সিলেট: জলের স্রোতে ভেসে যাচ্ছে পাথরের টুকরা। পাথর ছুঁয়ে জল গড়িয়ে মিশে যাচ্ছে স্রোতস্বিনীতে।
দূরের চেরাপুঞ্জি আর কাছের মেঘালয় পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝর্ণার জল আর পাথুরে বিছানায় বিছনাকান্দির নিবাস। বছরের পর বছর এখানের পাথর জমে প্রস্তরময় আকারে গড়ে উঠেছে সবুজের কোল আর লাল পাহাড়।
সিলেটের গোয়াইঘাট সীমান্তে পাথর কোয়ারী হিসেবে পরিচিত বিছানাকান্দি। অপ্সরীর সাজানো পাথর বিছানা আর অগভীর স্বচ্ছ জলে যে কেউ নাও ছাড়িয়ে গা ভাসিয়ে প্রকৃতির কোলে চড়তে পারেন।

এখনও আড়ালেই রয়ে গেছে পাহাড়-পাথর-জলে বন্দী অপ্সরী বিছনাকান্দি। ভ্রমণপিপাসুদের কাছে এখনও পরিচিত হয়ে ওঠেনি স্থানটি। আর যারা একবার গেছেন, মুগ্ধ হয়ে বার বার ছুটে আসছেন বিছানাকান্দির কূলে।
সারা বছরই রূপ মেলে থাকে বিছনাকান্দি। বর্ষার ভরাট জলে তার মায়াজাল আরও বেশি বিস্তৃত হয়। তবে শুকনো মৌসুমেও হতাশ হতে হয় না পর্যটকদের। ছড়িয়ে থাকা পাথরে মেলে ধরা রূপে তাকে বিস্মিত হতেই হয়।

বিছনাকান্দি যাবার আগেই উঁচু পাহাড় স্বাগত জানাতে জানাতে ধীরে ধীরে যেনো কাছে চলে আসে। এরপর জল ছিটিয়ে প্রকৃতির রূপের ডালি খুলে যায়। যাবার পথে বালির আস্তরণ ভেদ করে এক ঘণ্টার নৌকাভ্রমণ আনন্দকে দ্বিগুণ করে তোলে।
সম্প্রতি বাংলানিউজের এই প্রতিবেদক ও ভ্রমণপিপাসু জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজের একদল শিক্ষার্থী ও পর্যটনকর্মী আহমদ সালিম সারওয়ার, মুহিবুর রহমান রুবেল, মৃদুল গুপ্ত, এস এম দিপু ও মোহাম্মদ সাদী ঘুরে এসেছেন বিছনাকান্দি।

আহমদ সালিম সারওয়ার জানান, ভারতের পাহাড় ভেদ করে বাংলাদেশের বুকে জল গড়িয়ে আসছে। এই অগভীর জলের নীচে আছে পাথরের প্রলেপ। প্রকৃতি এতো সুন্দর করে পাথর বিছাতে পারে, সেটা এখানে না এলে বোঝা যেতো না। স্বচ্ছ জলে ডুব দিলে সাগরতলের মত সবকিছু দেখা যায়। যা সত্যিই রোমাঞ্চকর।
মুহিবুর রহমান রুবেল বললেন, ‘সামনে অথবা পেছনে সুউচ্চ পাহাড় রেখে নৌকা বেয়ে পথচলার অসাধারণ সৌন্দর্যের দেখা মেলে বিছনাকান্দিতে। স্থানটি পরিচিতি পেলে সিলেটের পর্যটন আকর্ষণে অন্য অনেক স্থানকে ছাপিয়ে যেতে পারে।
জলে নামার ইচ্ছা ছিলো না মোহাম্মদ সামির। কিন্তু স্বচ্ছ জলে পাথরের মিশেলে সে ইচ্ছা ভুলে সেও ভিজেছে। গায়ে নিয়ে এসেছে বিছনাকান্দির জলের গন্ধ।

তার মতে, শুধু পাথরে জলের খেলাই নয়। এখানে প্রকৃতি, পাহাড় আর মেঘজমা পর্বতের মোহনীয় জাল আটকে দেবে সবাইকে।
যেভাবে যাওয়া যায়- সিলেট নগরীর আম্বরখানা থেকে হাদারপাড় বাজার পর্যন্ত সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করে। জনপ্রতি ৮০ টাকা করে পড়বে। আর রিজার্ভ নিলে চারশ’ টাকায় হাদারপাড় বাজার পৌঁছে যাওয়া যাবে।

সেখান থেকে সাধারণ নৌকা ও ইঞ্জিনচালিত নৌকায় চড়ার আরও এক ঘণ্টা পরেই অপ্সরী বিছনাকান্দির দেখা মিলবে। নৌকায় জনপ্রতি ভাড়া বিশ টাকা ভাড়া। আবার রিজার্ভ নিলে পড়বে দুশ’ টাকা।
এছাড়াও জৈন্তা উপজেলার সারিঘাট থেকে অটোরিকশা ও নৌকায় বিছানাকান্দি যাওয়া যায়। তবে আম্বরখানা থেকে সড়কপথে হাদারপাড় হয়ে বিছাকান্দি যাওয়াই সবচেয়ে সহজ।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৩
এসএ/কেএইচকিউ/এসএস/জিসিপি