ঢাকা, সোমবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

যেখানে মানুষ মুগ্ধ হয়ে আকাশে ওড়ে!

কবির উদ্দিন, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০:৫৬, নভেম্বর ৮, ২০১৩
যেখানে মানুষ মুগ্ধ হয়ে আকাশে ওড়ে!

মানুষ প্যারাসুট, হেলিকপ্টার, বিমান বা স্পেস সাঁটলে ওড়ে- এমন কিছু বিষয় নিয়ে আমার বিদেশি সহকর্মীদের সঙ্গে গল্প হচ্ছিল। এমন ওড়ার গল্প শুনতে শুনতে আমি বললাম, আমাদের দেশে অনেক মনোমুগ্ধকর জায়গা আছে, যেখানে মানুষ মুগ্ধ হয়ে আকাশে ওড়ে!

বিদেশি বলে কথা! মানুষ ওড়ার কথা হলেও তারা আমার কথা উড়িয়ে দিলেন না! তারা ব্যাপারটি সম্ভব করে দেখাতে বললেন।

চুক্তি হলো এটা যদি প্রমাণ করে দেখাতে না পারি, বাংলাদেশ নিয়ে কোনো কথা আর বলা যাবে না। কি আর করার। আমিও দেশের ছেলে হিসেবে বিষয়টা গুরুত্বের সঙ্গে নিলাম। মান বাঁচাতে দেশের কিংবদন্তি স্থান বান্দরবন ভ্রমণের সিদ্ধান্ত নিলাম।

যে কথা সেই কাজ। বিদেশি বন্ধুদের নিয়ে আমরা চট্টগ্রাম পর্যন্ত যেতে আকাশ পথ বেছে নিলাম। রিজেন্ট এয়ারওয়েজের ৭৩৭ বিমানটি সঠিক সময়ে আকাশে উড়ে চট্টগ্রামে অবতরণ করল। আমরা চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে বের হয়েই মাইক্রোবাসে উঠলাম। মাইক্রোবাস চলা শুরু করতেই বিনোদন প্রিয় চালক ক্যাসেট প্লেয়ারে গান ছেড়ে দিল। আমরা যখন সমতল পার হয়ে উঁচু পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথে পৌঁছালাম তখন ক্যাসেট প্লেয়ারে একটি গান বেজে উঠলো– ‘লুকোচুরি লুকোচুরি  গল্প/তারপর হাতছানি অল্প/চায় চায় উড়তে উড়তে/মন চায় উড়তে উড়তে...

গানটা শুনতে শুনতে আমরা পৌঁছে গেলাম বান্দরবন পর্যটন মোটেলে। বান্দরবন পর্যটন মোটেলের সার্বিক থাকার ব্যবস্থা দেখে আমার সঙ্গে থাকা ছয় জন বিদেশে দারুণ খুশি। আমরা দুপুরের খাবার খেয়ে বের হলাম বান্দরবন স্বর্ণ মন্দির দেখতে। পূর্ব এশিয়ার ধরনে নির্মিত স্বর্ণ মন্দির সত্যি দেখার মতো।

পরদিন আমরা বের হলাম বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর পর্যটন কেন্দ্র মধ্যে নীলগিরি রিসোর্টে। সমুদ্রতল থেকে ২৪০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত পাহাড়ি ঐতিহ্যে নির্মিত নীলগিরি রিসোর্ট যেন এক স্বপ্নরাজ্য। যেখানে আকাশ পাহাড়ের সঙ্গে মিতালি করছে আর আমরা যেন মেঘের মধ্যে হাঁটছি! সে এক অন্যরকম অনুভূতি। আকাশে ওড়ার, মেঘের শীতল ছোঁয়ার।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত মানসম্মত নীলগিরি রিসোর্টের পরিবেশবান্ধব পানি সংগ্রহ বিদ্যুৎ ব্যবস্থা উল্লেখ করার মতো। নীলগিরি থেকে আমরা রওয়ানা দিলাম বগা লেকের উদ্দেশে। পাহাড়ের কোলের নীল জলের আধার। অপূর্ব সৌন্দর্যের লীলাভূমি ১৫০০ ফুট উপরের বাগালেক। সেখানে পৌঁছে নিজেকে ধন্য মনে হলো।

প্রকৃতি যেন পাহাড়ের চূড়ায় নীল রঙের জলরাশির আধার তৈরি করেছে এখানে। আকাশ আর বগা লেকের নীল একাকার হয়ে মিশে গেছে দূর সীমানায়। প্রকৃতির মিলন মেলা আমাদের চুম্বকের মতো আঁকড়িয়ে রাখতে আহ্বান করছিল। আমরা আগ্রহের নিয়ে দু’একজন গ্রামবাসীর সঙ্গে বগা লেকের পর্যটন বিকাশের ব্যাপারে কথা বললাম। তারা একটি আশার কথা জানালেন।

সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় নেপালের ইছিমদের সহায়তায় বগা লেক ভিত্তিক তিন বছর মেয়াদী একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। যা বগা লেকের পর্যটন ও এলাকাবাসীর অর্থনীতিক উন্নয়নের জন্য সহায়তা করবে।

এই আশার কথা শুনে আমরা বিকেলে রুমা বাজার ফিরে এসে বম নৃ-গোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী ব্যাসের নৃত্য দেখলাম। পরদিন বের হলাম রিজুক ঝরনা দেখতে। অপরূপ সৌন্দর্যের ঝরনা দেখে সবাই মুগ্ধ হলো। অনেক ছবি তুললাম। ছবিগুলো দেখে মনে হচ্ছিলো মানুষ আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে।

বান্দরবনের মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ আমার বিদেশি বন্ধুরা। আমি আমার কথা রাখতে পেরেছি। তারা স্বীকার করলেন এই সবুজ মেঘপাহাড়ে বেড়ানো সত্যি আকোশে উড়ে বেড়ানোর মতোই উপভোগ্য।

ছবি তুলেছেন বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম-এর ফটো স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, নূর

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০১৩
এএ/জিসিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।