বনে জঙ্গলে নেকড়ে, ভাল্লুক, বাঘের মতো হিংস্র প্রাণীর সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছে এক মানবশিশু। কখনো তাদের পিঠে চেপে, কখনোবা তাদের গলা জড়িয়ে চলছে সে।

ভাবতে একটু অবাকই লাগে। তবু এমন অবাক করা কাণ্ড আমরা কমবেশি ছোটবেলায় সবাই দেখেছি একটি কার্টুনে। বড়দেরও সেটা কম পছন্দের ছিল না। কার্টুনের নাম মোগলি। বিখ্যাত লেখক রুডইয়ার্ড কিপলিংয়ের দ্যা জাঙ্গল বুকের কাহিনী। লম্বা চুল, লেংটি পরা, লিকলিকে শারীরিক গঠনের ৮-১০ বছর বয়সী ছেলে মোগলি। ছোটবেলায় এক বিমান দুর্ঘটনায় সবাইকে হারিয়ে জঙ্গলে বেঁচে ছিল একা। এক নেকড়ে মা তার সন্তানদের সঙ্গে দুধ খাইয়ে বড় করে মোগলিকে। তারপর ঘটতে থাকে একের পর এক ঘটনা।

কিন্তু বাস্তবে কি এটা সম্ভব! আসলেই মোগলির মতো কারো অস্তিত্ব পৃথিবীতে আছে? সব প্রশ্নের উত্তর মিলে গেছে সাম্প্রতিক একটি ঘটনায়। সন্ধান পাওয়া গেছে মোগলির মতো একজনের। তিনি অবশ্য কন্যা। যদিও ঘটনাটি আগের, তবে জানা গেছে অনেক পরে।
ভাবুন একবার! পাঁচ টন ওজনের একটি হাতিকে একটি কন্যা শিশু ডাকছে ভাই বলে। চেপেছে তার পিঠে। চিতা বাঘের সঙ্গে আবার শীতল বন্ধুত্ব।

টিপ্পি নামের এই বিস্ময় শিশুটি মোগলির মতো সংকেতসূচক শব্দও মুখ দিয়ে করতে পারে। তাকে বলা যায় মোগলির নতুন এডিশন।

টিপ্পির জন্ম আফ্রিকার দেশ নামিবিয়ায়। বেড়েও উঠেছে সেখানে। বাবা-মা ফ্রেন্স ওয়াল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার। টিপ্পি তার শৈশব কাটিয়েছে পশুর শাবকদের সঙ্গে খেলা করে। সিংহ, বেজি, সাপ, চিতা, জেব্রা, জিরাফ, কুমির তার ভালো বন্ধু।

একদিন টিপ্পিকে প্রশ্ন করা হলে সে উত্তর দেয়,এখানে আমার কোনো বন্ধু নেই। কারণ আমি এখানে কোনো শিশুকে দেখিনি। সুতরাং এই প্রাণীরাই আমার বন্ধু।

বাবা-মা তাকে মাঝে-মধ্যে জংলি পোশাক পরিয়ে দিতেন। মিশতে দিতেন নামিবিয়ার জংলি মানুষের সঙ্গেও। তবে টিপ্পির সবচেয়ে ভালো বন্ধু ছিল চিতা। তাকে সে গোসল করিয়ে দিত, খাইয়ে দিত, ঘুমাতো একসঙ্গে। উটপাখির সঙ্গে মিতালি কম ছিল না তার। আর হাতির সঙ্গে তো ঘুরে বেড়াতো জঙ্গলজুড়ে।

টিপ্পির বয়স এখন ২৩ বছর। ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার তার বাবা-মা সিলভিয়া রবার্ট ও অ্যালেইন একটি বইয়ের মধ্যে এই ছবিগুলো প্রকাশ করেছেন। বইটির নাম ‘টিপ্পি অব আফ্রিকা’।
তারা বলেন, এটা আশ্চর্যের বিষয় ছিল যে প্রকৃতির সঙ্গে সে এতটা খোলামেলা মিশতে পেরেছিল। সে অনেক ভাগ্যবতী একটি মেয়ে। জন্মের পর ১০ বছর বয়স পর্যন্ত সে বনের প্রাণীদের সংস্পর্শেই বড় হয়েছে।

টিপ্পি এখন ফ্রান্সেই পড়াশোনা করেন। কিন্তু মিস করেন সেই দিনগুলো। তার বাবা-মা আর পরিবার ছাড়া মিডিয়া এটা জানতো না দীর্ঘদিন। গত কয়েকমাস আগে বিষয়টি প্রথম জানাজানি হয়। ডেইলি মেইল প্রথম বিস্তারিত একটি প্রতিবেদন করে ছবিসহ।
বাংলাদেশ সময়: ০৫৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৩
এএ/এসএটি/আরআইএস