ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

ভারতে যানজটমুক্ত ২০ দিন সফর

শরিফুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩:৫৮, জুলাই ২৬, ২০১৩
ভারতে যানজটমুক্ত ২০ দিন সফর

ঢাকা: একটানা ২০ দিনের সফর শেষে বাংলাদেশে ফিরে আসা হয় ১৪ এপ্রিল। পহেলা বৈশাখ হওয়ায় বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে রাজধানীর নবীনগর অবধি আসতে কোনো ট্রাফিক জ্যামের কবলে পড়তে হয়নি।

নবীনগরে প্রবেশ করার মাত্রই সেই চিরচেনা ঢাকার যানজটের দর্শন।

কলকাতা থেকে নবীনগর আসতে আমাদের লেগেছে ১২ ঘণ্টা। আর নবীনগর থেকে কলাবাগান আসতে লেগেছে প্রায় চার ঘণ্টা! এক জায়গাতে প্রায় ঘণ্টা খানেক দাঁড়িয়ে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় ব্যাচের ট্যুরবাজ শিক্ষার্থীবাহী গ্রীন লাইনের স্ক্যানিয়া গাড়িটি। বিভাগের প্রবীণ শিক্ষক অধ্যাপক ড. গোলাম রহমানের নেতৃত্ব আমরা ২২ জন ভারতে গিয়েছিলাম শিক্ষা সফরে।

প্রসঙ্গেত, ২৫ মার্চ রাত পৌনে ১১টার দিকে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দেই আমরা। কাউন্টার থেকে গাড়িটি কলাবাগান মোড়ে প্রথমবার যানজটে পড়ে। আর আরিচা ফেরিঘাট যেতে যে কয়বার যানজটে পড়তে হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। ঘাটে পৌঁছানোর আগে পড়তে হয়ে বিশাল এক লম্বা যানজটে। এটি আকারে ছিল কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ।

বাংলাদেশের যানজটের কারণে যেখানে কলকাতায় আমাদের পৌঁছানোর কথা ছিল দুপুরে সেখানে আমরা পৌঁছলাম সন্ধ্যায়। ভারতের উত্তর চব্বিশ পরগনার পেট্রাপোল স্থল বন্দর থেকে ৯৫ কিলোমিটার দূরে পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় যাওয়ার সময় কোনো গাড়ির পেঁছনে আমাদের দফায় দফার থমকে থাকতে হয়নি।

একটানার ২০ দিনের শিক্ষা সফরে কলকাতা, দিল্লি, জয়পুর, আগ্রা, শিমলা ও মানালি ঘুরেছি। পাঁচটি রাজ্যে আমাদের সফর সীমাবদ্ধ থাকলেও এর দ্বিগুণ রাজ্যের ওপর দিয়ে আমাদের যাতায়াত করতে হয়েছে।

খাদ্যাভাস, সংস্কৃতি প্রায় এক হলেও কলকাতার গাড়ি চালকদের ট্রাফিক আইন মানার বিষয়টিও মনে করিয়ে দেবে, আপনি এখন বাংলাদেশের বাইরে। ২৭ মার্চ কলকাতায় হলি উৎসব উপলক্ষে ছুটি। এমনিতেই রাস্তায় গাড়ি-ঘোড়া কম, বলা চলে আমাদের দেশে সত্যিকারের হরতালের দিনের আমেজ। হঠাৎ দু-একটি গাড়ি চোখে পড়ছে।
Indiabg

মির্জা গালিব রোড থেকে পার্ক স্টিট দিয়ে হেটে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল প্যালেসে যাওয়ার সময় দেখলাম রাস্তা ফাঁকা। দু থেকে তিনটি গাড়ি থমকে দাঁড়িয়ে গেলে সিগনালে। দেখি লাল বাতি চলছে। দূরে ছায়া দাঁড়িয়ে আছেন সাদা পোশাকাধারী কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের এক সদস্য।

কলকাতায় দু দফায় আমরা পাঁচ দিন ছিলাম। কোনো দিনই সিগন্যালে দাঁড়ানো ছাড়া যানজটে আটকে আছে গাড়ি-এ দৃশ্য দেখিনি। ২৯ মার্চ সকালে জয়পুরে পৌঁছ‍াই আমরা।

৩০ মার্চ জয়পুরের বিভিন্ন স্থান পরিদর্শনে বের হই। সন্ধ্যা ৬টা অবধি স্ট্যাচু ফোর্ট, বিরলা ফ্যামিলি মন্দির, আলবার্ট হল মিউজিয়াম, সিটি প্যালেস, জন্তর মন্তর, পিঙ্ক সিটি, জহুরি বাজার, হাওয়া মহল, জল মহল, আমের ফোর্টসহ জয়পুরের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান।

মোগল শাসনামলের বিভিন্ন ইতিহাসের সাক্ষী আগ্রায় তাজমহল, আগ্রা ফোর্ট, ফতেহপুর সিক্রি, সিকান্দারা দুদিন ধরে ঘুরে ঘুরে দেখিছি।

আগ্রা সফর শেষে দিল্লি। লাল কেল্লার অদূরে বাল্লিমরনে ছিলাম আমরা। ৩ এপ্রিল পুরোনো দিল্লি ও নয়াদিল্লি ঘুরে ঘুরে দেখি। রাজঘাটে ভারতের অহিংসবাদী নেতা মহাত্মা গান্ধির সমাধি, ইন্ডিয়া গেট, পার্লামেন্ট হাউজ, প্রেসিডেন্ট প্যালেস, ইন্দরা গান্ধি মিউজিয়াম, কুতুব মিনার, লোটাস টেম্পল,নিজাম শাহের মাজারসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকা দেখেছি সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা অবধি। এসব জায়গায় আমাদেরকে নিয়ে গেছে ট্যুরিস্ট বাস।

নয়াদিল্লিকে মনে হয়েছে একটি সাজানো শহর। এতো মানুষ, এতো ব্যস্ততা কিন্তু তার পরেও কোনো যানজটের বালাই নেই। পুরো ভারত বিশেষ করে নয়াদিল্লিরও কর্মজীবী মানুষের দৈনন্দিন যোগাযোগ বাহন হচ্ছে ট্রেন।

দিল্লি মেট্রোরেল তো অবাক করার বিষয়। প্রতি দু থেকে তিন মিনিট অন্তর অন্তর একটি ট্রেন। এক স্টেশন থেকে আরেক স্টেশনে যেতে সময় লাগে দু থেকে তিন মিনিট। চৌরি বাজার থেকে কেন্দ্রীয় সচিবালয় স্টেশনে যেতে লেগেছে মাত্র ১০-১২ মিনিট।

হিমাচল প্রদেশের রাজধানী সিমলা তো অবিশ্বাস্য একটি স্থান। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৭ হাজার ৮৬৬ ফুট উঁচুতে অবস্থিত ব্রিটিশ ভারত সরকারের সাবেক রাজধানী। সিমলার সবচেয়ে উঁচু স্থানটি সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৮ হাজার ৫১ ফুট ওপরে। এতো সেখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ঢাকার চেয়েও উন্নত! পাহাড়ে উঁচু-নিচু, আকা-বাঁকা পথে সমান গতিতে চলাচল করছে সাইকেল, মোটরসাইকেল, মিনিবাস, কার এসব।

সরু রাস্তায় হওয়া যানজট লাগার কথা। কিন্তু তা না। প্রতিটি ড্রাইভার ট্রাফিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রয়োজনে পেছনে ব্যাক করে অন্য গাড়িকে সাইড দেয় শিমলার গাড়ি চালকেরা। কেউ কারও সঙ্গে টক্কর দেয় না।

সিমলা থেকে বরফের শহর মানালিতে যাওয়ার সময় পাহাড় ঘেষে রাস্তাগুলোতে আমাদের দেশের দুটো বাস যেতে পারবে না। শিমলা থেকে ২৭০ কিলোমিটার রাস্তায় যেতে লেগেছে ৮ ঘণ্টা। পাহাড়ী রাস্তা হওয়ায় সময় একটু বেশি লেগেছে। কিন্তু কোনো গাড়ি পেছনে এক সেকেন্ডও দাঁড়িয়ে থাকতে হয়নি।

২০ দিনের ট্যুরে যেমন ২০ মিনিটও যানজটের দেখা মেলেনি, তেমনি দামি ব্র্যান্ডের গাড়িও তেমন একটা চোখে পড়েনি। নাগরিকদের চলাচলের জন্য মেট্রোরেল তো আছেই। আরও আছে সরকারি বাস। এ বাস আমাদের হাতে গোনা কয়েকটা বিআরটিসির মতো নয়।

ভারত যোগাযোগের ক্ষেত্রে যতটুকু অবকাঠামোগত উন্নয়ন করেছে, ঠিক তেমনি চলাচলের রীতি-নীতিগুলো বেশ শক্ত হাতেই সামাল দিয়েছে। গাড়ি চালকদের ট্রাফিক আইন মানা, প্রাইভেট গাড়ির আধিক্য না থাকা, পর্যাপ্ত সংখ্যক প্রশস্ত রাস্তা আর রেল ব্যবস্থার কারণে যানজট কাটিয়ে উঠা সম্ভব হয়েছে।

বাংলাদেশ সময় ২২১৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০১৩
সম্পাদনা: সাব্বিন হাসান

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।