সিলেট: অনিন্দ্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার হিসেবে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে ক্রমেই পরিচিত হয়ে উঠেছে সিলেটের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান। পর্যটন স্পট ছাড়াও প্রাকৃতিক মনোমুগ্ধকর পরিবেশের কারণে প্রকৃতির কোলে নিজেকে মেলে ধরতে অনেকেই ছুটে আসছেন সিলেটে।
দেশের একমাত্র জলাবন রাতারগুল, মেঘালয় পাহাড় বেয়ে নামা পাথুরে নদী বিছানাকান্দি, লালাখাল কিংবা জাফলংয়ের পানথুমাই ঝরনা ধারার অনাবিল সৌন্দর্যের আকর্ষণে সিলেটে ছুটে আসছেন হাজার হাজার ভ্রমণপিপাসু। এ ছাড়া মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত আর নয়নাভিরাম চা বাগান, খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান, অতিথি পাখির কলতানে মুখরিত বাইক্কা বিল ও মালনীছড়ার মতো অর্ধশতাধিক পর্যটন স্পট তো রয়েছেই।

দেশে পর্যটন আকর্ষণে সিলেটের স্থান দ্বিতীয়। দিনদিনই পর্যটন শিল্পে আরও সম্ভাবনাময় হয়ে উঠলেও সিলেটকে পর্যটন নগরী ঘোষণার দাবি দীর্ঘদিন থেকেই উপেক্ষিত হয়ে আসছে।
অবকাঠামোগত উন্নয়ন, যথাযথ সংস্কার, তথ্য সরবরাহ ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার অভাবে সিলেটের পর্যটন খাত আজও অবহেলার শিকার।
জানা গেছে, দেশের প্রথম চা বাগান মালনীছড়াসহ সিলেটে রয়েছে ১৩৫টি চা বাগান। কিন্তু এসব চা বাগানের কোনোটিরই নির্ধারিত কোনো গাইড নেই।
এছাড়াও সিলেটের জকিগঞ্জে তিন নদী সুরমা-কুশিয়ারা-বরাক মোহনার নয়নাভিরাম দৃশ্য পৃথিবীতে বিরল। কিন্তু এমন নয়নাভিরাম স্থানেরও কোনো প্রচার নেই। সরকারি উদ্যোগের অভাবে পর্যটন স্পট হিসেবে এর প্রসার পিছিয়ে আছে।

শুধু হযরত শাহ্ জালাল (র.) ও শাহ পরাণের (র.) মাজার জিয়ারতের উদ্দেশ্যেই প্রতিদিন দেশ-বিদেশের হাজার হাজার পর্যটক সিলেটে ছুটে আসেন।
সিলেটে পর্যটনের অপার সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বারের সহ সভাপতি হাসিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রিফুয়েলিং কাজ শেষ, কেবলই উদ্বোধনের অপেক্ষায়। ফলে সিলেটের সঙ্গে আকাশ পথে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ হবে।
তাছাড়া সিলেটে ব্যক্তি মালিকানাধীন ৩০-৪০টি রিসোর্টের কাজও শেষ পর্যায়ে। সবগুলোই এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। এসব বিষয় সিলেটে দ্রুত পর্যটন বিকাশে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে।

তিনি জানান, এই প্রথমবারের মতো সিলেটে যৌথ মালিকানাধীন টাইম শেয়ার পদ্ধতিতে এক্সলর’স নামে একটি পাঁচ তারকা সমমানের অ্যাপার্টমেন্ট হোটেলের কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। পর্যটন আকর্ষণ বিবেচনায় পাহাড় প্রকৃতির নয়নাভিরাম পরিবেশেই হোটেলটির স্থান বেছে নেওয়া হয়েছে। বিমানবন্দরের অদূরে মেঘালয় পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে হোটেল অ্যাপার্টমেন্ট থেকেই। হিলসাইড অ্যাপার্টমেন্টস লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠান এর উদ্যোক্তা।
আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হলিডে রিসোর্ট নাজিমগড় রিসোর্টের স্বত্বাধিকারী নাজিম কামরান চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, যেসব পর্যটন স্পট সিলেটে রয়েছে এগুলোর যথাযথ তত্ত্বাবধান নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তবে সরকার বিষয়টি সম্পর্কে এখনো অবগত নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
পর্যটন সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরী এমপি বাংলানিউজকে বলেন, সিলেটকে বিশ্বের অন্যতম পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সরকার উদ্যোগ নিচ্ছে। এ লক্ষ্যে বিটিভি’র কারিগরি সহযোগিতায় ও মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সম্প্রতি সিলেটের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় ও ঐতিহ্যমণ্ডিত স্থানগুলোর ভিডিওচিত্র ধারণ করে একটি ডকুমেন্টারি তৈরি করা হয়েছে।

সিলেটে পর্যটক বাড়ছে জানিয়ে বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ডের সদস্য ডা. জাকারিয়া আহমদ বলেন, পর্যটক বাড়লেও বিদেশি পর্যটক আকষর্ণে যেসব সুবিধা থাকা প্রয়োজন সেগুলো পর্যাপ্ত নয়।
তিনি আরো বলেন, সরকার আন্তরিক হলে এবং যুগান্তকারী উদ্যোগ নিলে মাত্র পাঁচ বছরে গার্মেন্টস খাতকেও ছাড়িয়ে যাবে পর্যটন শিল্পের আয়।
সম্ভাবনার নানা দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপের মতো ‘ফরেন ট্যুরিস্ট জোন’ গড়ে তোলার জন্য কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত এলাকা বেছে নিয়ে কাজ করার একটি প্রস্তাব সরকারের কাছে রয়েছে। আর এটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ বিশ্বের একটি পর্যটন সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে খ্যাতি পাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৩
এসএ/এসএটি/আরআই/জেসিকে