ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

নিষিদ্ধ দ্বীপে ম্যান্ডেলার ১৮ বছর

শরিফুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:৩১, জুন ৩০, ২০১৩
নিষিদ্ধ দ্বীপে ম্যান্ডেলার ১৮ বছর

ঢাকা: দেশের মানুষকে মুক্তি পেতে আন্দোলন আর বিদ্রোহ চালিয়েছিলেন প্রকাশ্যে আবার কখনও আত্মগোপনে থেকে। অবশেষে জয় হয়েছে তারই।

সাদা আর কালোর চামড়ার ভেদাভেদ দূর করে নিজেকে বিশ্বের নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। পেয়েছেন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার।

কিন্তু জীবনের সোনালি সময়ের বেশির ভাগটাই কেটেছে তার বদ্ধ প্রকোষ্ঠে। নিজ দেশে ১৯৫২ সালে প্রথমবারের মতো নিষিদ্ধ হন স্বজাতির ওপর বৈষম্যে আর নিপীড়নের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য।

১৯৯০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি নিঃশর্ত মুক্তির আগে ১৯১৮ সালের ১৮ জুলাই জন্ম নেওয়া নেলসন ম্যান্ডেলার ২৭টি বছর কাটে কারাগারে। আর এ কারাগার জীবনের দীর্ঘ ১৮ বছর কেটেছে নির্জন রোবেন দ্বীপে।

সাউথ আফ্রিকার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন রোবেনের দূরত্ব কেপটাউন শহর থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার। রোবেন ডাচ শব্দ যার অর্থ ‘নিষিদ্ধ’। প্রায় ডিম্বাকৃতির দ্বীপটি দৈর্ঘ্যে উত্তর দক্ষিণে তিন দশমিক তিন কিলোমিটার ও প্রস্থে এক দশমিক নয় কিলোমিটার, আয়তন পাঁচ বর্গকিলোমিটারের কিছুটা বেশি।

প্রাচীনকালে ভাঙনের ফলে সমতল ও সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে কিছুটা উঁচু এ দ্বীপের সৃষ্টি বলে উইকিপিডিয়াতে বলা হয়েছে।
 
উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, ১৮০৬ সালে ব্রিটিশের উপনিবেশে পরিণত হওয়ার আগে ফরাসি, ডাচদের উপনিবেশ ছিল সাউথ আফ্রিকা। ডাচরাই রোবেন দ্বীপকে কারাগার হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করে। ১৭ শতকের শেষে দ্বীপটিতে প্রথম বন্দীকে পাঠায় ডাচ শাসকরা। রোবেনে প্রথম পাঠানো হয় ডাচ শাসকদের ‍অবাধ্য আউৎশুমাতোকে।

তারই ধারাবাহিকতায় ব্রিটিশ শাসকরাও নিজের ‍অবাধ্য বা বিরোধীদের পাঠায় রোবেন দ্বীপে।
mandela-pr
ম্যান্ডেলার কারাকক্ষ
১৯৬৪ সালের জুনে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগ এনে ম্যান্ডেলাকে দোষীসাব্যস্ত করা হয়। পাঠানো হয় ‘নিষিদ্ধ দ্বীপে’। ম্যান্ডেলার সহযোদ্ধা ওয়াল্টার সিসুলু, আহমেদ ‍কাতরাদা, গোভান এমবেকি, রেমন্ড এমহলাবা, এলিয়াস মোতসোলেইদি এবং এন্ড্রু এমলানগেনিকে একই ‍অভিযোগে দোষীসাব্যস্ত করে পাঠানো হয় রোবেন দ্বীপের কারাগারে।

কিন্তু ম্যান্ডেলাকে রাখা হয় একটি ৮ বাই ৭ ফুটের একটি সেলে। যে সেলে কেটেছে তার ১৮ বছর। মাত্র একটি খড়ের মাদুর, মলমূত্র ত্যাগের জন্য একটি বালতিই ছিল তার কক্ষের আসবাবপত্র।

চতুর্থ শ্রেণীর বন্দী হওয়‍া প্রতি বছরে মাত্র একজন পরিদর্শনকারীর সঙ্গে দেখা কর‍ার সুযোগ পেতেন তিনি। কিন্তু পরিদর্শনকারীর সঙ্গে ম্যান্ডেলাকে মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যেই শেষ করতে হতো মনের দুঃখ-বেদনার কথাগুলো। প্রতি ছয় মাস অন্তর পরিবারের কাছ থেকে একটি চিঠি পাওয়া ও দেওয়ার বিধানে তাকে কাটাতে হয়েছে চরম নির্যাতনের দিনগুলো।

কারাগারে হাড় ভাঙা খাটুনি করতে হতো তাকে। প্রায়ই শেতাঙ্গ কারারক্ষীদের ‍মাধ্যমে শারীরিক ও মৌখিকভাবে নির্যাতনের শিকার হতেন তিনি।

১৯৬৮ নেলসন ম্যান্ডেলার মা ও ১৯৬৯ সালে তার বড়পুত্র থেম্বি মারা যান। কিন্তু তাদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দেওয়া হয়নি ম্যান্ডেলাকে।

১৯৮২ সালের এপ্রিলে অবসান হয় তার রোবন দ্বীপে বন্দী থাকার। কারাকক্ষের বাজে পরিবেশের কারণে যক্ষায় আক্রান্ত হন ম্যান্ডেলা।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৩ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১৩
সম্পাদনা: শরিফুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর, eic@banglanews24.com

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।