ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

তরুণরাই পরিবর্তনের হাতিয়ার: মারিয়া

শেরিফ আল সায়ার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১:৫১, জুলাই ১০, ২০১৩
তরুণরাই পরিবর্তনের হাতিয়ার: মারিয়া

স্বপ্ন নিয়েই মানুষ বেড়ে ওঠে। হাসিখুশি স্বভাবের মারিয়াও স্বপ্ন দেখতেন একদিন ‘রেডিও জকি’ হবেন।

দেখতে দেখতে স্বপ্নের দেখা মিলে গেল। তবে এ জন্য নিজেকে গড়েছেন। স্বপ্ন দেখলেই তা সত্যি হয়ে যায় না। স্বপ্ন ধরতে হলে প্রয়োজন চেষ্টা। ঠিক তেমনিভাবেই নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছেন মারিয়া নূর।

এখন শুধু রেডিওতে আটকে নেই হাসিখুশি এ মানুষটি। টেলিভিশনে ‘সার্কেল দ্য গ্লোব’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সম্প্রতি সময়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন তিনি। একইসঙ্গে টিভি নাটকেও নাম লিখিয়েছেন। মেধাবী মারিয়া পড়াশোনা করেছেন হিসাব বিজ্ঞানে। একসঙ্গে এতো কিছু নিয়ে বেশ ব্যস্ত দিন যাচ্ছে মারিয়া নূরের। দুরন্ত মারিয়া ছুটে চলছেন নিজের স্বপ্নকে সঙ্গে নিয়েই।

সব কাজ নিয়ে সম্প্রতি তিনি কথা বলেছেন বাংলানিউজের সঙ্গে। যেখানে উঠে এসেছে মিডিয়াতের আসার গল্প, এগিয়ে যাওয়ার গল্প এমনকি ক্যারিয়ার নিয়েও কথা বলেছেন। এসব বিষয় নিয়েই মারিয়ার সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হলো।

আরজে হবেন এমন সিদ্ধান্তটা কখন নিয়েছিলেন? তারপর কিভাবে কাজটা শুরু করলেন?

সময়টা ২০০৯ সালের দিকে। তখন এফএম রেডিওগুলোর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। রেডি জকি বিষয়টিও আমাদের মতো বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। আমি নিজেও তখন বেশকয়েকজন রেডিও জকির ভক্ত ছিলাম। ভাবতাম, যদি আমিও তাদের মতো হতে পারি! স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলাম বলেই হয়তো সিদ্ধান্ত নেওয়াটা সহজ হয়ে গিয়েছিল।

তবে কাজটা মোটেও সহজ নয়। অনেকে মনে করেন, মাইক্রোফোনের সামনে বসে একটু কথা বললাম আর গান শোনালাম। আসলে বলতে যতটা সহজ, কাজটা অতটা সহজ না। একটু খেয়াল করলেই এটি বোঝা যায়। শুধু চিন্তা করে দেখা যাক- হাজার হাজার মানুষ আমাকে শুনছে। আমার প্রতিটি কথার মূল্য থাকতে হবে। প্রতিটি কথার মধ্যে দায়িত্বশীলতার ছাপ থাকতে হবে।

ভুল করার কোনো সুযোগই এখানে নেই। যদি ভুল হয়েও যায়, সেখানেও উপস্থিত বুদ্ধি দিয়ে সেটাকে সঙ্গে সঙ্গে ঠিক করে নিতে হবে। তাই কাজটার জন্য সবার আগে দায়িত্বশীল এবং দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার গুণ থাকতে হবে। আমি তো ছোটবেলা থেকেই আবৃত্তি, উপস্থিত বক্তৃতায় অংশ নিতাম। তাই কাজটা কিছুটা হলেও আমার কাছে সহজ ছিল।

বর্তমান সময়ের তরুণদের ভেতর রেডিও জকি হওয়ার একধরনের আগ্রহ দেখা যায়। রেডিও জকিকে কি ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নেওয়া যায়?

রেডিও জকি অবশ্যই ক্যারিয়ার হিসেবে নেওয়া যায়। বিশেষ করে যারা পড়াশোনা করছে এবং পাশাপাশি কিছু করার চিন্তা করছে তাদের জন্য তো খুবই ভালো সুযোগ।

রেডিও মিডিয়ায় কাজ করে নিজেকে গড়ে নেওয়া সম্ভব। আমি তো স্টুডেন্ট জীবন থেকেই শুরু করেছি। নিজেকে গড়েছি রেডিও থেকেই।

রেডিও জকি হওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা তো আমাদের দেশে দেখা যায় না। তাহলে যারা এই জায়গায় কাজ করতে চায় তাদের কি ধরনের নির্দেশনা দেওয়া যায়?

আমাদের দেশে মিডিয়ার কোনো মাধ্যমেরই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থা নেই। তবুও এখন অনেক প্রতিষ্ঠান ধীরে ধীরে ছোট পরিসরে শুরু হচ্ছে। একদিন তো বড় হবেই। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও দেখছি জার্নালিজম বিভাগগুলোতে রেডিও জার্নালিজম এবং রেডিও জকি বিষয় হিসেবে যোগ করছেন।

তবে আমি মনে করি, সবকিছু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দিয়ে হয় না। নিজের ভেতর প্রতিভা থাকতে হয়। নিজের লক্ষ্য যদি অটুট থাকে তবে ক্রিয়েটিভ কাজ করা মুহূর্তের ব্যাপার।

কেউ যদি রেডিও জকি হতে চায়, তবে তার প্রচুর বই পড়তে হবে। প্রতিদিন সংবাদপত্রগুলো পড়তে হবে। বিশ্ব গণমাধ্যমগুলোতে কি হচ্ছে সে বিষয়ে সচেতন হতে হবে। এছাড়া বেশি বেশি মিউজিক শুনতে হবে এবং মুভি দেখতে হবে।
maria1
রেডিও থেকে টেলিভিশন। যাত্রাটা কিভাবে হলো?

রেডিও থেকে টেলিভিশনের যাত্রা চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের লাইফস্টাইলের মাধ্যমে। তবে টিভি মিডিয়ায় সবচেয়ে বড় মোড় হচ্ছে শাহরিয়ার শাকিলের ‘সার্কেল দ্য গ্লোব’ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। শাকিল ভাই যখন এমন অনুষ্ঠানের প্রস্তাব দেন, আমি ভাবছিলাম করতে পারবো কিনা! ভয় পাচ্ছিলাম। উনি আমাকে যথেষ্ঠ অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। এগিয়ে যাওয়ার সাহস দিয়েছেন। এজন্যই যাত্রাটা শুভ হয়েছে।

পরিবার থেকে সাপোর্ট কেমন পাচ্ছেন? কোনো বাধা কি এসেছে? যদি এসে থাকে তবে সে বাধা টপকালেন কিভাবে?

আমাদের দেশের মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো মিডিয়া সেক্টরে কাজ করাটা খুব সহজভাবে নিতে পারে না। আমাকেও সেই ঝামেলায় পড়তে হয়েছে। পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর অনেকেই বলা শুরু করল- হিসাববিজ্ঞানের ছাত্রী হয়ে কেন মিডিয়াতে কাজ করবো। আমার অবশ্যই কর্পোরেট হাউজগুলোতে চলে যাওয়া উচিত।

পরিবার থেকে বলা হয়েছে, মিডিয়াতে কাজ করো কিন্তু অন্য কাজের পাশাপাশি। অথচ মিডিয়াতেও সহজ ও সুন্দর একটি ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব। এটি বিশ্বাস করানো অনেকটাই কঠিন। এজন্য বাধার মুখোমুখি তো বহুবারই হয়েছি। তবে শেষ পর্যন্ত আমার পরিবারকে বিশ্বাস করাতে পেরেছি। অন্তত আমার যে কাজটা করতে ভালো লাগে সেটার প্রতিও তারা সম্মান জানিয়েছেন। এজন্য তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।

একটা কথা মনে রাখতে হবে, বাধা আসবেই। সেই বাধাকে টপকে যাওয়াটাও একধরনের সফলতা। আর কাজের মাধ্যমে সফলতা আসলে পরিবার থেকেও পুরোদমে উৎসাহ পাওয়া যায়।

সম্প্রতি কি কাজ করছেন?

সম্প্রতি নাটকের কাজ করছি। গোলাম মুক্তাদির শানের পরিচালনায় ‘কবিতার নারী অকবিতার নারী’ দিয়ে নাটকে যাত্রা শুরু করলাম।

আসছে ঈদে এ নাটকটি প্রচারিত হবে। খুব শিগগিরই কক্সবাজার যাচ্ছি তৌহিদুর রহমান রুবেলের পরিচালনায় আরেকটি নাটকের শুটিংয়ে। এছাড়াও রেডিও, টিভিতে কাজ তো করেই যাচ্ছি। আপনার ট্রাভেল শো অনুষ্ঠানটি নিয়ে কিছু বলেন।

শাহরিয়ার শাকিলের শো মানেই একটু ভিন্নরকম। ‘সার্কেল দ্য গ্লোব’ করতে গিয়ে ইন্দোনেশিয়ায় ভ্রমণ করে এসেছি। এটি এখন প্রচারিত হচ্ছে চ্যানেল টোয়েন্টিফোরে। প্রতি শুক্রবার রাত ৮টা ১৫ মিনিটে।

এ অনুষ্ঠানটি করতে গিয়ে আমি অনেক কিছু শিখছি। একটি দেশের শিল্প-সংস্কৃতি-ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারছি। অনুষ্ঠান করার উন্মাদনা যতটা থাকে, তার চেয়ে বেশি থাকে নতুন কিছু জানতে পারার আনন্দ। এভাবে পৃথিবীকে শেখার, জানার সুযোগ হবে কোনোদিনই ভাবিনি।

বর্তমান সময়ে অনেকগুলো টিভি চ্যানেল হয়েছে। তার মধ্যে সময়ের চাহিদাতেই নতুন মুখ উঠে আসছে। এতো নতুন মুখের মধ্যে টিকে থাকাটাকে কি চ্যালেঞ্জ মনে হয় না? এমন পরিস্থিতিতে কি নিজের ক্রিয়েটিভিটি পূর্ণভাবে প্রকাশ করা সম্ভব?

অবশ্যই বড় চ্যালেঞ্জের। কারণ নতুনদের ভেতর থেকেই এখন অনেক চমৎকার কাজ বের হয়ে আসছে। অনেকেই উঠে আসছে। কাজের প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, ধৈর্য্যশক্তি থাকলেই নিজেকে পূর্ণভাবে প্রকাশ করা সম্ভব।

সবক্ষেত্রে তরুণদের জয়জয়কার দেখা যাচ্ছে। তরুণরা কি ধীরে ধীরে বদলে দিচ্ছে বাংলাদেশকে?

তরুণদের জয়জয়কার না হওয়ার কারণ নেই। যুগ যুগ ধরেই তরুণদের জয়জয়কার হয়ে আসছে। আজ পর্যন্ত সমাজের যত পরিবর্তন হয়েছে সেখানে সবচেয়ে বেশি অবদান তরুণদেরই ছিল। যে কোনো পরিবর্তনের হাতিয়ার তরুণরাই।

একটি দেশকে জাগিয়ে তুলতে পারে তারুণ্যের কণ্ঠ। সর্বশেষ শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চ থেকেই আমরা দেখেছি। এছাড়াও সাভারে রানা প্লাজার দুর্ঘটনার সময় আমরা দেখেছি কিভাবে তরুণরা বিপদে এগিয়ে গেছেন।
দেশকে বদলে দিতে হলে আমাদের মানসিকতা বদলে ফেলতে হবে। আমার তো মনে হয়, মানুষের মন খুব শিগগিরই আমাদের প্রজন্মই বদলে দিবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০১৩

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।