ঢাকা: ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের প্রধান বড় দুটি উৎসবের একটি হচ্ছে ঈদ-উল ফিতর। আরেকটি হলো ঈদ-উল আজহা।
একইভাবে বড়দেরও যে ঈদ আনন্দ নাড়া দিয়ে যায়, তা বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে চোখ রাখলেই পরিষ্কার হয়ে ওঠে।
ঈদ আনন্দ শুধু নির্দিষ্ট কোনো শ্রেণী-পেশার মানুষের জন্যই নয়, বরং ভিন্নভাবেও তা হতে পারে। এমনই এক ভিন্ন ধরনের গল্প বললেন রিকশাচালক মোহাম্মদ আবুল হোসেন (২৯)।
শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর কামরাঙ্গীর চর মধ্য মুন্সিহাটি বাদশা মিয়া স্কুল রোডে মোহাম্মদ ফরহাদের রিকশা গ্যারেজে কথা হয়, মোহাম্মদ আবুল হোসেন এবং মোহাম্মদ রবিউল ইসলামের সঙ্গে।
সহযোগী ব্যবসার পুঁজি হাতিয়ে নেওয়ায় সাড়ে তিন বছর আগে দিনাজপুরের গোবিন্দগঞ্জে পরিবার সদস্যদের রেখে ঢাকায় এসে রিকশা চালাতে শুরু করেন মোহাম্মদ আবুল হোসেন। সীমিত আয়ে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতে না পারায় রিকশা গ্যারেজেই রাত কাটান তিনি। এমনকি ঈদের দিনও কাটে রিকশা গ্যারেজেই।
মোহাম্মদ আবুল হোসেন বলেন, ‘উচ্চবিত্ত এবং মধ্যবিত্তদের ঈদ আনন্দ দেখা যায়। কিন্তু নিম্নবিত্তদের ঈদ আনন্দ দেখা যায় না। আর নিম্নবিত্তদের নিয়ে ভাবার সময় কোথায় মানুষের! আমাদের বয়সী মানুষের ঈদ আনন্দ আর কতটুকু! আনন্দ করে বাচ্চারা! দুপুর থেকেই শুরু হয় বাড়ি বাড়ি মাংস তোলা। চলে রাত পর্যন্ত। ’
তিনি বলেন, ‘বাচ্চাদের কাছে মাংস খাওয়ার চেয়ে দল বেঁধে বাড়ি বাড়ি মাংস চেয়ে আনাটাই বড় আনন্দের। তারপর রান্না শেষে সবাই মিলে তা ভাগ করে খায়। ’
তিনি বলেন, ‘আবার অনেকেই আছেন, যাদের পরিবারে অনেক সদস্য থাকায় বছরে এক-দুইবারের বেশি মাংস কিনতেই পারে না। তাদের জন্য এই ঈদ অনেক বড় একটা বিষয়। অন্তত বাচ্চারা মাংস খাচ্ছে, এটা দেখেও ভালো লাগে তাদের। ’
ঈদ কেমন কেটেছে জানতে চাইলে আবুল হোসেন বলেন, ‘ঈদের দিন বাচ্চাদের আনন্দ দেখেই আমাদের আনন্দ। বিকেল বেলা রিকশা নিয়ে একবার বেরিয়ে কামরাঙ্গীর চর থেকে নিউমার্কেট, শান্তিনগর, বাংলামোটর ঘুরে আবার গ্যারেজে ফিরে এসেছি। ২৬০ টাকা ভাড়া পেয়েছি। বাচ্চাদের পাঁচ টাকা করে দেওয়াতেই তারা খুবই খুশি। আমারও ভালো লেগেছে। বাড়িতে আমারও তো বাচ্চা আছে!’
ঈদে বাড়ি যাননি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের ঈদ হবে তখন যখন সবাই আবার দেশের বাড়ি থেকে ফিরে আসবে। ’
রাজনৈতিক সহিংসতার আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে মোহাম্মদ আবুল হোসেন বলেন, ‘২৫ তারিখ থেকে দেশে গণ্ডগোল শুরু হবে। তাই, ২৪ তারিখ রাতেই বাড়ি যাবো। এর মধ্যে বেশকিছু লোকজনও ফিরে আসবে। যা আয় হবে, তা দিয়ে পরিবারের জন্য কেনাকাটা করে নিয়ে যাবো। ’
প্রসঙ্গক্রমে মোহাম্মদ রবিউল ইসলাম বলেন, ‘বাড়ি না গেলেও এখানে খুব বেশি খারাপ লাগে না। কারণ, ছোট ছোট বাচ্চারা মাংস নিয়ে আসার পরে এত অভাবের মধ্যেও তাদের পরিবারের লোকজন আমাদের ছেড়ে খায় না। যার বাড়িতে যতটুকু মাংস রান্না হয়েছে, সবাই দাওয়াত করেছে। কেউ কেউ আবার গ্যারেজেই মাংস দিয়ে গেছে। এখানে কখনো মনে হয় না, স্বজনদের ছেড়ে দূরে আছি! সবার ভালোবাসায় আমদের যে আনন্দ হয়, এ আনন্দ দেখা যায় না!’
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৩
এটি/এবি