ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

যন্ত্রমানবের জনক চার্লস ডিভোল

স্বপ্নযাত্রা ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:০২, আগস্ট ৩, ২০১৩
যন্ত্রমানবের জনক চার্লস ডিভোল

বিশ্ব একদিন চলে যাবে যন্ত্রমানবের দখলে। এ ঘটনা তো গল্প-উপন্যাস থেকেই পাওয়া যায়।

আসলে গল্প উপন্যাস এবং নানা রকম চলচ্চিত্র দেখেই যন্ত্রমানবদের প্রতি সবার আগ্রহ জন্মায়। সে আগ্রহ রূপ নেয় কল্পনায়।

আর কল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিতে কাজ শুরু করেন বহু বিজ্ঞানী। সফলও হয়েছেন কেউ কেউ। কিন্তু রোবটকে শিল্পোপযোগী করে প্রথম তৈরি করেন জর্জ চার্লস ডিভোল।  

ডিভোল কাজ শুরু করার আগেও যন্ত্রমানব বা রোবট নিয়ে কাজ হচ্ছিল। কিন্তু তিনি প্রথম ডিজিটাল রোবট তৈরি করেন। এজন্যই তাকে আধুনিক রোবোটিক্সের জনক বলা হয়।

১৯১২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করা ডিভোল ছোটবেলা থেকেই যন্ত্রকৌশলে আগ্রহী ছিলেন। তিনি প্লেন, যান্ত্রিক নৌকা দেখে অবাক হয়ে যেতেন। বিস্ময় থেকেই উদ্ভাবনী শক্তি মানুষের ভেতর জন্ম নেয়। ডিভোল যন্ত্র চালিত যে কোনো প্রযুক্তি দেখে বিস্মিত হতেন। বিস্ময় থেকেই তিনি কাজে মনোযোগ দেন।

যন্ত্রপ্রেমী ডিভোল পড়াশোনার প্রতি তেমন আগ্রহী ছিলেন না। সে সময় বিশ্বব্যাপী আধুনিকতার ছোঁয়া লাগা শুরু হয়েছে। বড় বড় ইমারত তৈরি হওয়া শুরু হচ্ছে। ডিভোল আধুনিক সমাজের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন।

তিনি বেশ কয়েকটি স্কুলে ইলেকট্রিক লাইট প্ল্যান্ট তৈরির কাজ করেন। এটি করতে গিয়ে তড়িৎ কৌশলে ব্যাপক জ্ঞান অর্জন করেন। তিনি মেধাবী ছিলেন না। তবে পড়তে পছন্দ করতেন। বিশেষ করে মেকানিক্যাল ডিভাইস নিয়ে পড়াশোনা করতেন।

এবার ডিভোলের রোবট তৈরির গল্পে আসি। সেটা ১৯৪০ সালের গল্প। তখনও তিনি রোবট নিয়ে কিছু ভাবেননি। কাজ করছিলেন ম্যাগনেটিক রেকর্ডার নিয়ে। এটি নিয়ে গবেষণা প্রায় শেষ। পেটেন্ট তৈরির কাজ নিয়ে ডিভোল বেশ ব্যস্ত। তবে এতোসব ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি জানতেন বিশ্ব এখন নতুন আইডিয়ার অপেক্ষায় আছে।

বিশেষ করে বিশ্বব্যাপী শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। সেখানে নতুন আইডিয়ার অবশ্যই প্রয়োজন।

পেটেন্টের কাজ শেষ করতে বহু বছর লেগে যায়। প্রায় ১৪ বছর পর ১৯৫৪ সালে তিনি ‘ইউনিভার্সেল অটোমেশন বা ইউনিমেশন’ প্রবন্ধটি পেটেন্টের জন্য জমা দেন। সেটাও পেতে সময় লাগে। তার নিজস্ব গবেষণার পেটেন্ট পেয়ে যান ১৯৬১ সালে। এটি পাওয়া যায় ‘ইউনিমেট’ নামে। ইউনিমেটের ম্যাথড দিয়েই রোবটের ব্যাখ্যা পরবর্তীতে দেন ডিভোল। তিনি বলেন, আমি এমন একটি ইউনিভার্সেল অ্যাপলিক্যাশন তৈরি করে দিয়েছি যা দিয়ে বিশ্বব্যাপী সকল যন্ত্রকে সহজে ডিজিটাইজড করা সম্ভব।  

একই সঙ্গে ডিভোল একটি যান্ত্রিক হাতকে ডিজিটালভাবে নড়াচড়া করে দেখান। এবং প্রমাণ করেন রোবটও হতে পারে শিল্পোপযোগী পণ্য। এরপরই তিনি ইউনিমেটকে রোবট নির্ভর প্রতিষ্ঠানে রূপ দিতে মাঠে নেমে পড়েন। নাম বদলে উইনিমেট হয়ে যায় ইউনিমেশন।

যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বন্ধুদের কাছে সহযোগিতা চান। সবাই তার আবেদনে সাড়া দেন। কিন্তু কিছুটা ভয় সবার ভেতরই ছিল। মানুষ নির্ভর এ পৃথিবীতে রোবট কতটা বাস্তবমুখী বিষয় তা নিয়ে মনের মধ্যে সংশয় থাকলেও ডিভোলের গবেষণার উপর সবার আস্থা ছিল। ইউনিমেশন বাণিজ্যিকভাবে শিল্পোপযোগী রোবট বিক্রি শুরু করে ১৯৬৬ সাল থেকে।

২০০৫ সালে বিশ্বের উদ্ভাবক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে উইনিমেটকে অন্যতম বলে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, বিশ্বকে রোবটিক্সের নতুন ধারণার পথে প্রথম দিক নির্দেশনা দেয় ইউনিমেশন। বিশ্বকে বদলে দেয়া এ উদ্ভাবক ৯৯ বছর বয়সে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে ২০১১ সালের ১১ আগস্ট চলে যান।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৩ ঘণ্টা, আগস্ট ৩, ২০১৩
সম্পাদনা: এসএএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।