আত্মহত্যা করার একটি জনপ্রিয় স্থান জাপানের আওকিগাহারা বন। এ বনকে আত্মহত্যার স্বর্গপুরী বা আত্মহত্যার বন বললেও ভুল হবে না! বনে ঢুকলেই চোখে পড়ে হৃদয়বিদারক সব সাইনবোর্ড আর গায়ে কাঁটা দেওয়া আত্মহত্যার নিদর্শন।

জাপানের মাউন্ট ফুজির উত্তর-পশ্চিম মূলদেশে অবস্থিত আওকিগাহারা বন। এখানে বন্যপ্রাণীদের বসবাস নেই বললেই চলে। সেজন্য অন্য সব বনের তুলনায় এটি একটু বেশিই নির্জন। দুর্গম পাথুরে পথ আর হারিয়ে যাওয়ার ভয়- সব মিলে আওকিগাহারায় খুব বেশি মানুষ যান না।
তবে যারা যান, অধিকাংশই আর কখনো ফিরে আসেন না। পরবর্তীতে বনে অনুসন্ধান চালিয়ে পাওয়া যায় তাদের মৃতদেহ। তবে ভূতের কবলে পড়ে বা কোনো রহস্যময় কারণে মৃত্যুবরণ করেন না এসব মানুষ, তারা আসলে কোনো কারণে জীবনের উপর বিরক্ত হয়ে আত্মহত্যা করতে যান এই বনে। আওকিগাহারা বন জাপানের সবচেয়ে জনপ্রিয় আত্মহত্যার স্থান হিসেবে খ্যাত।
সেইকো মাতসুমোতোর লেখা উপন্যাস ‘কুরোই কাইজু’ (গাছের কালো সাগর) - এর মাধ্যমে সম্ভবত এই এসে আত্মহত্যার প্রচলন শুরু হয়। সেটা ১৯৫০ সাল থেকে ১৯৬০ সালের মধ্যে। এরপর থেকে আত্মহত্যা করা ব্যক্তির সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে।
১৯৭০ সাল থেকে পুলিশ, স্বেচ্ছাসেবক ও সাংবাদিকরা প্রতি বছর আওকিগাহারা বনে একবার করে মৃতদেহের সন্ধান করেন।
২০০২ সালে এ বনে ৭৮টি মৃতদেহ পাওয়া যায়। ২০০৩ সালে সে সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১০০ তে। ২০০৪ সালে ১০৮ জন ব্যক্তি আওকিগাহারা বনে আত্মহত্যা করেন। ২০১০ সালে ২৪৭জন ব্যক্তি এখানে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন এবং ৫৪ জন সফল হন।
এসব কথা জানার পর আওকিগাহারা বনে ঢুকলে গা শিউরে ওঠাটা অস্বাভাবিক নয়! তবে আতংক আর ভয় বাড়িয়ে দিতে বনের ভেতরে রয়েছে আত্মহত্যা করা মানুষগুলোর জুতো, ব্যাগ, কাপড়-চোপড়, ক্যাপ, ঘড়ি ইত্যাদি নিদর্শন।
অসংখ্য সাইনবোর্ড এবং গাছের ডালে লাগানো বা ঝোলানো কাগজ রয়েছে বনের ভেতরে। সেসবের লেখাগুলো এমন- ‘আরেকবার চিন্তা করুন’, ‘পরিবারের কথা ভাবুন’, ‘ব্যর্থতাই জীবনের শেষ নয়’ ইত্যাদি
তবে সেগুলো উপেক্ষা করে প্রতি বছরই জীবন থেকে ছুটি নিতে অসংখ্য মানুষ পাড়ি জমান আওকিগাহারার গহীনে!
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৩
এমএনএনকে/এএ/এসআরএস