ঢাকা, সোমবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

ইতিহাস সমৃদ্ধ পাবনার ১৮৬ বছর

শাহীন রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২:১৮, অক্টোবর ১৬, ২০১৩
ইতিহাস সমৃদ্ধ পাবনার ১৮৬ বছর

পাবনা : আজ ১৬ অক্টোবর বুধবার দেশের অন্যতম প্রাচীনতম জেলা পাবনার ‘জন্মদিন’। এবার পাবনা জেলার বয়স বেড়ে দাঁড়ালো ১৮৬ বছর।

১৮২৮ সালের ১৬ অক্টোবর পাবনাকে জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

পাবনার জন্মদিন উপলক্ষে ‘আজকের প্রজন্ম ফোরাম’ নামের একটি সংগঠন বৃহস্পতিবার বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

পাবনা জেলার ইতিহাস থেকে জানা যায়- ১৭৯০ সাল অবধি বর্তমান পাবনার বেশীরভাগ অংশ রাজশাহী জেলার একটি থানা হিসাবে ছিল। জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির জন্য তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলার ম্যাজিষ্ট্রেট এ ডাব্লিউ মিল্সকে ১৮২৮ সালে পাবনায় জয়েন্ট ম্যাজিষ্ট্রেট হিসেবে নিয়োগ করা হয়।  

১৮২৮ সালের ১৬ অক্টোবর পাবনাকে জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এর চার বছর পর ১৮৩২ সালে জয়েন্ট ম্যাজিষ্ট্রেটের পরিবর্তে ডেপুটি কালেক্টর নিয়োগের মাধ্যমে পাবনা পায় পূর্ণাঙ্গ জেলার মর্যাদা।

কোম্পানি শাসনের অবসানের পর ১৮৫৮ সালে বৃটিশ সম্রাজ্ঞী রাণি ভিক্টোরিয়ার শাসনাধীনে চলে যায় পাবনা জেলা। এর আগে ১৮৫৫ সালে ময়মনসিংহ জেলা থেকে সিরাজগঞ্জ থানাকে পৃথক করে পাবনা জেলার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

১৮৭৮ সালের ১৯ জানুয়ারি জেলায় প্রথম রেলপথ স্থাপিত হয়। প্রথম মোটর সার্ভিসের প্রবর্তন করা হয় ১৯২৬ সালে। ১৯৪০ সালের পর পাবনা শহরে রিকশার প্রচলন ঘটে। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনসহ সবক’টি আন্দোলন সংগ্রামে পাবনা জেলার রয়েছে গৌরবময় ইতিহাস।

হোসিয়ারি শিল্প, তাঁত, কাঁচি, বেনারসি-কাতানসহ অন্যান্য শিল্প সমৃদ্ধ এই জেলা একসময়ে ছিল দেশের অন্যতম বাণিজ্য কেন্দ্র। ৩৫১ দশমিক ৫০ বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট পাবনা জেলা ৯টি উপজেলা, একটি থানা ও ৭২টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত।

২০১১ সালের আদম শুমারির চূড়ান্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী পাবনা জেলার মোট জনসংখ্যা ২৫ লাখ ২৩ হাজার ১৭৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১২ লাখ ৬২ হাজার ৯৩৪ জন এবং মহিলা ১২ লাখ ৬০ হাজার ২৪৫।

‘পাবনা’ নামকরণ যেভাবে : রাধারমন সাহা তার ‘পাবনা জেলার ইতিহাস’ গ্রন্থে পদ্মার অববাহিকা ‘পাবনী’ থেকে পাবনা’র নামকরণ হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। ফরাসি শব্দ ‘পানবহ’ এর অভিধানিক অর্থ তুলা বা তুলাজাত দ্রব্য।

তন্তুবায়ী বা তাঁতীর সংখ্যাধিক্য ছিল এই জেলায় প্রাচীনকাল থেকেই। এই সব তন্তুবায়ীরা তুলা বা তুলাজাত দ্রব্য থেকেই কাগজ তৈরী করত। এই জাতিবাচক শব্দ ‘পানবহ’ থেকে পাবনা শব্দের উৎপত্তি ঘটেছে বলে অনেকে মনে করেন।

ইতিহাস সূত্রে পাওয়া যায়- প্রাচীন জনপদ পুন্ড্রবর্ধনের নামকরণ হয়েছিল ভূতপূর্ব বাঙ্গালা রাজ্যের সামন্ত রাজা পুন্ড্রবর্ধনের নামানুসারে। এর উপরাজ্যে এলাকা পান্ডবভূমি হিসেবে খ্যাত। তার কেন্দ্রস্থল ছিল পুন্ড্রনগর বা মহাস্থানগড়। অনেকে মনে করেন, প্রাচীন জনপদ পুন্ড্রবর্ধন বা পুন্ড্রনগর থেকে পাবনা নামের উৎপত্তি ঘটেছে।

আবার কেউ কেউ বলেন, পুন্ড্রবর্ধনের বংশধর রাজা জয়বর্ধনের আমলে পাবনা শহরের পাঁচ মাথা দুর্গামন্দির (বর্তমানে সোনাপট্রি) স্থানে পান্ডবভূমির একটি সাব-কাচারী বাড়ি ছিল। পান্ডব প্রশাসনের বৈঠকখানা কেন্দ্রীক একটি জনপদ গড়ে উঠলে স্থানটির নামকরণ হয় পান্ডবখানা। উচ্চারণের সুবিধার্থে কালক্রমে `পান্ডবখানা` শব্দ থেকে ‘ন্ড’ এবং ‘খা’ বর্ণগুলো লোপ পেয়ে কালের বিবর্তনে ‘পাবনা’য় রূপান্তর হয়।

সন্ধ্যাকরনন্দী রচিত ‘রামচিত্র’ গ্রন্থে ‘পদুবম্বা’ নামে একটি সামন্তরাজ্যের উল্লেখ দেখা যায়। রাজ্যটির রাজা সোম সম্ভবত পাল রাজাদের সামন্তরাজা ছিলেন। ‘পদুবম্বা’ নামে প্রাচীন রাজ্যটির প্রকৃত অবস্থান সম্পর্কে ভিন্নমত থাকলেও হরপ্রসাদ শাস্ত্রী বর্তমান পাবনার এই জনপদটিকেই প্রাচীন ‘পদুবম্বা’ রাজ্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

সুতরাং সামন্তরাজ্য ‘পদুবম্বা’ থেকে পাবনা নামের উৎপত্তি ঘটেছে এ মতও অনেকে পোষণ করে থাকেন। কারো কারো মতে, কিংবদন্তীতুল্য দুর্ধর্ষ ডাকাত ‘পবন’ এর নামানুসারে ‘পাবনা’ নামকরণ হয়েছে।

জেলা গঠনের ১৮০ বছর পর ২০০৮ সালে ‘আজকের প্রজন্ম ফোরাম’ নামের সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রথম পাবনা জেলার জন্মদিন উদযাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরআগে কখনো কোনো সংগঠনের পক্ষ থেকে এ ধরণের আয়োজনের কোনো পরিসংখ্যাণ পাওয়া যায়নি।

এদিকে পাবনা জেলার জন্মদিন উপলক্ষে ‘আজকের প্রজন্ম ফোরাম’ সংগঠনটির পক্ষ থেকে ঈদের পরদিন বৃহস্পতিবার বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

আজকের প্রজন্ম ফোরামের সভাপতি খালেদ হোসেন পরাগ জানান, জেলার জন্মদিন উদযাপন উপলক্ষে এদিন সন্ধ্যায় শহরের গোস্বামী কমপ্লেক্সে ১৮৬টি মোমবাতি প্রজ্জলন, আজকের প্রজন্ম ফোরাম আড্ডা, কেক কাটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

এছাড়া এই অনুষ্ঠানে এদিন রেডিও পাবনা ও পাবনা নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে।

বাংলাদেশ সময় : ১১৪৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৩
এসএস/এডিবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।