আজকের তরুণেরাই ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের শক্তি। একথা তো এখন জোর গলায় বলাই যায়।
তবে এসব কিছুর মধ্যেও সংগীত নিয়ে নতুন এক উদ্যোগ নিয়েছে দুই বন্ধু। বাংলা গানের জন্য নতুন আর্কাইভ গড়ে তুলছেন সাদ্দাম আজাদ এবং ওয়াকিল আহমেদ। তাদের প্রকল্পের নাম ‘ডুগডুগি’। এটি মূলত বাংলাদেশি সংগীত শিল্পীদের একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার আইডিয়া। এখান থেকে নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে সবাই গান শুনতে পারবে। এ অর্থের একটি অংশও পাবেন শিল্পীরা।
ডুগডুগির উদ্যোক্তা
সাদ্দাম আজাদ এবং ওয়াকিল আহমেদের হাত ধরেই ডুগডুগির (http://dugdugi.com.bd/) যাত্রা। দুজনেই গান ভালোবাসেন। সাদ্দাম আজাদ বর্তমানে ডুগডুগির প্রধান নির্বাহী হিসেবে কাজ করছেন। তিনি যুক্তরাজ্যের লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিক্স থেকে ব্যবস্থাপনায় স্নাতক শেষ করে সেখানে নিউ ব্র্যান্ড আইডিয়া নিয়ে কাজ করে দেশে ফিরে এসেছিলেন কিছু একটা করবেন এই স্বপ্ন নিয়ে।
দেশে এসেই পরিচয় হয় ওয়াকিল আহমেদের সঙ্গে। ওয়াকিল ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকৌশল বিভাগের ছাত্র। গান ভালোবাসেন দুজনেই। এখানেই মিল আছে। এ মিল নিয়েই দুজনের হাতে তৈরি ‘ডুগডুগি’।
‘ডুগডুগি’ আইডিয়া
বাঙালি জাতি গানপ্রিয়। গানের ভেতরই এ জাতি নিজেদের অস্তিত্ব খুঁজে পায়। সে ভালোবাসার জায়গা থেকেই ডুগডুগি নিয়ে ভাবতে শুরু করেন সাদ্দাম এবং ওয়াকিল। বর্তমানে পাইরেসির খপ্পরে পড়ে নষ্ট হচ্ছে এ শিল্প। শিল্পীরাও সম্মানী থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
পাইরেসি বেশি হচ্ছে অনলাইনে। যে কোনো গান অনলাইন থেকে ডাউনলোড করেই পাওয়া যায়। অনেক সময় দেখা যায় দেশের বাইরের একজন সংগীতপ্রেমী তার পছন্দের গানটি শুনতে চান। কিন্তু তিনি কিনেই শুনতে চান। তখন তার হাতে ডাউনলোড করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় থাকে না। এমন সব কিছু মাথায় নিয়েই ডুগডুগির ভাবনা মাথায় আসে।
ডুগডুগির আইডিয়ার কথা বলতে গিয়ে উদ্যোক্তা ওয়াকিল আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, এ আইডিয়া নতুন কিছু নয়। তবে অন্য কারও আইডিয়ার অদলেও তৈরি হয়নি। আমাদের মূল স্বপ্ন হচ্ছে বাংলাদেশের আধুনিক প্রগতিশীল সংগীত শ্রোতাদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা। একই সঙ্গে তরুণ শিল্পীদেরও একটি জায়গা করে দেওয়া। যেখানে তারা ভালো গান শুনতে পারবেন। একই সঙ্গে শিল্পীরা তাদের গানের বিনিময়ে রয়ালিটিও পাবেন।
ডুগডুগির স্বচ্ছলতা
যে কোনো উদ্যোগের জন্য প্রয়োজন ব্যবসা চিন্তা মাথায় নেওয়া। এটিকে দীর্ঘপথ এগিয়ে নিতে হলে ব্যবসার দিকটিও বিবেচনায় রাখতে হবে। তবে অনলাইনের ক্ষেত্রে বিষয়টি একদমই ভিন্ন। বিশেষ করে বাংলাদেশে আমাদের একটি ধারণা হচ্ছে অনলাইন মানেই সব কিছু ফ্রি।
বিনামূল্যেই এখানে সব কিছু পাওয়া যায়। কিন্তু আসল কথা হচ্ছে কোনো কিছুই ফ্রি না। এখানে মাঝখানে কেউ না কেউ ব্যবসা করছে। শুধু সমস্যা হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী লাভ করছে। যাকে নিয়ে বা যাদের কনটেন্ট নিয়ে ব্যবসা হচ্ছে তারা লাভ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এমনই চ্যালেঞ্জের কথা অকপটে বললেন ওয়াকিল। নিজেদের ব্যবসার কথা বলতে গিয়ে তিনি আরও জানান, আমরা শুরুতেই ভেবেছি ফ্রি অভ্যাস থেকে বের করে আনা অনেকটাই কঠিন। এ জন্যই আমরা নতুন আইডিয়া নিয়েও ভাবি।
কারণ আমরা বলতে চাই, ডুগডুগিতে যতখুশী তত গান শোনা যাবে বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে একদম বিনে পয়সায়। কিন্তু এ জন্য তো কাউকে অর্থ নিয়ে সহযোগিতা করতে হবে। তাই না? কারণ আমরা একইসঙ্গে শিল্পীদের তাদের প্রাপ্যও বুঝিয়ে দিতে চাই।
তখনই আমরা ভাবলাম, ডুগডুগির মূল শ্রোতা কারা হবেন? অকপটেই বলে দেওয়া যায় তরুণদের একটা বড় অংশই ডুগডুগির সঙ্গে থাকবে। অর্থাৎ বাংলাদেশের তরুণদের কাছে পাওয়া সম্ভব ডুগডুগির মাধ্যমেই।
আমাদের শক্তির উৎস এখানে। তারুণ্যই ডুগডুগির যাত্রাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো যখন দেখবে ডুগডুগি হচ্ছে তারুণ্যের মিলনমেলা; ঠিক তখনই তারা এখানে বিজ্ঞাপন দিতে আগ্রহী হবেন।
বিজ্ঞাপনী প্রচারনাতেও ডুগডুগি ভিন্ন ভূমিকা রেখেছে। ওয়েবসাইটে কোনো ব্যানারে বিজ্ঞাপন না দিয়ে প্রতিটি গানের মাঝখানে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। এতে করে গান শুনতে শুনতেই শ্রোতারা বিজ্ঞাপনটি শুনতে পাবেন। ফলে ডুগডুগি আর্থিকভাবেও স্বচ্ছল থাকবে। এর মাধ্যমে যে অর্থ আয় হবে তা দিয়ে শিল্পীদের প্রাপ্য সম্মানীও দেওয়া সম্ভব।
তরুণ শিল্পীদের সুযোগ
তরুণ শিল্পীদের জন্য ডুগডুগি হবে অন্যরকম একটি প্ল্যাটফর্ম। তরুণ শিল্পীদের গান খুব সহজে মিউজিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিতে চায় না। ফলে অনেক প্রতিভাবান শিল্পীদের সংগীতপ্রেমীদের কাছেও পৌঁছানো সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে তারা যদি ডুগডুগিতে তাদের গানটি পোস্ট করে। তখন হাজার হাজার শ্রোতারা গানগুলো শুনতে পারবেন। এভাবে তরুণ শিল্পীদের একটা পরিচয়ও তৈরি হবে।
ডুগডুগির ভবিষ্যৎ
ভবিষ্যতের কথা বলতে গিয়ে ওয়াকিল আরও জানান, অচিরেই আমরা অফিস নিতে যাচ্ছি। আমাদের দলে এখন মাত্র ৪ জন কর্মী। দলের লোকবলও বৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া এতে যে কোনো গানের ট্র্যাক অনলাইন থেকে শোনা যেত। ডাউনলোডের কোনো সুযোগ ছিল না। আর কিছুদিনের মধ্যেই নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে গান ডাউনলোডের বিষয়ও আমরা সংযুক্ত করছি।
ডুগডুগি হবে বাংলা গানের সবচেয়ে বড় আর্কাইভ। এ লক্ষ্য নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে সাদ্দাম এবং ওয়াকিল। একদিন তাদের সার্চ অপশনে গিয়ে শিল্পী বা সংগীতের প্রথম লাইন লিখে সার্চ দিলেই গানের লিস্ট চলে আসবে। এখানে শিল্পী এবং শ্রোতাদের মধ্যে অবিচ্ছেদ্য যোগাযোগ তৈরি হবে। এমনটাই প্রত্যাশা এ দুই উদ্ভাবনী তরুণের।
বাংলাদেশ সময় ১৮৩৯ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৩
সম্পাদনা: সাব্বিন হাসান