আনন্দ পালের বয়স ৬৭। এই বয়সেও মনের আনন্দে ঘুরিয়ে চলেছেন চাক।

প্রথমে একতাল মাটি চাকের উপর রেখে সজোরে চাকে ঘুর দিলেন তিনি। চাক ঘুরছে, ঘুরছে আনন্দ পালের শৈল্পিক হাতও। আলতো হাতের স্পর্শে সেকেন্ডে সেকেন্ডে বদলে যাচ্ছে তাল মাটির রূপ।
চোখের নিমিষে মাটির তাল রূপান্তরিত হলো মুড়ি রাখার পাত্রে। তার স্ত্রীর কাজ তৈজসপত্র তৈরি উপযোগী মাটির তাল তৈরি করা। কাজ করে এই বয়সেও খুশি তিনি, বেশ স্বচ্ছলও। তবে আশঙ্কা একটাই। মাটি পাবো তো ভবিষ্যতে! তার একটাই কথা, ভালো আছি। শুধু মাটি চাই।
পাল পাড়ার একজন নারীকর্মী সুনন্দা। ভোর চারটা থেকে প্রতিদিন বিকেল পর্যন্ত কাজ করেন তিনি। চাক ঘোরাতে পারেন না। তাই ভরসা হাত দুটি। এতে সময় একটু বেশি লাগে। তবে কাজের ক্ষেত্রে কেউ কম যান না। তিন-চার ভাগে কাজ করে সবশেষে তৈরি হয়ে যায় পূর্ণাঙ্গ মাটির নানা পাত্র।
হাড়িসহ নানা উপকরণ তৈরি শেষ। শেষ শুকানো, হালকা রং দেওয়া। এখন চলছে পোড়ানোর চূড়ান্ত প্রস্তুতি। চুলার পাশে শুকনো হাড়ি, কলস, সানকিসহ উপকরণগুলো সাজানোর মধ্যেও রয়েছে শৈল্পিকতার ছোঁয়া।
চুলায় শুকনা হাড়ি-পাতিলগুলো সাজানো শেষ। এখন পোড়ানোর পালা। এর জন্যও কম কষ্ট করতে হয় না। শেষ রাতে উঠে চুলায় জ্বাল দেওয়া শুরু করতে হয়। ক্রমাগত এটা চলে সারা দিন।
পোড়ানোর কাজও শেষ। এখন মুখে হাসি সবার। বিক্রির পালা এখন। ১৫ থেকে ১ মাসের পরিশ্রমের ফসল ঘরে উঠবে এবার। সামান্য লাভ নিয়েই সুখী তারা। দূর থেকে নৌকা এসেছে মালামাল নিতে। পোড়ানো হাড়ি-কলসগুলো নৌকায় সাজানোর মধ্যেও রয়েছে শিল্পের ছোঁয়া।
ছবিগুলো গাজীপুর কালিয়াকৈরের পালপাড়া থেকে তোলা।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৩
এএ/আরকে