আফগানিস্তান থেকে ফিরে: যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ, সবার হাতে হাতে অস্ত্র, একটু এদিক থেকে ওদিক হলেই অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করে। লোকজন একটুতেই রেগে যায়।
বিমানবন্দরে বখসিস :
কাবুল বিমানবন্দরে যখন নামলাম তখন সময় সকাল ৮টা। বিমান মাটিতে নামার সময়ই দেখতে পেলাম সারি সারি আমেরিকান হেলিকপ্টার, যুদ্ধ বিমান রানওয়েতে বসে আছে। বিমান থেকে নেমে আমরা ইমিগ্রেশনের দিকে অগ্রসর হলাম। ইমিগ্রেশন পার হয়ে দেখলাম সহকর্মী দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু লাগেজের ট্রলিটা অন্য একজনের হাতে।

সহকর্মীকে জিজ্ঞেস করলাম, ও কে? বলল এখানকার লোক, সমস্যা নেই। আমি লোকটাকে বলল, thank you, we can take it. সে বলল, no problem, its my duty. ভাবলাম, ভালোইতো এখানে বিদেশিদের লাগেজের ট্রলি টানার জন্য আলাদা লোকও আছে। আমাদেরকে বাসে উঠিয়ে দিয়ে লাগেজের ট্রলি ধরা ছেলেটি বলল, ‘বাকসিস’।
আমি তো অবাক! আমার কাছে দুবাই দিরহাম ছিলো। ১০ দিরহামের একটা নোট তাকে দিলাম। সে বলল 1 dollar? 10 dollar.
বাস থেকে লাগেজ নামাতে সাহায্য করলো বাসেরই একজন হেল্পার। লাগেজ নামিয়েই যথারীতি সে কানের কাছে এসে হালকাভাবে বলল- ‘বাকসিস’। আমরা না শুনার ভান করলাম। সে আবার একটু জোরে বলল- ‘বাকসিস’। আমরা একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে একটু হাসলাম।
গাড়ি চলে ডানদিকে:
আমাদেরকে নিতে আসল দু’জন। একজন বাঙালি অন্যজন আফগানি। অবাক হয়ে দেখলাম গাড়ি উল্টো জায়গা দিয়ে চলছে। ভাবলাম আমাদের দেশের চালকদের মতো এখানেও একই অবস্থা। সুযোগ পেলেই ‘wrong side’. কিছুক্ষণ পরেই আমার ভুল ভেঙে গেল। বুঝলাম এখানকার গাড়িগুলো ডান দিক দিয়েই চলে।
আফগানিস্তানে ভিক্ষুক
আফগানিস্তানের রাস্তা বা ফুটপাত দিয়ে হাঁটার সময় আমাদের দেশের মতো ফকিরের উৎপাত সহ্য করতে হয়। এদের বেশির ভাগই মহিলা ও শিশু। তবে এই নারীরা বোরকায় আবৃত হয়ে ভিক্ষা করে। বিদেশি দেখলে সহজে পিছু ছাড়ে না এরা। ‘বাইসাব, বাইসাব’ করতেই থাকে।
সর্বত্র উচ্চ নিরাপত্তা
আফগানিস্তানে সব জায়গায় নিরাপত্তারক্ষীরা যে কোন হামলা প্রতিরোধে অস্ত্রসহ সদা প্রস্তুত থাকে। এখানকার অফিস-আদালত, শপিং সেন্টার সবই কঠোর নিরাপত্তার চাদরে মোড়ানো। গেটে সসস্ত্র সিকিউরিটির লোকজন ইমিগ্রেশনের মতো করে চেক করে ঢুকাবে।

যতবার ঢুকবো ততবারই এভাবে চেক করবে। তারা সবসময়ই অস্ত্র তাক করে প্রস্তুত অবস্থায় থাকে। শপিং সেন্টারগুলোতে ঢুকতে গেলে মনে হয় বুঝি কোন দুর্গে প্রবেশ করছি। বড় বড় শপিং সেন্টারে প্রবেশ পথ দেখে কেউ বুঝবে না যে এটা একটা শপিং সেন্টার। ইয়া মোটা লোহার গেট, কোথাও কোথাও পরপর দুটো গেট। তাছাড়াও সিকিউরিটি চেকিংতো আছেই।
ফ্যাশন ও পোশাক
এখানকার শপিং সেন্টারগুলোতে আধুনিক পোশাক পরিহিত পুতুলগুলো দেখে প্রশ্ন জাগে মেয়েরা এই পোশাকগুলো কখন পড়ে? এমন প্রশ্নের উত্তরে বন্ধু ইসতালিফি জানান, এখানকার মেয়েরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অনেক ফ্যাশনেবল পোশাক পরে। অনুষ্ঠানগুলোতে মেয়ে অতিথিরা আলাদা একপাশে বসে। যেখানে ছেলেদের যাওয়ার অনুমতি নেই। মেয়েরা এধরনের অনুষ্ঠানে অনেক খোলামেলা পোশাক পরে আসে।
আফগানিস্তানের কোন পুরুষের কথা ভাবলেই চোখের সামনে ভেসে উঠবে কাবুলি পোশাক আর আফগানি টুপি পরিহিত চাপ দাড়িসহ কোন পুরুষ। আর মেয়েদের কথা ভাবলে, চোখে ভাসবে, হালকা নীল বা কালো বোরকায় আবৃত কোন মহিলা। যে বোরাকার উপরের অংশের চারদিক কুচি ও চোখের সামনে একটি নেটের জানালা আছে। কিন্তু না, এখানকার ছেলেমেয়েরা আধুনিক ফ্যাশনে অভ্যস্ত।
পোশাক পরিচ্ছদে যথেষ্ট আধুনিক এবং মার্জিত। মেয়েরা নানান রকম ফ্যাশনের পোশাক পড়ছে। নানান ফ্যাশনের বোরকা স্কার্ফ পড়ছে। ছেলেরা হাল ফ্যাশনের গেঞ্জি শার্টপ্যান্ট কোট সবই পড়ছে। খুব কম লোককেই দেখা গেছে আফগানি টুপি পরে চলাফেরা করতে।
মেয়েদের ক্ষেত্রে লক্ষণীয়, বোরকা পরলেও বেশিরভাগ মেয়েরা উঁচু পেন্সিল হিলের জুতা পরে চলাফেরা করে। বোরকা পরলেও খুব কম মেয়েই পুরো মুখমন্ডল ঢেকে শুধু চোখ দুটো বের করে চলাফেরা করে। প্রায় সবাই নানান আধুনিক ফ্যাশনের বোরকার সাথে স্কার্ফ পরে। বাইরে বেরুলে প্রায় বেশির ভাগ মেয়েদেরকেই দেখা যায় লাল লিপস্টিক, আই-ভ্রু, আর কাজল ব্যবহার করতে। আমি একটি মেয়েও দেখিনি যে ভ্রু প্লাক করেনি। যদি এখানে রাশিয়ান আধিপত্য থাকতো, তাহলে এদেশের মেয়েরা চলনে বলনে ফ্যাশনে ভদ্রভাবেই পশ্চিমাকে ছাড়িয়ে যেত।

ঘ্রাণহীন গোলাপ
ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম, হঠাৎ চোখ পড়লো ফুলের দোকানের উপর। চমৎকার লাল লাল গোলাপ শোভা পাচ্ছে দোকানে। গোলাপগুলো যেমন বড় তেমন সুন্দর। খুব আগ্রহ নিয়ে কাছে গিয়ে ঘ্রাণ নেওয়ার চেষ্টা করলাম। কোন ঘ্রাণ নেই। ভাবলাম প্লাস্টিকের ফুল কি না! ভালো করে উল্টে পাল্টে দেখলাম।
কিন্তু না সত্যিকারের ফুলই তো! খুব হতাশ হলাম, এতো সুন্দর গোলাপ, অথচ কোন ঘ্রাণ নেই। এখানকার গোলাপগুলো এমন ঘ্রাণহীন হলেও মানুষগুলো বেশ আন্তরিক। মানুষগুলো যেমনটা কাটখোট্টা কিংবা ক্ষ্যাপাটে শোনা গিয়েছিল, আসলে তা নয়, এরা বেশ আন্তরিক ও অতিথি পরায়ন।
চকলেট ও চা
অফিস কিংবা গেস্ট হাউসে যেখানেই চা পরিবেশন করা হোক, সাথে থাকবে টফি। প্রথমে এটা দেখে ধারণা করেছিলাম, টফি বোধ হয় চায়ের সাথে ‘টা’ হিসেবে পরিবেশন করা হয়। আসলে তা নয়, ভুলটা ভেঙ্গে দিল অফিস সহকারী মোস্তফা। চায়ে চিনি কম হলে, আফগানিরা চিনির বিকল্প হিসেবে টফি ছেড়ে দেয় চায়ের মধ্যে।
আফগানী কাবাব ও রেস্টুরেন্ট
কাবাবের ইতিহাসে আফগানি কাবাব যথেষ্ট নামকরা। আমাদের গেস্ট হাউজটা ছিল কাবুলের শের-ই-নাও এলাকার পার্ক সাহার-ই-নাও রোডের পাশে। এই রাস্তার ফুটপাত ধরে হাঁটলে পাশের রেস্টুরেন্টগুলো থেকে কাবাবের ঘ্রাণ আপনার নাক ছুঁয়ে যাবে। দেখা যাবে রেস্টুরেন্টগুলোর সামনে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে আস্ত দুম্বা, ভেড়া, ছোট গরুর বিভিন্ন অংশ, মুরগী, মাছ ইত্যাদি। চলছে হরেক রকমের কাবাবের আয়োজন। চোখের সামনে কাবাবের এতো আয়োজন, আর এমন ক্ষুধা উত্তেজক ঘ্রাণ নিয়ে আপনি কিছুতেই না খেয়ে যেতে পারবেন না।
এখানে দুম্বার মাংশের কাবাব খুব জনপ্রিয়। এছাড়াও, ভেড়া, ছোট গরু, মুরগী কিংবা মাছের কাবাবও পাওয়া যায়। মাছের মধ্যে সিলভার কাপ ও নলা মাছের কাবাবই সাধারণত হয়।

সব রেস্টুরেন্টেই দুই রকমভাবে বসার ব্যবস্থা আছে। চেয়ার-টেবিলের পাশাপাশি জায়গায় জায়গায় উঁচু স্টেজের মত করা। সেখানে রাজা-বাদশাদের মতো কুশন নিয়ে আয়েশ করে বসে খাওয়া যায়। আপনি কোন নির্দিষ্ট একটি কাবাবের অর্ডার করতে পারেন আবার পাঁচ মিশালী কাবাবের সাথে রাইস, পানীয় অর্ডার করতে পারেন।
পাঁচ মিশালী অর্ডারে গরু, দুম্বা, ভেড়া, মাছ, মুরগী ইত্যাদির বিভিন্ন পদের কাবাব পরিবেশন করা হবে। পরিবেশনের ধরনটাও রাজকীয়। একটা বড় প্লেটে রাইস, তার উপর সব পদের কাবাব, সাথে সালাদ সুন্দরভাবে সাজিয়ে পানীয়সহ সব একসাথে নিয়ে আসবে একজন ওয়েটার।
এই প্লেটেই সবাই মিলে একসাথে খাবে, অনেকটা আমাদের দেশের তবলীগ জামায়াতের খাওয়ার ধরনের মতো। খাবার পরিবেশনের সময় অর্ডার না দিলেও প্লেটে নান দেখে আমার মতো রেগে যাবেন না। আপনি অর্ডার না দিলেও আফগানী নান খাবারের পরিবেশনে থাকবেই। নান এদের খুব প্রিয় খাবার। এখানকার নানগুলো বেশ শক্ত, টেনে ছিঁড়তে কষ্ট হয়।
আমাদের দেশের নানের মতো নরম নয়। গোল, লম্বা, অভাল, ছোট, বড় নানান আকৃতির ও সাইজের নান এখানে পাওয়া যায়। কোনো কোনো নানের সাইজ দেখে আপনি বিস্মিত হতে পারেন। মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে, এই নান কতজন মিলে খায়? শুনে অবাক হবেন, ছোট হোক বড় হোক একটি নান এক জনই খায়। পরিবেশনের কিছু মজার ব্যাপারও আছে, আপনি যদি শিক কাবাব ওর্ডার দেন, কিংবা কড়াই কাবাব, আপনাকে শিকসহ আর কড়াইসহ পরিবেশন করবে।
প্রায় সব রেস্টুরেন্টেই শীশা’র ব্যাবস্থা আছে। স্থানীয় ভাষায় এটাকে বলা হয় ‘কাইলুন’। বিভিন্ন ফ্লেভারে শীশা পাওয়া যায়। এখানকার আল্ট্রা মডার্ন ছেলেদের মধ্যে শীশা বা ‘কাইলুন’ বেশ জনপ্রিয়। প্রকাশ্যেই চলছে এই ব্যবসা।
আফগানীরা খাবারের সাথে টকদই খুব পছন্দ করে। বাসায় অতিথি আপ্যায়নে দুপুরে কিংবা রাতের খাবারের পরিবেশনায় টকদই থাকবেই।
আনারের বিস্বাদ জুস

আফগানিস্তানের আনার (বেদানা) খুব নাম করা। বিশেষ করে কান্দাহারের। এখানকার বিভিন্ন রেস্তোরাতে আনারের টকটকে লাল দানাগুলো সুন্দর করে উঁচু পাহাড়ের মতো সাজানো দেখে আনারের জুস খাওয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না।
আসার একদিন আগে, আমি উদ্যোগী হয়ে বের হলাম আনারের জুস খাবো বলে। জুসের অর্ডার দিলাম। আফগানি বন্ধু ইসতালিফিসহ আমরা তিনজন। কিছুক্ষণ পর বড় কাঁচের মগে করে তিন মগ জুস চলে আসলো টেবিলে। জুসের রঙ হালকা লাল। এক চুমুক টান দিতেই আফগানি বন্ধু ইসতালিফি আমার দিকে তাকাচ্ছিল। আমারতো আনার জুস খাওয়ার সাধ মিটে গেল। কোনরকম থেমে থেমে পুরো মগ শেষ করলাম, সহকর্মী বন্ধু অর্ধেক মগ পান করে রেখে দিলেন। এরপর আমার আফগানি বন্ধু দুষ্টমি করে আরো কয়েকবার আনার জুস খাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিল। আমারতো ‘ছেড়ে দে মা, কেন্দে বাঁচি’ অবস্থা।
কুলফি আইসক্রিম
এখানকার কিছু রেস্টুরেন্টে চমৎকার কুলফি আইসক্রিম পাওয়া যায়। এটাকে এখানকার ভাষায় ‘শিরয়াখ’ বলা হয়। হালকা এলাচি ফ্লেভারের কুলফি একবার খেলে বার বার খেতে ইচ্ছে করবে।
আফগানী ড্রাই ফ্রুট
আফগানিস্তানে হরেক রকম ড্রাই ফ্রুট পাওয়া যায়। সবুজ আঙ্গুর, কালো আঙ্গুর, মোনাক্কা, ডুমুর, কাজু বাদাম, পেস্তা বাদাম, ওয়ালনাট, হ্যাজেলনাট, বেরি, এপ্রিকট ইত্যাদি আরো অনেক। ভ্রমণ শেষে ফেরার সময় নিয়ে আসতে পারেন এসমস্ত ড্রাই ফ্রুট।
মেয়েদের ছবি তোলা নিষেধ
এখানকার মেয়েরা তাদের বন্ধুদেরকেও তাদের ছবি সহজে দেয় না। আর সহজে ছবি তুলেও না। একদিন গেস্ট হাউসে কথা হলো, সবাই সবার গার্লফ্রেন্ডের ছবি দেখাতে হবে। আমরা কেউ বউ, কেউ গার্লফ্রেন্ডের ছবি দেখালাম ফেসবুকে। আফগানী বন্ধু ততক্ষনে মোবাইলে তার গার্লফ্রেন্ডকে ছবি পাঠাতে বলে দিয়েছে। কিন্তু গার্লফ্রেন্ড রাজি হচ্ছিল না। আমরা আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। অবশেষে তার গার্লফ্রেন্ড তাকে বল্লো ‘তুমি যদি ছবি দেখানোর জন্য খুব বেশী চাপে থাকো, তাহলে আমি ছবি পাঠাচ্ছি। তবে কথা দিতে হবে ছবিটা দেখিয়ে মুছে ফেলবে’। আফগানী বন্ধু এমন ওয়াদা করার পর তার গার্লফ্রেন্ড মোবাইল ফোনে ছবি পাঠালো। আমি একদিন আফগানিস্তান কমার্শিয়াল ব্যাংকের ব্রাঞ্চে স্টাফরা কর্মরত অবস্থায় কিছু ছবি তুলতে গিয়েছিলাম। পুরুষ স্টাফরা ছবি তুল্লেও মেয়ে স্টাফরা তাদের পারিবারিক প্রতিবন্ধকতার কথা জানিয়ে সরে গেল।
ছেলে-মেয়েদের মেলামেশা

আফগানিস্তানে থ্রিজি ফোরজি টেকনোলজির মোবাইল পৌঁছে গেলেও ছেলে-মেয়েদের মেলামেশা আর বিয়ের ব্যাপারে এরা এখনো অনেক পিছিয়ে আছে। অবিবাহিত ছেলে-মেয়েরা কোথাও পাশাপাশি হাঁটলে, একসাথে দাঁড়িয়ে কথা বললে সেটা যদি পরিচিত কেউ বিশেষ করে পরিবারের বা প্রতিবেশী কেউ দেখে ফেলে, তাহলে মেয়েটার তো সমস্যা হবেই।
ছেলেটাকেও নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু তবুও থেমে নেই কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে-মেয়েদের প্রেম, দেখা-সাক্ষাত। লুকিয়ে চলছে সবই। অনেক ক্ষেত্রে ছেলে এবং মেয়ে দুজনেই জানে, প্রেম করলেও তারা পারিবারিক ও সামাজিক কারণে বিয়ে করতে পারবে না, তারপরও তারা সেটা মেনে নিয়েই চালিয়ে যাচ্ছে প্রেম।
আফগানিস্তানে সাধারণত নিকটাত্মীয়ের মধ্যে অর্থাৎ চাচাতো, মামাতো, খালাতো ভাই-বোনদের মধ্যেই বিয়ে হয়। কখনো ছেলে-মেয়েরা নিজেরা প্রেম করে বিয়ে করলেও সেটা মেনে নেন না তাদের পরিবার।
আফগানিস্তানে ছেলে মেয়েদের মেলামেশাতে এতো বেশি বাধ্যবাধকতা যে তারা তাদের গার্লফ্রেন্ড বা বয়ফ্রেন্ডের নাম কখনো কোন বন্ধুকেও বলেনা, পাছে অন্য কেউ যদি জেনে যায় সেই ভয়ে। আমাদের আফগানী বন্ধু ইসতালিফিও আমাদেরকে তার গার্লফ্রেন্ডের নাম বলেনি একই ভয়ে।
আফগানি বিয়ে:
আফগানিস্তানের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা অনেকটা বাংলাদেশের মতোই। তবে বিয়ে পড়ানো থেকে কনেকে ঘরে আনা পর্যন্ত সময়টা বেশ দীর্ঘ। কখনো কখনো সময়টা দুই আড়াই বছরও লেগে যায়। এই মাঝের সময়টাতে ছেলেমেয়ে দেখা করতে পারবে, কথা বলতে পারবে, ছেলে মেয়ের বাসায় যেতে পারবে কিন্তু একসাথে থাকতে পারবে না।
আমাদের দেশের মতো যৌতুক প্রথার প্রচলন এখানে রয়েছে। তবে এখানে যৌতুক, ছেলের বাবা মেয়ের বাবাকে দিতে হয়। যথারীতি যৌতুকের দাবি নিয়ে দর কষাকষিও চলে। বন্ধু ইসতালিফি’র মতে, অনেকটা এই কারণেই নিকটাত্মীয়ের মধ্যে বিয়ের প্রচলন। মধ্যবিত্ত পরিবারের একটি ছেলের বিয়ের জন্য যৌতুক থেকে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে প্রায় ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার ডলারের প্রয়োজন হয়। নিকটাত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে হলে যৌতুকের দর কষাকষিতে যেমন সুবিধে হয়, তেমনি বিবাহিত জীবনের বোঝাপড়াটাও ভাল হয় বলে জানালেন ইসতালিফি।
সর্বোৎকৃষ্ট জাফরান
আফগানিস্তানের হেরাত প্রদেশের জাফরান ২০১২ সালে বিশ্বের সর্বোৎকৃষ্ট জাফরান হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছে। জাফরানকে পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল একটি মসলা বলা হয়। আফগানিস্তান ভ্রমনকারীরা ফেরার সময় জাফরান আনতে ভুল করবেন না। তবে জাফরানের আছে নানান রকমফের আর মান। ভাল জাফরান চিনতে হলে আর তা কোথায় পাওয়া যায় তা জানতে হলে সাহায্য নিতে হবে কোন আফগানি বন্ধুর।
নানান দেশে, নানা মানুষ। নানা তাদের রীতি। সে অভিজ্ঞতার ঝুড়ি পূর্ণ করেই আমরা ফিরে আসি আফগান থেকে। সত্যি আজও মনে পড়ে আফগানিস্তানের সে মানুষগুলোর কথা।
লেখক: আইটি কোম্পানিতে চাকরিরত, xayed777@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, জুলাই ০৫, ২০১৩
সম্পাদনা: নূরনবী সিদ্দিক সুইন, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর