সিরিয়ার যুদ্ধে একদিকে ভয়াবহ প্রাণহানি ঘটছে, অন্যদিকে আরববিশ্বের আয়েসি সমাজে তা যৌনচাহিদা উস্কে দিচ্ছে। সিরিয়া থেকে পালিয়ে আসা অসংখ্য নারী শরণার্থী আশেপাশের আরব দেশ থেকে ছুটে আসা যুবক ও শেখদের রিয়াল-দিনারের সামনে নিজেদের কয়েক রাতের জন্য বিক্রি করে দিচ্ছেন।

‘আয যাতারী’ শরণার্থী শিবির নিয়ে নতুন করে আবারও হইচই শুরু হয়েছে আরব বিশ্বে। সিরিয়ার প্রতিবেশী দেশ জর্ডানের সীমান্ত শহর ‘মাফরাক’ থেকে দশ কিলোমিটার পূর্বদিকে অবস্থিত এ ক্যাম্পটি প্রথম উন্মুক্ত করে দেয়া হয় ২০১২ সালের জুলাই মাসের ২৮ তারিখে। তারপর থেকে প্রতিদিনই আশ্রয়গ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। বর্তমানে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে একলাখ ষাট হাজারের বেশি। এখনও প্রতিদিন এক হাজারের বেশি মানুষ এ ক্যাম্পে আশ্রয় নিতে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আসছেন। এরই মধ্যে তা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম শরণার্থী হিসেবে ঘোষিত হয়েছে।

খাদ্য ও পানীয়ের অভাব, প্রচণ্ড গরম তাপমাত্রা এবং ধুলোবালির ঝড়ে অতি সাধারণ তাঁবুতে মানবেতর দিনযাপন করছে এই বিপুলসংখ্যক অসহায় পরিবার। প্রায় সবার পরিবারে শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সের নারীরা গত দেড় বছর ধরে এ অসহনীয় কষ্ট ও ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। সম্প্রতি তাদের কপালে যোগ হয়েছে ‘যৌন নিপীড়ন’।
অভিযোগ রয়েছে, ক্যাম্পের আশেপাশে বসবাসরত জর্ডানী তরুণ এবং ক্যাম্পের ভেতরে বসবাসরত সিরিয়ান যুবকদের হাতে প্রায় প্রতিদিন লাঞ্ছিত হচ্ছেন আশ্রয় নেয়া তরুণীরা। এমনকি অপ্রাপ্ত বয়স্করাও তাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। কোনো কোনো পরিবারের তরুণীরা সন্ধ্যার পর আর তাঁবুর বাইরে বের হতে সাহস করেন না। তাঁবুর অদূরে টয়লেটেও যেতে হলে সঙ্গে মা কিংবা বাবাকে নিয়ে যেতে হয়।

আরববিশ্বের উল্লেখযোগ্য প্রায় সব সংবাদমাধ্যমে এ বিষয়টি নিয়ে কয়েক মাস ধরে আলোচনা হলেও আকারে-ইঙ্গিতে তা সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু তিনদিন আগে তা সবিস্তারে প্রচারিত হয়েছে ‘ইসরাইল’ নিয়ন্ত্রিত একটি টেলিভিশনে। ইসরাইলি সাংবাদিক হেনরিকা জর্ডানের ‘আয যাতারী’ শরণার্থী শিবিরে গিয়ে সেখানকার কয়েকজন নারীর সঙ্গে কথা বলেছেন যাদের বয়স ১৩-১৮ এবং এরা সবাই এ ‘মুতআ’ নামক জঘন্য লালসার শিকার হয়েছেন। হেনরিকা তার এ ফুটেজে উম্মে মাযেন এবং উম্মে মুহাম্মাদ নামের কয়েকজন দালাল নারীর সঙ্গেও কথা বলেছেন যারা ক্যাম্পের ভেতর থেকে এনে তরুণীদের আরব শেখদের হাতে তুলে দেয়ার কাজে ব্যস্ত।

ওই টিভি রিপোর্টে ১৩ বছর বয়সী কিশোরীকে দেখানো হয়েছে, যার বিয়ে হয়েছিল ৬০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধের সঙ্গে। ১৫ বছর বয়সী আরেক কিশোরীর বিয়ে হয়েছে ৭০ বছরের বুড়োর সঙ্গে।
এসব কিশোরী জানায়, আর্থিক অভাবেই তারা এসব বিয়েতে রাজি হয় এবং বিনিময়ে কিছু আয়-রোজগার হয়।
আয যাতারী ক্যাম্পটিকে জাহান্নাম আখ্যা দিয়ে সাংবাদিক হেনরিকা বলেন, দু’ হাজার কিংবা তিন হাজার দিনারের বিনিময়ে প্রায় প্রতিদিন এখানে এসব আরব শেখ বিয়ে করছেন এবং সপ্তাহ-দশদিন পর তাদের তালাক দিয়ে ফেলে যাচ্ছেন। সৌদিআরব এবং আশেপাশের অঞ্চল থেকে যুবকরাও আসছেন এবং তাদের সবার চাহিদা সর্বোচ্চ সতের বছর বয়সী অবিবাহিত কুমারী কন্যা। প্রস্তাব পাওয়ার পর ভয়ার্ত চোখে কোনো মেয়ে যখন জানতে চায়, ‘আমাকে কি ওই লোক তার সঙ্গে সৌদিআরব নিয়ে যাবেন?’ দালালের উত্তর তাদের নিরাশ করে জানায়,‘না। ’
জাতিসংঘের পক্ষ থেকে যেসব খাদ্যসামগ্রী পাঠানো হচ্ছে, ক্যাম্পের ভেতর সেগুলোও দেদারসে বিক্রি হচ্ছে। এমনকি ক্যাম্পের আশেপাশে বসবাসরত জর্ডানের লোকজনও এসে সেসব কিনে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের ভাষায়, বাজারের চাল-ডালের চেয়ে জাতিসংঘের পাঠানো এসবের মান অনেক ভালো।

উল্লেখ্য, ‘মুতআ’ নামের এমন সংক্ষিপ্ত মেয়াদী বিয়ে ইসলামের সূচনাযুগে বৈধ থাকলেও রাসূল (সা.) পরবর্তীতে তা নিষিদ্ধ করে দেন। একমাত্র শিয়া সম্প্রদায় ছাড়া অন্য কোথাও ‘মুতআ’ বিয়ে বৈধ নয়। বরং তা ব্যভিচারের সমতুল্য অপরাধ।
তামীম রায়হান: শিক্ষার্থী, কাতার বিশ্ববিদ্যালয়, amimraihan@yahoo.com
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৩
জেডএম/আরআইএস