বিশ্বপ্রযুক্তির জোয়ারে ই-লার্নিং নিয়ে গবেষণার অন্ত নেই। মানুষের কাছে যেভাবেই হোক শিক্ষা পৌঁছে দিতে কাজ করে যাচ্ছে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান এবং বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
হ্যাকার স্কুলে পড়তে কোনো খরচ গুনতে হবে না। এমনকি নির্দিষ্ট কোনো সিলেবাসও এখানে মানা হয় না। কোনো পরীক্ষ নেই। এমনকি এ স্কুলে কোনো শিক্ষকও নেই। অদ্ভুত এ স্কুল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছেই।
নিউ ইয়র্ক শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এ স্কুলের তিন মাস সেশনে ক্লাস হয়। শুধু কোডিং বা প্রোগ্রামিং ভাষা শেখানো হয়। শিক্ষকহীন এ স্কুলে আছে কিছু গাইড। তাদের কাছে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন কোডিং প্রজেক্ট নিয়ে হাজির হয়। তারা তখন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসে সেই সব প্রজেক্ট বা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন।
গাইড এবং শিক্ষার্থী দুজনই তখন একটি সমস্যা সমাধানে মনোযোগী হয়ে ওঠেন। এ স্কুলের তত্ত্বাবধায়ক ম্যারি রোজ বলেন, আমরা সবাই এখানে শিখতে এসেছি। যারা আসেন, তারাও শিখতে আসেন। তাদের মাধ্যমে আমরাও শিখি। এখানে আমরা সবাই শিক্ষার্থী।
হ্যাকার স্কুলের তত্ত্বাবধায়ক ম্যারি রোজের একটি সাক্ষাৎকার সম্প্রতি প্রকাশিত হয়। তার সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ তুলে ধরা হলো।
তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে আপনার কাজটা এখানে কি?
আমরা চাই, ভালো প্রোগ্রামার তৈরি হোক। এখানে সবাই একসঙ্গে বসে। আলোচনা করে তাদের সমস্যা নিয়ে। তারপর সবাই মিলে কোডিং করা শুরু করে। আমরা তাদের সহায়তা করি। তাদের সঙ্গে বসে সর্বোচ্চ এক ঘণ্টা বা দুই ঘণ্টা সমস্যা সমাধানের সূত্রগুলো শিখিয়ে দেই।
কখনও কখনও তাদের কোডিং আমরাই করে দেই। এতে করে সমস্যা কিভাবে সমাধান করতে হবে, এটাও তারা শিখে যায়। আমার নিজেরও অনেক প্রজেক্ট আছে। দেখা যায়, আমি কারও সমস্যা সমাধান করে দিচ্ছি। কেউ আবার আমার সমস্যার সমাধান করে দিচ্ছে। জ্ঞান এখানে বিনিময় হয়। ছড়িয়ে যায়।
হ্যাকার স্কুলের কোনো গ্রেডিং পদ্ধতি নেই, কোনো শিক্ষক নেই। এমন অদ্ভুত মডেলের স্কুল গড়ে তোলার পেছনে কারণ কি?
আমরা চাই মানুষ শিখে যাক। তার পছন্দের বিষয়ে আনন্দের সঙ্গে শিক্ষা নিক। যেখানে তার আগ্রহ সেখানেই সে অনেক কিছু করে ফেলতে পারবেন। আর গ্রেডিং পদ্ধতি খুব খারাপ। আপনি আনন্দের সঙ্গে একটা কাজ করলেন। চেষ্টা করলেন।
সেটা কখনও গ্রেড দিয়ে পরিমাপ করা ঠিক না। আত্মবিশ্বাসে আঘাত আসে। তাছাড়া গ্রেডিং পদ্ধতি আপনাকে শেখার চেয়ে ফলাফলনির্ভর করে তুলবে। যা শিক্ষার জন্য মোটেও সঠিক পদ্ধতি নয়।
গ্রেডিং পদ্ধতিও নেই, আবার শিক্ষকও নেই?
আমরা সবাই মানুষ। এখানে যারা আসে সবাই কোডিং শিখতেই আসে। এখানে বহু ধরনের প্রজেক্ট কিংবা সমস্যা নিয়ে মানুষ আসে। একে অপরকে সহযোগিতার মাধ্যমেই সমস্যাগুলোর সমাধান তারা বের করে নেয়। কেউ সুপার কম্পিউটার ডিজাইন নিয়ে কাজ করে, আবার কেউ আইফোন অ্যাপ নিয়ে। এতে করে একে অপরের কাজ সম্পর্কে জানতে পারছে। একে অপরের কাছ থেকে শিখতে পারছে। যা শিক্ষক থাকলে একটা নির্দিষ্ট বিষয়ের মধ্যেই আটকে থাকতো।
এখানে চাকরি করে আপনি আনন্দ পাচ্ছেন?
এ আনন্দটা অন্যরকম। এখানে সবাই শিখতে আসে। আমিও এখানে একজন শিক্ষার্থী। আমি সবার কাছ থেকে শিখতে পারি। মানুষ মানুষকে সহযোগিতার মাধ্যমে এখানে অনেক কিছু জেনে যায়। জ্ঞান বিষয়টা একার নয়। এটা সবার। জ্ঞান এখানে ছড়িয়ে পড়তে পারছে। মানুষ এ জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। এটাই তো অনেক বড় পাওয়া।
আমি গত ১০ বছর ধরে প্রোগ্রামিং করছি। কখনও এমন আনন্দ পাইনি। অসধারণ এ স্কুলে আমিও যে চিরদিন থাকবো তা নয়। আমি এখানে আমার প্রজেক্টের সমস্যা নিয়ে আসি। যতদিন সমস্যা থাকবে ততদিন আমি এ স্কুলে আসবো, শিখবো এবং আর অন্যকে শেখাবো।
অনুবাদ: শেরিফ সায়ার
বাংলাদেশ সময় ১৬২১ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১৩
সম্পাদনা: সাব্বিন হাসান, আইসিটি এডিটর