চট্টগ্রাম: ব্যবসায়ীক জ্ঞান প্রদানের মাধ্যমে উদ্যোক্তা তৈরি, আত্মউন্নয়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে তরুণদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখাতে ২০০টি দেশ ভ্রমণ করতে চান বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ উদ্যোক্তা ও দুটি সর্বোচ্চ বিক্রিত বইয়ের লেখক সাবিরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, বিশ্বের অন্তত ২০০টি দেশের তরুণদের মাঝে আমার বার্তা পৌছে দিতে চাই।
এর মধ্যে মোট দেশের ৩০ শতাংশ দেশে ভ্রমণ করে তরুণদের মাঝে নিজের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেছেন তিনি। ২০১১ সালের মে মাসে মালদ্বীপ দিয়ে তার এ যাত্রা শুরু হয়। আর বর্তমানে তিনি বিশ্বের ২৬টি দেশে তরুণ উদ্যোক্তা তৈরিতে বক্তব্য রেখেছেন।
বুধবার বিকেলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশের চট্টগ্রামের তরুণদের উদ্দেশ্যে অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্যে এসব কথা বলেন সাবিরুল।
জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল (জেসিআই) চিটাগাং কসমোপলিটন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে প্রায় ৫০০ জন তরুণ অংশ নেন।
এর আগে সকাল সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদ মিলনায়তনে বক্তব্য রাখেন তিনি। নিজের প্রবর্তিত বৈশ্বিক ক্যাম্পেইন ‘ইন্সপায়ার ওয়ান মিলিয়ন’ এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশে এসেছেন তিনি।
২০১১ সালের মে মাসে সাবিরুল ‘ইন্সপায়ার ওয়ান মিলিয়ন’ নামে একটি বৈশ্বিক ক্যাম্পেইন শুরু করেন, যার মূল উদ্দেশ্য হলো বিশ্বব্যাপি কমপক্ষে ১০ লাখ তরুণদের মধ্যে ব্যবসায়ীক জ্ঞান প্রদানের মাধ্যমে উদ্যেক্তা তৈরি, আত্মউন্নয়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে তরুণদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখানো।
ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবিরুল একঘন্টা বক্তব্য রাখেন। এসময় তিনি মাত্র ২৩ বছর বয়সে কিভাবে বিশ্বে একজন সফল মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন সে অভিজ্ঞতার কথা শোনান। এক্ষেত্রে সমাজ পরিবারের সদস্যদের দৃষ্টি ভঙ্গি তাদের ইচ্ছা কি সে ব্যাখ্যাও তুলে ধরেন তিনি।
সাবিরুল বলেন, প্রথাগত কোন নিয়মে আমি চলতে চাইনি। তবে এক্ষেত্রে বাধাও কম আসেনি। কারণ সমাজ এবং পরিবারের দৃষ্টি ভঙ্গি সকালে ঘুম থেকে উঠে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে দৌঁড়াবে। সার্টিফিকেট নিয়ে চাকরি করবে। তারপর অফিসের পেছনে দৌঁড়াবে।
‘আমরা সাধারণত স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, সার্টিফিকেট, চাকরি তারপর একটা বিয়ে করে নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে যাই। ‘
কিন্তু আমি এভাবে চলতে চাইনি। ঘুম থেকে উঠে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় চাকরির পেছনে না দৌড়েও অনেক কিছু করা যায়। সেটা আমি প্রমাণ করতে চেয়েছি।
ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন‘র সহযোগী অধ্যাপক ড.মীর মোহাম্মদ নুরুল আবছার এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল (জেসিআই) চিটাগাং কসমোপলিটনের নিয়াজ মোর্শেদ এলিট, সাধারণ সম্পাদক জসিম আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বক্তব্য শেষে তরুণদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সাবিরুল ইসলাম। পরে তাকে ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সেকান্দর খান তার হাতে একটি সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন।
ইংল্যান্ডের বাসিন্দা সাবিরুল মাত্র ১৪ বছর বয়সে ব্যবসা শুরুর দুই বছর পর শেয়ার ব্যবসা করে আর্থিকভাবে সাবলম্বী হন। ১৭ বছর বয়সের মধ্যে সে বেশ কিছু বই লিখেন। যার মধ্যে দুটি সর্বোচ্চ বিক্রির রেকর্ড করে।
সাবিরুল কেবল বই আর বক্তৃতা দিয়ে নয়, শিক্ষার্থীদের জন্য ‘ট্রিন-ট্রাপেনার’ উদ্ভাবন করে খ্যাতি অর্জন করেন। যা একসঙ্গে বিশ্বের ১৪টি দেশে ১৩টি ভাষায় বের হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের ৬৫০টি স্কুলে তার উদ্ভাবিত ‘ট্রিন-ট্রাপেনার‘ গেমটি স্কুল পড়ুয়া তরুণদের ব্যবসা শেখার পাঠ্যসূচি হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।
এরই মধ্যে এশিয়া, ইউরোপ, সাউথ আফ্রিকা ও আফ্রিকায় ২৬টির দেশের ৭৬২টি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিয়েছেন তিনি।
আমাজনের হিসাবমতে সর্বাধিক বিক্রিত ‘দ্য ওয়ার্ল্ড অ্যাট ইউর ফিট’ ও ‘ইয়ং এন্টারপ্রেনার ওয়ার্ল্ড’-হচ্ছে সাবিরুলের লেখা দুটি বই।
বাংলাদেশ সময়:১৮৪৫ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৩
এমইউ/টিসি