ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

প্রাসাদের শহর রাজস্থান

লিয়াকত হোসেন খোকন, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১:৫৯, জুন ২৫, ২০১৩
প্রাসাদের শহর রাজস্থান

ঢাকা: ভারতের রাজস্থান রাজ্যজুড়ে আধুনিকতা আর উন্নয়নের ঢল নামলেও অতীতের অসংখ্য প্রাসাদ, কেল্লা, স্মৃতিসৌধ, বাগ-বাগিচা ভ্রমণকারীদের কাছে এখনও বেশি আকর্ষণীয়।

উল্লেখযোগ্য স্থানগুলো হলো- আজমির, মাউন্ট আবু, যোধপুর।

এর বাইরেও দেখার মতো জায়গা আছে-  বিকানীর, জয়সলমীর, বারমির। রাজস্থানকে মরুপ্রদেশও বলা হয় । মরুভূমি দেখতে চাইলে আপনাকে বিকানীর নয়তো জয়সলমীরে যেতে হবে।

যেভাবে যাবেন : সড়কপথে ঢাকা থেকে কলকাতা। কলকাতা থেকে দিল্লি রেল অথবা বিমান। ঢাকা থেকে সরাসরি দিল্লি গেলে বিমানপথে যাওয়া যাবে। এরপর দিল্লি থেকে বিকানীর যাবার ট্রেন সকালে ছেড়ে সন্ধ্যায় পৌঁছে।

যেখানে থাকবেন : বিকানীরে থাকার জন্য রাজস্থান রাজ্য পর্যটনের চোলামারু হোটেল আছে ডাকঘরের কাছে। পুরণসিং সার্কেল থেকে খানিকটা স্টেশনের দিকে গেলে হোটেলঘর।

আরও অনেক হোটেল ও লজ আছে বিকানীরে। তাই ওখানে গিয়ে কোনো অসুবিধা হবে না। বরং সঙ্গে সঙ্গে হোটেলে রুম পেয়ে যাবেন।

যা জানবেন : বিকানীরকে বলা হয় মরুভূমির সূচনা-অংশের শহর। সবুজের সমারোহ খুঁজে পাবেন না। যেদিকে যাবেন দেখবেন মরুভূমি। বিকানীর শহরের পত্তন হয় মধ্যযুগে সেই ১৪৮৮ সালে। এ শহরের প্রতিষ্ঠাতা রাজপুত শাসক রাও বিকাজী। তার নামেই এ শহরের নাম হয়েছে বিকানীর।

বিকানীর প্রধান আকর্ষণ জনাগড় কেল্লা। এর ভেতরে রয়েছে প্রাসাদ। এখানে দেখবেন চন্দ্রমহল, সূর্যমহল, শিসমহল, ফুলমহল, করনমহল, রানিমহল, ছত্রমহল, বাদলমহল প্রভৃতি।

প্রত্যেকটি শহরের মাঝখান থেকে শুরু করে ছাদের সিলিং পর্যন্ত অনবদ্যভাবে চিত্রিত ও কারুকার্যখচিত। রঙের উৎসব যেন প্রত্যেকটি মহলে। দুর্গের সংগ্রহশালাটি ঘুরে দেখার মতো।

মিউজিয়ামেও যেতে পারেন। নাম গঙ্গা গোল্ডের মিউজিয়াম। এখানে দেখবেন হরপ্পা সভ্যতা, গুপ্ত ও কৃষাণ যুগের নানা মহামূল্যবান নিদর্শন।

কেল্লা দেখা শেষ করে এবারে যান লালগড় প্যালেসে। বর্তমানে লালগড় প্যালেস বিলাসবহুল হোটেলে রূপান্তরিত হয়েছে। এখানে পাহাড় খোদাই করে তৈরি জালি ও জাফরির কাজ অনবদ্য। বারবার তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে হবে। দেবীকুণ্ড আর সুখসাগর হ্রদ দেখার জন্য আসুন এবার।

এসব কীর্তি দেখতে যেখানেই যান না কেন, অটো ভাড়া করে যেতে হবে। ক্যানেল ব্রিডিং ফার্ম বিকানীর থেকে ৯০ কিমি দূরে। এখানে গেলে দেখতে পাবেন শত শত উট। উটের পিঠে চেপে মরুর মাঝে কিছুক্ষণ বেড়িয়ে আসতে পারেন।

একই সুযোগে দেখে আসুন গজনের প্রাসাদ ও অভয়ারণ্য। গজনের প্রাসাদের দেয়াল, মেঝে এবং সিলিং সুন্দরভাবে চিত্রিত। প্রাসাদের কাছেই অভয়ারণ্য। এখানে দেখবেন মরুভূমির জীবজন্তু।

জয়সলমীর : বিকানীর দেখা শেষ করে এবার জয়সলমীরে যান। মরুভূমির মাঝখানে যেন রূপকথার শহর জয়সলমীর। শহরে ঢোকার পথে প্রথমেই সোনার কেল্লা দেখে তাকিয়ে থাকবেন। এখানে ৭৬ মিটার উচ্চ ত্রিকুট পাহাড়ের মাথায় রয়েছে জয়সলমীরের কেল্লা।

এখানে গিয়ে জানবেন ১১৫৬ সালে ভাটিরাজা জয়সলনগর পত্তন করেন। জয়সলমীরের স্থাপত্যকীর্তি, আসলেই দেখার মতো। মুগ্ধ হয়ে পড়বেন। বিশেষ করে সোনার কেল্লা বিশাল এলাকা নিয়ে বিস্তৃত। দুর্গের বাইরে শহর, ভেতরেও আধা-শহর।

শহর থেকে একটু দূরে গেলে দেখবেন তাজিয়া টাওয়ার। পাঁচতলা এই টাওয়ারটি মুসলিম শিল্পীরা স্থানীয় শাসকের সম্মানে বিনামূল্যে বানিয়ে দিয়েছিলেন। এর কাছেই জয়সলমীরের প্রাণ গদিসর জলাশয়।

মরুভূমির মাঝে এমন পানির উৎস খুব একটা দেখা যায় না। এখানে দেখবেন রং-বেরঙের পোশাক পরে স্থানীয় মহিলারা পানির কলস নিয়ে আসছে কিংবা পানি নিয়ে যাচ্ছে। এসব দৃশ্য আপনাকে অভিভূত করে তুলতে পারে।

জয়সলমীর শহর থেকে ১৬ কিমি দূরে গেলে দেখবেন অমরসাগর।

ধু-ধু মরুপ্রান্তরের আসল রূপ এবং সূর্যান্তের মধুরিমা উপভোগ করতে হলে জয়সলমীর থেকে ৪৫ কিমি দূরে স্যাম স্যান্ডস ডিউনে যান। এখানে এসে উটের পিঠে চেপে মরুভূমির আরও ভেতরে চলে যান।

দেখবেন, কোথাও গাছপালার চিহ্নমাত্র নেই। উঁচু-নিচু বালির চালের ওপর বাতাসের বিচিত্র শিল্পকর্ম দেখতে দেখতে বেলা পড়ে আসবে। ঠিক তখনই সূর্যাস্তের ক্ষণে মরুভূমি গোলাপি রং ধারণ করে। সেজন্য মরুশহরকে গোলাপী শহর নামে ডাকা হয়।

তারপর অন্ধকার নেমে আসে চারদিকে। কিছুদূরে একটু আলো ঘিরে জলা- সেদিকে উটে চেপে গিয়ে দেখে আসতে পারেন সুন্দর পোশাক পড়া স্থানীয় শিল্পীদের রাজস্থানী সংগীত।

জয়সলমীরে প্রতিবছর ডেজার্ট ফেস্টিভ্যাল হয়। সে সময় সেখানে গেলে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখতে পাবেন। যেমন- উটের নাচ, উটের সাজের প্রতিযোগিতা, গোঁফ ও পাগড়ির প্রতিযোগিতা বিবিধ। রাজস্থানের শিল্পপণ্য  কেনাকাটারও সবচেয়ে বড় সুযোগ পাওয়া যায় ‘মরু উৎসব’ উপলক্ষে।

জয়সলমীরে যেখানে থাকবেন : এখানে নানারকম দাম ও মানের হোটেল আছে। কেল্লার ভেতরেও হোটেল পাবেন। রাজস্থান ট্যুরিজমের হোটেলটির নাম মুসল। এখানে উঠলে ভালো হয়।

তারকাখচিত হোটেলে উঠতে হলে নারায়ণ নিবাস প্যালেস, হিমায়ত গড় প্যালেস, নয়তো হেরিটেজ টনে উঠুন। ভালো পরিবেশে থাকতে চাইলে হোটেল সানরে, রামা গেস্ট হাউস, ফোর্টভিউ হোটেল,   স্বস্তিকা হোটেল, দীপক রেস্ট হাউস, হোটেল প্যারাডাইস, আনন্দবিলাস হোটেল, গোল্ডেন রেস্ট হাউস নয়তো হোটেল জয়সল ক্যাসলে উঠুন।

বাংলাদেশ সময় : ১১৪০ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৩
সম্পাদনা: সুকুমার সরকার, আউটপুট এডিটর, কো-অর্ডিনেশন

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।