের ব্যাপারে সতর্কবার্তা এসেছে। তাদের হিংসা বিদ্বেষ দূর না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ পাক তাদের আমলসমূহ ঝুলিয়ে রাখেন। কাজেই হানাহানি ভরা আজকের সমাজে এ বিষয়টি সম্পর্কে আমাদের সচেতনতা বিশেষভাবে প্রয়োজন। আল্লাহ পাক আমাদের বিদ্বেষমুক্ত হৃদয়ে তার কাছে সমর্পিত হওয়ার তাওফিক দান করুন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৮ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০১৩    
সম্পাদনা: শিমুল সুলতানা, অ্যাক্টিং কান্ট্রি এডিটর
ইসলাম ডেস্ক মেইল: bn24.islam@gmail.com

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।