ঢাকা: কুড়িল ফ্লাইওভার মহানগরীর হাতির ঝিলের মতোই আরো একটি দৃষ্টি নন্দন স্থাপনা। এর নান্দনিক সৌন্দর্য যে কোনো মানুষের মন কাড়তে সক্ষম।
কুড়িল ফ্লাইওভারের মাঝখানে উঠলে দেখে মনে হবে, জ্যামিতির কোনো একটি চতুর্ভুজ। প্রথম দেখাতে অনেকেই হয়ত বলবেন, কয়েকটি ফ্লাইওভারের মোহনা যেন কুড়িলে মিলিত হয়েছে!
কুড়িল ফ্লাইওভার জোয়ার সাহারা মৌজার কুড়িল ইন্টারসেকশন থেকে শুরু হয়ে পূর্বাচল সড়কে গিয়ে শেষ হয়েছে।
ফ্লাইওভারটির মাঝখানে বয়ে চলা কৃত্রিম লেক সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে। পানির ওপরে এর প্রতিবিম্ব যে কারোরই নজর কাড়বে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এখানে নির্মিত হয়েছে জাতির জনকের ছবি সংবলিত ভাস্কর্য, যা দেখে সবাই বিমোহিত হবেন।
সে কারণে দেখা গেল, গভীর রাতেও অনেকেই ছুটে আসছেন ফ্লাইওভারটির সৌন্দর্য দেখতে। রোববার দিনগত গভীর রাতে অনেক দর্শনার্থীকে দেখা গেল কুড়িল ফ্লাইওভারে। পরিবার পরিজন নিয়ে তারা এখানে এসেছেন রাতের সৌন্দর্য দেখতে।
প্রথমে অনেক দর্শনার্থীকে গোলক ধাঁধাঁয় পড়তে দেখা গেল। কারণ, কোন পথ কোন দিকে গিয়ে মিশেছে, তা হঠাৎ করে বোঝা মুশকিল। এর মাঝখানে উঠলে মনে হবে, ভুলপথে যাচ্ছি। কিছুক্ষণ যাওয়ার পরে সেই গোলক ধাঁধাঁ অবশ্য কেটে যাবে।
রাজধানীর মালিবাগ, মধুবাগ বাজার থেকে কুড়িল ফ্লাইওভারে এসেছেন বিল্লাল হোসেন ও তার স্ত্রী শিরিন আক্তার। সঙ্গে নিয়ে এসেছেন দুই ছেলে আহনাফ ও তুর্জ।
বিল্লাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘কুড়িলের রাতের সৌন্দর্য দেখার জন্য ছুটে এসেছি। এটি দেখে মনে হয়েছে, হাতিরঝিলের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়! তবে হাতিরঝিলের মতো কুড়িল ফ্লাইওভারের ভালো নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা দরকার। এখানে নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থাই নেই। ফলে, অনেকেই নিজেকে নিরাপত্তাহীন মনে করবেন। ’
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এ-ব্লক থেকে তারিকুল ইসলাম তার পুরো পরিবার সঙ্গে নিয়ে মধ্যরাতে কুড়িল ফ্লাইওভার দেখতে এসেছেন। তার সঙ্গে ছিলেন সহধর্মিনী মেহেরুন ইসলাম, ছেলে আল মেহেদী ইসলাম ও মেয়ে রুমানা ইসলাম।
তারিকুল বাংলানিউজকে বলেন, ‘এখানে এসে মনের যত গ্লানি ছিল, যেন সব মুছে গেছে! আমার মনে হয়, মধ্যরাতে যে একবার এই ফ্লাইওভার দেখবেন, তিনি বাধ্য হবেন মুগ্ধ হতে। ’
তিনি বলেন, ‘আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি। কারণ, প্রথম রাতেই কুড়িলের সৌন্দর্য উপভোগ করলাম। ’
উল্লেখ্য, ৪ আগস্ট শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুড়িল ফ্লাইওভার উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর এটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। রাজউকের নির্মিতব্য স্যাটেলাইট শহর পূর্বাচলে যাওয়ার নতুন ৩০০ ফুট রাস্তাকে এয়ারপোর্ট রোড এবং প্রগতি সরণিতে সংযুক্ত করে কুড়িল-বিশ্বরোড ফ্লাইওভারটি নির্মাণ করা হয়েছে। ফ্লাইওভারটির সংযোগ সড়ক ঢাকার খিলক্ষেতের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জকেও যুক্ত করেছে।
কুড়িল ফ্লাইওভারের উচ্চতা ৪৭ দশমিক ৫৭ ফুট, প্রস্থ ৩০ দশমিক ১৮ ফুট। প্রকল্পের জন্য প্রায় ৪৭ কোটি টাকায় রেল ও ব্যক্তি মালিকানাধীন ১৩ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়।
ফ্লাইওভারের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ১০ কিলোমিটার। লুপ আছে ৪টি, পাইল ২৯২টি, পাইল ক্যাপ ৬৮টি, পিলার ৬৭টি, পিসি গার্ডার ১০১টি, র্যাম্প ১০টি, ফুটওভার ব্রিজ দুটি।
অভ্যন্তরীণ রাস্তা করা হয়েছে ১ দশমিক ৯৩ কিলোমিটার। ফ্লাইওভারের পূর্বদিকে ২০ হাজার ৮শ বর্গমিটার আয়তনের একটি লেক তৈরি করা হয়েছে।
প্রকল্পের কাজ করেছে প্রজেক্ট বিল্ডার্স লিমিটেড। এটির নির্মাণ কাজ শেষ করতে লেগেছে ৩০৬ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ সময়: ১২১০ ঘণ্টা, জুলাই ০৫, ২০১৩
এমআইএস/সম্পাদনা: আশিস বিশ্বাস, অ্যাসিস্ট্যান্ট আউটপুট এডিটর