ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

মরিয়ম বেগমের নাস্তার দোকান

নুরুল আমিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭:০১, আগস্ট ২৯, ২০১৩
মরিয়ম বেগমের নাস্তার দোকান

ঢাকা: বাস্তবতা কখনও কখনও নাটক-সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। প্রতিটি মানুষের জীবনই যেন নাটক- সিনেমার গল্পের মত।

সুখ আর দুঃখ সঙ্গে নিয়েই কাটতে থাকে মানুষের জীবন।

জীবন চলার পথে এমন অনেক ঘটনা ঘটে যা মেনে নেওয়া কষ্টকর। চাইলেও মানুষ এসব ভুলতে পারে না। আসলে ভোলা যায় না। মরিয়ম বেগমও (৩৮) ভুলতে পারেননি তার অতীত জীবনের কথা।

রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালের সামনে সন্ধ্যা থেকে রাত তিনটা পর্যন্ত নাস্তা বিক্রি করেন মরিয়ম। তার আয় দিয়েই চলে পুরো সংসার।

শেরপুর জেলার নখলার এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া মরিয়ম পরিবারের অভাব অনটনের কারণে পড়াশুনা করতে পারেনি। মাত্র ১৫ বছর বয়সে প্রতিবেশি খলিলুর রহমানের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। বিয়ের পাঁচ বছরের মধ্যে তিন মেয়ে আর এক ছেলের মা হন মরিয়ম।

স্বামী আর সন্তানদের নিয়ে ভালই চলছিল তাদের সংসার। কিন্তু হঠাৎ এক দুর্ঘটনা মরিয়মের সংসারকে এলোমেলো করে দেয়। সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান খলিলুর রহমান। শিশু সন্তানদের নিয়ে নিয়ে গভীর সংকটে পড়েন মরিয়ম।

স্বামী মারা যাওয়ার পর শ্বশুর বাড়ী থেকে কোন প্রকার সহযোগিতা পেলেনই না, উল্টো বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয় তাকে।

এরপর চার সন্তান নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন তিনি। রাজধানীতে এসে ওঠেন রাজারবাগের এক বস্তিতে। কিন্তু ব্যস্ত নগরীতে এসে পড়েন আরেক বিপদে। কাজের জন্য বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে শুরু করেন তিনি। কিন্তু কাজ আর মেলে না।

শেষ পর্যন্ত বস্তির এক খালার পরামর্শে পুলিশ হাসপাতালের সামনে সামান্য পুঁজি নিয়ে নাস্তার দোকান খোলেন তিনি। আর এই দোকানের আয় দিয়েই কোন মতে চালাতে থাকেন সংসার।

প্রতিদিন আটশ’ থেকে এক হাজার টাকার নাস্তা বিক্রি হয়। আর এ থেকে যা আয় হয় তা দিয়েই সংসারের সমস্ত খরচ চালাতে হয় তাকে।

মরিয়ম বাংলানউজকে বলেন, নাস্তা বিক্রি করে যা আয় হয় তাই দিয়ে সংসার চালাই। মেয়েরা বড় হচ্ছে তাদের বিয়ে দিতে হবে। বিয়েতে অনেক টাকা লাগবে। এতো টাকা কোথায় পাবো। চিন্তায় ঘুম হয় না।

কারা নাস্তা খেতে আসে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাধারণত যারা রাতভর রিকশা চালায় তারাই এখানে নাস্তা করতে আসে।

রিকশা চালক জহিরুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ভাঙা টিন ও মাটি দিয়ে তৈরি উনুন আর একটি বেঞ্চই নাস্তার দোকানের সম্বল হলেও খালার নিজের হাতে তৈরি আটার রুটি, সবজি ভাজি, ডিম ভাজির স্বাদের তুলনা নেই। তাই যেদিনই রাতে রিকশা চালাই সেদিনই খালার দোকানে নাস্তা করতে আসি।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৫৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০১৩
এনএ/এইচএ/এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।