‘চিমনির মুখে শোনো সাইরেন-শঙ্খ/গান গায় হাতুড়ি ও কাস্তে/তিল তিল মরণেও জীবন অসংখ্য/জীবনকে চায় ভালোবাসতে। ’
সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের এই চরণগুলো আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় কামারের হাতিয়ার মার্কসবাদী শ্রেণী সংগ্রামের প্রতীক।

অস্ত্র আমাদের আদিম উপকরণ। নিজের আত্মরক্ষা, নিজের প্রয়োজনেই এর আবিষ্কার। কিন্তু হত্যার মতো জঘণ্য অপরাধেও এটি ব্যবহার হয়। একটি অস্ত্রকে অস্ত্রে রূপ দেওয়ার কাজটি সহজ নয়। এর পিছনে লুকিয়ে অনেক অনেক ঘাম ভেজা রক্তচক্ষু পরিশ্রম। প্রথমে হাপর টানা বা কয়লায় বাতাস দিয়ে তৈরি করা হয় আগুন।

দগদগে আগুনে ঢেকে দেওয়া হয় লোহার খণ্ড। তারপর আবার চলতে থাকে বাতাস দেওয়ার কাজ। কারণ আগুন ছাড়া নরম হয় না লোহার মতো পৃথিবীর অন্যতম কঠিন ধাতু।

পুড়িয়ে নরম বানানো শেষ। যতই কঠিন আর শক্ত হোক আগুনের কাছে শেষ পর্যন্ত জব্দ লোহা। কয়লার আগুনে দীর্ঘ সময় ধরে বাতাস দিয়ে আগুন জিইয়ে রেখে পোড়ানো লোহাও যেন একসময় রূপ নেয় জ্বলন্ত কয়লায়।

জ্বলন্ত আগুনরূপী লোহা অনেকটা নরম হয়ে যায়। তখন একে ইচ্ছেমতো রূপ দেওয়া যায় পিটিয়ে, বাঁকিয়ে। এর জন্য প্রয়োজন হয় অনেক শক্তির। বিশাল লোহার মুগুর দিয়ে আঘাত করতে হয় ক্রমাগত। এসময় চলে যেন ঠুং-ঠাং, ঝুন, ঝান অদ্ভুত ঝড় তোলা সঙ্গীতের মূর্ছনা।

পোড়ানো, পেটানো শেষ, শেষ নিদিষ্ট রূপ দেওয়াও। এখন ঠাণ্ডা করার পালা। গরম লোহায় ঢালা হলো পানি। এরপর অস্ত্রের আসল কাজ-অর্থাৎ শান দিতে হবে।

শান বা ধার দেওয়ার কাজটি এখন অনেক সহজ। যন্ত্রযুগে মোটর ঘুরিয়ে কাজটি সহজে সেরে নেওয়া যায়। তবু কারও কারও হাতে শান না দিতে পারলে যেন শিল্পে শেষ আঁচড় পড়ে না।

এই ক্ষুরধার রুপালি রঙের পিছনে লুকিয়ে অনেক কষ্ট, শ্রম, ঘামে ভেজা রক্তচক্ষু। এটাও এক ধরনের শিল্পকর্ম। খণ্ড লোহার টুকরোটি শিল্পের ছোঁয়ায় রূপ নেয় দা, ছুরি, চাপাতি, কুড়াল, কোদাল, শাবল প্রভৃতিতে। এখন শ্রম বিকানোর পালা। উজ্জ্বল দা, বটির ফালির পাশে শ্রমিকের এই বিষণ্ণ মুখ খুঁজে ফেরে অনেক প্রশ্ন...
ছবিগুলো রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকে তোলা।
বাংলাদেশ সময়; ০৩০৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৩
এএ/ আরআইএস