পৃথিবীর বহু মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত। আধুনিক সেবা তৃতীয় বিশ্বে তেমনভাবে পৌঁছাতে পারে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল ফিজিক্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগ সে জায়গাটিই পূরণ করতে চায়। দেশের মানুষের হাতে সহজে এবং কমমূল্যে যেন সেবা পৌঁছে দেওয়া যায়, সে চেষ্টাই করে যাচ্ছে।
নিত্য নতুন আবিষ্কারে সবাইকেই তাক লাগিয়ে যাচ্ছে এ বিভাগটি। অথচ ৯১ বছর বয়সী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু হওয়া বায়োমেডিকেল ফিজিক্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগটি যাত্রা শুরু করে ২০০৮ সালে। অধ্যাপক সিদ্দিক-ই-রব্বানীর নেতৃত্বে শুরু হওয়া এ বিভাগটি খুব কম সময়ের মধ্যেই নিজেদের উদ্ভাবনীয় ক্ষমতা দেখাতে সক্ষম হয়েছে। একঝাঁক তরুণ শিক্ষার্থী এবং অধ্যাপক রব্বানীর নেতৃত্বে দুরন্ত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে এ বিভাগ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯১ বছর পূর্তি উপলক্ষে সকল আবিষ্কার নিয়ে হাজির হয়েছিলেন নিজেদের ভবণের সামনে। তিনদিনব্যাপী প্রদর্শনীও চলেছে। বায়োমেডিকেল ফিজিক্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের কয়েকটি উদ্ভাবন নিয়েই এ বিশেষ প্রতিবেদন।
ডিজিটাল মাইক্রোস্কোপ:
চোখ লাগিয়ে কষ্ট করে মাইক্রোস্কোপে দেখার দিন শেষ। ডিজিটাল মাইক্রাস্কোপ ব্যবহার করে কম্পিউটারের মনিটরে স্থির বা মুভি আকারে স্লাইডগুলো দেখা যাবে। মাউসের একটি ক্লিকের মাধ্যমে কম্পিউটারের হার্ড ড্রাইভে সেইভ করা যাবে। মুভির সাথে কথাও রেকর্ড করা সম্ভব। একই সঙ্গে অন্যকে দেখানোর জন্য বা শেখাবার জন্য মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে বড় পর্দায় মাইক্রোস্কোপে ধারণ করা ছবিও দেখানো যাবে।
যে কোনো মাইক্রোস্কোপেও ক্যামেরা-অ্যাডাপ্টর লাগিয়ে দিয়ে এ সুবিধা পাওয়া সম্ভব।
ডিজিটাল ইসিজি:
ডায়াগনোস্টিক গুণসম্পন্ন ১২ লিডের ডিজিটাল ইসিজি বক্স কম্পিউটারের যুক্ত করে একটি পূর্ণাঙ্গ ইসিজি যন্ত্র তৈরি করা সম্ভব। গ্রাফিক ইউজার ইন্টারফেস সমৃদ্ধ ইউজার ফ্রেন্ডলি সফটওয়্যারের মাধ্যমে মাউস দিয়েই লিড বাছাই ও সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে।
রোগী নাম পরিচয় ইত্যাদি লিখে ইসিজি ওয়েভফর্ম সহ সব প্রয়োজনীয় তথ্য প্রিন্টারের সাহায্যে কাগজে ছাপা যাবে। কম্পিউটারের হার্ড ডিস্কে সংরক্ষণও করাও যাবে।
আবার এই যন্ত্র দিয়ে টেলিমেডিসিন সেবা দেওয়া যাবে। ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে ইসিজি সহ রোগীর যাবতীয় তথ্য রিয়েল টাইমে পাঠিয়ে দেওয়া যাবে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে। তবে এ সফটওয়্যারটি সেই কম্পিউটারে ইনস্টল করা থাকতে হবে। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দল এ যন্ত্রটি পরীক্ষা করে সন্তোষজনক বলে মতামত দিয়েছেন।
ডিজিটাল স্টেথোস্কোপ:
দেখতে সাধারণ স্টেথথোস্কোপের মত হলেও এটিকে ডিজিটাইজড করা হয়েছে। আউটপুট সংকেত বৈদ্যুতিক, তাই তার তথ্য ঢোকানো যায় যে কোনো কম্পিউটারে বা মোবাইল ফোনে। রেকর্ড করা যায়। পরে কম্পিউটারে বিশ্লেষণ করে আরও অনেক তথ্য উপাত্ত বের করা যাবে।
ক্লিনিকে ব্যবহারযোগ্য। এমনকি টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে গ্রামের রোগীর শরীরের যাবতীয় শব্দ শুনে ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থাও করা যাবে। শব্দ শোনার জন্য ভালো হেডফোন হলেই চলবে।
এমনই সব অসাধারণ আবিষ্কারে ব্যস্ত দিন কেটে যায় বায়োমেডিকেল ফিজিক্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থীদের। এ সম্পর্কে বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সিদ্দিক-ই-রব্বানী বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশের মানুষের হাতের নাগালে যে কোনো সেবা পৌছে দিতেই আমরা চেষ্টা করবো। সহজ পদ্ধতি এবং মূল্যও কম, এমন সেবাই আমাদের দেশের মানুষের দরকার। এ লক্ষ্যেই আমাদের গবেষণা চলছে।
এ বিভাগের আবিষ্কৃত সব উদ্ভাবন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য www.bmpt.du.ac.bd ওয়েবসাইট থেকে জানা যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৩ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০১৩