ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

ছবি তুলে লাভ নাই, জীবন কাটে ধুলা খেয়ে

রহমত উল্যাহ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬:৩৬, আগস্ট ২৬, ২০১৩
ছবি তুলে লাভ নাই, জীবন কাটে ধুলা খেয়ে

ঢাকা: অনেক ছবি তুলেছেন। ছবি তুলে লাভ কি।

জীবন যাদের অন্ধকারে ভরা তাদের ছবি তুলে কোন ফায়দা হবে না। ধুলাবালিতে যাদের জীবন তাদের ছবি মানুষকে দেখিয়ে কি লাভ হবে। ছবি তুলে কি আমার অভাব দূর করতে পারবেন? কাজ না করলে আমার ঔষধের টাকা, পরিবারের খরচ কি আপনি দিবেন?

সোমবার গভীর রাতে রাজধানীর কমলাপুর-মতিঝিল সংযোগ সড়ক মোড়ে রাস্তা মেরামতের কাজে নিয়োজিত নারী শ্রমিক আনোয়ারা বেগম বাংলানিউজকে এসব কথা বলেন।

একটু বেঁচে থাকার আশায় আনোয়ারার মতই নারী হয়েও কঠিন পরিশ্রমের কাজ করছে সুমি, আলেয়া ও শারমিন। চার জনেরই বাড়ি পটুয়াখালী।

ভারি কাজ হলেও গত প্রায় দশ বছর ধরে রাস্তা মেরামতের কাজ করে আসছে তারা। দিনে সড়কে যান চলাচল করায় মেরামতের কাজ করা হয় না।   সারা ঢাকা শহরে প্রায় বিশ হাজার নারী শ্রমিক রয়েছে যারা রাস্তা মেরামতের কাজ করে।

আনোয়ারা বাংলানিউজকে জানান, গত প্রায় ২০ বছর ধরে ঢাকায়। প্রথমে বাসায় ঝি এর কাজ করতেন। দশ বছর ধরে স্বামী অক্ষম। নিজেও নানা রোগে ভুগছেন। একদিন কাজ না করলে ঔষধ, পরিবারের খরচ চলে না। বাধ্য হয়ে রাত জেগে তাই রাস্তা ঝাড়ু দেওয়া ও পিচ টানার কাজ করতে হয়।
kamlapur
রাত জেগে কাজ করলেও মাত্র ১২০ টাকা করে হাজিরা (বেতন) পান। পুরুষ শ্রমিকদের হাজিরা দু’শ টাকা হলেও নারীদের ১২০ টাকা হওয়ায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, সবই আমার ভাগ্য। দুই ছেলে রোজগার করে স্ত্রী নিয়ে আলাদা খায়। আমার ও আমার অসুস্থ স্বামীর খোঁজ নেয়না। এ ধরনের ভাগ্য শত্রুরও যেন না হয় তিনি দোয়া করেন।

পাশে থাকা সুমি (২২) বাংলানিউজকে বলেন, জন্মের পর বাবাকে দেখিনি। একমাত্র ভাই চায়ের দোকানে কাজ করে। দু’বছর হলো স্বামী রেখে চলে গেছে।

দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, বাসা ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় ছোট ভাইয়ের আয়ে সংসার চলে না। লজ্জা, ভয়কে উপেক্ষা করে তাই রাত জেগে কাজ করি।

তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, পুরুষের চেয়ে বেশি কাজ করি। কিন্তু বেতন কম পাই। বাংলাদেশে নারী শ্রমিকদের কাজের ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করার আহ্বান জানান তিনি।

শ্রমিক আলেয়া বাংলানিউজকে বলেন, সারারাত কাজ করতে খুবই কষ্ট হয়। কিন্তু পেটের দায়ে করতে হয়। না করলে খাবো কি। ধুলা-বালির সাথেই আমাদের বসবাস। কাজ করে খাচ্ছি, চুরি তো করছি না। সকালে এ টাকা দিয়ে মোটা চাউল, তরকারি আর ছোট্ট শিপুর জন্য বিস্কুট কিনে নিয়ে যাবো। তবে, নারীদের খাটো চোখে না দেখার জন্য তিনি সকল মানুষের প্রতি আহ্বান জানান।

এভাবে আমাদের চারপাশে কল-কারখানা, গার্মেন্টস, রাস্তা-মেরামতসহ নানা কাজে নিয়োজিত নারী শ্রমিকরা। কেউ সংসারের হাল ধরতে, কেউবা নিজেকে মানুষ হিসেবে প্রমাণ করতে ঝুঁকির কাজ করেন তারা। সুন্দরভাবে বেঁচে থাকাই তাদের একমাত্র চাওয়া।

বাংলাদেশ সময়: ০৬২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৩
আরইউ/আরআই/আরকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।