১২ জানুয়ারি চল্লিশ বছর পূর্ণ হবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের। সাভারের সুনিবিড় প্রাকৃতিক পরিবেশ গড়ে উঠা দেশের একমাত্র আবাসিক উচ্চ শিক্ষাঙ্গন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় চার দশক পূর্তি উপলে আয়োজন করা হয়েছে তিন দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার।
১২ জানুয়ারি বুধবার জাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির সন্ধে ছয়টায় মুক্তমঞ্চে কেক কেটে চার দশক পূর্তি উৎসবের উদ্বোধন করবেন। এ সময় ৪০টি ফানুস উড়ানো হবে এবং কোরাস গানের পাশাপাশি ১০ হাজার মোমবাতি প্রজ্বলন করা হবে।
১৩ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মুক্তমঞ্চে মঞ্চস্থ হবে নাটক ‘কেরামতমঙ্গল’। প্রয়াত নাট্যকার সেলিম আল দীন রচিত এ নাটকটি মঞ্চায়ন করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
১৪ জানুয়ারি শুক্রবার সকাল দশটায় পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সম্মুখে বর্ণাঢ্য র্যালি ও আনন্দ শোভাযাত্রা উদ্বোধন করবেন শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ। এ সময় উপস্থিত থাকবেন শিক্ষা সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী।
তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালায় আরো থাকছে আলোচনা অনুষ্ঠান, সম্মাননা প্রদান, দিনভর আড্ডা, স্মৃতিচারণ, বৃরোপণ, প্রীতি খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাস
১৯২১ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ৫টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপরেও এ অঞ্চলের উচ্চশিার চাহিদা পূরণ না হওয়ায় পূর্ব পাকিস্তানের নেতৃবৃন্দ ও শিতিজন একটি আবাসিক বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি তোলেন। পাকিস্তান সরকার বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করেন এবং শিক্ষা বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি খসড়া তৈরি করেন। ১৯৬৫ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের কার্যকরী সংসদ পরিকল্পনাটি অনুমোদন করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকা থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে গাজীপুর জেলার সালনায় স্থান নির্ধারণ করা হয়। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করা হয়। শেষ পর্যন্ত সেখানে আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়নি।
১৯৬৭ সালে ঢাকা থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে সাভারের নিরিবিলি পরিবেশে নতুন স্থান নির্বাচন করা হয়। সাভারের মহাসড়কের পশ্চিম পাশে এই আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্প প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় ড. সুরত আলী খানকে।
১৯৬৮ সালের ২৭ ডিসেম্বর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণ শুরু হয় এবং ১৯৭০ সালের ২০ আগস্ট সরকার এক অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে ঢাকার আদি নাম জাহাঙ্গীরনগরের সাথে মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম রাখেন ‘জাহাঙ্গীরনগর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়’।
১৯৭০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেন বিশিষ্ট রসায়নবিদ অধ্যাপক মফিজউদ্দিন আহমদ। ১৯৭১ সালের ১২ জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম আহসান আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্বোধন করেন।
১৯৭১ সালের ৪ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম কাস শুরু হলেও ১২ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালন করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত এটি একটি প্রকল্প আকারে পরিচালিত হয়। প্রকল্পের শুরুতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ৪টি বিভাগে (অর্থনীতি, ভূগোল, গণিত ও পরিসংখ্যান) ১৫০ জন ছাত্র ও ২৩ জন শিক নিয়ে যাত্রা শুরু করে।
সেসময় দেশের সামগ্রিক অবস্থা খারাপ থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণ, একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজ বন্ধ ছিল। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালের শুরু দিকে বিশ্ববিদ্যালয় আবার নবরুপে যাত্রা শুরু করে।
১৯৭৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাক্ট পাস করা হয়। এ অ্যাক্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ হয় ‘জাহাঙ্গীরগর বিশ্ববিদ্যালয়’। বিশ্ববিদ্যালয় শুরুর দিকে জমির পরিমাণ ছিল ৭৪৮.১৪ একর। ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিণ কেন্দ্রকে ৫০ একর জমি দিয়ে দেওয়ায় বর্তমানে এর আয়তন ৬৯৭.৫৬ একর।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ৫টি অনুষদের অধীনে ৩০টি বিভাগ চালু আছে। এছাড়া ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি (আইআইটি), ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ-জেইউ), ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেন্সিং ও ভাষা শিা কেন্দ্র রয়েছে।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। শিক্ষক সংখ্যা ৫৫২ জন, অফিসার ২২১ জন, তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী ৫৬৫ এবং চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর সংখ্যা ৭০১ জন।
২০০৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৭০০৮ জন গ্রাজুয়েট ও ১৪০২৫ জন স্নাতকোত্তর, ১৫৪ জন এমফিল গবেষক ও ২০০ জন পিএইচডি গবেষক তাদের গবেষণা সম্পন্ন করে ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
৪০ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জন
দীর্ঘ ৪০ বছরের পথপরিক্রমায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিা ও গবেষণাসহ অন্যান্য শিা কর্মকান্ডে গৌরব রচনা করেছে। একটি উচ্চতর গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে এ বিশ্ববিদ্যালয়কে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে এর আনুষ্ঠানিক যাত্রার প্রাক্কালে দেশের খ্যাতনামা শিকদের এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসা হয়।
একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিতি ও সুনাম বহুলাংশে নির্ভর করে তার শিা ও গবেষণা কর্মকান্ড দিয়ে। বাংলা বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. মুস্তাফা নূরউল ইসলাম রাষ্ট্রপতি পুরস্কার, বাংলা একাডেমী পুরস্কার ও একুশে পদক লাভ করেন। ইংরেজি বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী বাংলা একাডেমী পুরস্কার, বাংলা বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক আবদুল কাইউম বাংলা একাডেমী পুরস্কার ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন পুরস্কার লাভ করেন। বাংলা বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ বাংলা একাডেমী পুরস্কার লাভ করেন। ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক মো: নূরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন পুরস্কার লাভ করেন। ইতিহাস বিভাগের প্রফেসর এমিরিটাস ইতিহাসবিদ ড. আজিজুর রহমান মল্লিক একসময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন। রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ সফিউল্লাহ ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্স এবং থার্ড ওয়ার্ল্ড একাডেমি অব সায়েন্স স্বর্ণপদক অর্জন করেন। রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: ইলিয়াস মোল্লা ১৯৮৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এইচ পি রায় স্বর্ণপদক লাভ করেন। বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন এ্যাওয়ার্ড, ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্স স্বর্ণপদক, ২০০৭ সালে বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্স- ড. এম ও গণি স্বর্ণপদক লাভ করেন। পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: সলিমউলাহ ১৯৮১ সালে এইচ পি রায় স্বর্ণপদক, ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ একাডেমী অব সায়েন্স ও টিডব্লিউএস পুরস্কার, ১৯৯৪ সালে ইরানের আল খারাজমী পুরস্কার, ২০০২ সালে বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্স সিনিয়র গ্রুপ পুরস্কার এবং ২০০৩ সালে ISESCO SCIENCE অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক ও বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মুনিরুজ্জামান ১৯৮৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন পুরস্কার লাভ করেন। অধ্যাপক ড. মামুন ২০০৯ সালে The Bessel Research Prize এবং ২০০৬ সালে Third World Academy of Science (TWAS) ও ২০০০ সালে Young Physicist Medal and Certificate লাভ করেন। ড. মামুন ২০০৪ সালে Bangladesh Academy of Science Gold Medal (Junior Group) এবং ১৯৯২ সালে TWAS Best Young Scientist Prize লাভ করেন। প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ শাহাদাত হোসেন এবং মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ড. আলী আজম তালুকদার ২০০৬ সালেBangladesh Academy of Science Gold Medal (Junior Group) লাভ করেন। অধ্যাপক ড. মোঃ শাহাদাত হোসেন ২০০৬ সালে TWAS Best Young Scientist Prize লাভ করেন। নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক মো: আকতার মাহমুদ ২০০৯ সালে U.S. Department of State Award লাভ করেছেন। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. সুফি মোস্তাফিজুর রহমান নরসিংদীর উয়ারী বটেশ্বরে ভারতীয় উপমহাদেশের মধ্যে প্রাচীন সভ্যতা আবিষ্কার করে এ বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশকে উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। সমাবর্তন
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন ৫ ফেব্র“য়ারি ১৯৯৭, দ্বিতীয় সমাবর্তন ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০০১, তৃতীয় সমাবর্তন ২ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ তারিখে এবং চতুর্থ সমাবর্তন ৩০ জানুয়ারি ২০১০ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হলসমূহ
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী, শহীদ জননী জাহানারা ইমাম, বীরকন্য প্রীতিলতা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ মহান ভাষা শহীদ আর বিপ্লবী সব নেতা এবং এক কবির নাম দিয়ে নামকরণ করা হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের।
১৯৭৯ সালে প্রখ্যাত মুসলিম বিজ্ঞানী ‘আল বেরুনী’ এর নামে প্রথম হলের নামকরণ করা হয়। এ হল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম হল হওয়ায় শিক-শিকিা এবং ছাত্র-ছাত্রীদের অবস্থান করার জন্য হলে চারটি পৃথক ব্লক নির্মাণ করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম হল হিসেবে ১৯৭৩ সালে নির্মাণ করা হয় মীর মশাররফ হোসেন হল। এ হলটির প্রথমে নাম ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর হল। পরে ১৯৭৮ সালে ১৪ এপ্রিল সিন্ডিকেটের সভায় অমর কথাশিল্পী ‘মীর মশাররফ হোসেন হল’ নামে এ হলটির নামকরণ করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় ছাত্র হল নামে ১৯৮৪ সালে একটি হল নির্মাণ করা হয়। পরে ১৯৮৫ সালে ২৭ জানুয়ারীর সিন্ডিকেটের এক সভায় মহান ভাষা সৈনিক ‘শহীদ সালাম বরকত’ নামে এ হলটির নামকরণ হয়।
১৯৮০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ ছাত্র হলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক আফম কামালউদ্দিন। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই অধ্যাপক আফম কামাল উদ্দিন উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে ১৯৮৮ সালে চতুর্থ ছাত্র হলের নামকরণ করা হয় ‘আফম কামাল উদ্দিন’-এর নামে।
১৯৯১ সালে মজলুম জননেতার নামে ‘মওলানা ভাসানী হল’ নির্মাণ করা হয়। ২০০০ সালে ১৮ ফেব্রুয়ারি ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল’-এর ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এছাড়া ২০০৯ সালের ২০ জুন ‘শহীদ রফিক-জব্বার হল’ হলের নির্মাণকাজ শুরু হয় এবং ২০১০ সালের ৪ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর শিা সামাজিক উন্নয়ন ও রাজনৈতিক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আলাউদ্দিন আহমেদ এই হলটির উদ্বোধন করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম স্বতন্ত্র ছাত্রীনিবাস হলো নওয়াব ফয়জুন্নেসা হল। ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত এই হলটি আল বেরুনী হলের একটি শাখা হল ছিল। ১৯৭৮ সালে ১৪ এপ্রিল সিন্ডিকেটের সভায় এ হলটির নামকরণ করা হয় ‘নওয়াব ফয়জুননেসা হল’ নামে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আল বেরুনী সম্প্রসারিত ভবন-১টি ১৯৮৬ সালে ৮ নভেম্বরের সিন্ডিকেটের সভায় ‘মহিলা হল-২ নম্বর’ রুপে রুপান্তর করা হয়। ১৯৮৭ সালে এই হলে প্রথম ছাত্রীদের সিট বরাদ্দ দেওয়া হয়। ১৯৯০ সালের ৩০ জানুয়ারি সিন্ডিকেটের এক সভায় এ হলটির নামকরণ হয় আধুনিক নারী শিার অগ্রদূত ‘ফজিলাতুননেসা হল’ নামে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অত্যাধুনিক প্রথম ছাত্রী হল হলো ‘জাহানারা ইামাম হল’। ১৯৯৩-এর ১২ এপ্রিল এ হলের নির্মাণ শুরু হয় এবং ১৯৯৫ সালের ৩১ জানুয়ারি শেষ হয়। এ হলের স্থাপত্য নকশা প্রজাপতির দুটি পাখার আকৃতির মতো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ নম্বর ছাত্রী হল ‘প্রীতিলতা হল’। ১৯৯৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি এর ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করা হয়। ১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট সিন্ডিকেটের এক সভায় এ হলটির নামকরণ করা হয় বীরকন্যা ‘প্রীতিলতা হল’ নামে।
২০০৩ সালে ‘বেগম খালেদা জিয়া হল’ নামে আরও একটি ছাত্রী হল নির্মাণ করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থাপনা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ছোট বড় অনেক স্থাপনা। এখানে রয়েছে দর্শনীয় অমর একুশে যা ভাষা শহীদদের সম্মানে নির্মিত। সংশপ্তক যা মহান স্বাধীনতার পরিচয় বহন করে। এছাড়া আছে মুক্তমঞ্চ, অডিটোরিয়াম এবং দেশের সবচেয়ে উঁচু শহীদ মিনার। এছাড়া এখানে রয়েছে ছোট বড় প্রায় ১২টি লেক। এগুলো বর্তমানে অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে। প্রতিনিয়ত ক্যাম্পাসে আগমন ঘটছে পর্যটকের।
সাংস্কৃতিক সংগঠন
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয় সংস্কৃতিচর্চার চারণভূমি। প্রয়াত নাট্যকার সেলিম আল দীন ঘোষণা করে গেছেন, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা আর সংস্কৃতির রাজধানী জাহাঙ্গীরনগর। দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় বিভিন্ন কারণে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কিছুটা ভিন্নতার দাবি রাখে। এটি বিশেষত এর সংস্কৃতি ও নাট্যচর্চার কারণে।
মূলত সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল বায়েস তার সময়ে ২০০১ সালে প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন করেন। এরপর থেকে প্রতিবার পালন হয়ে আসছে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির বলেন, এবার বর্ণাঢ্য আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালন করা হবে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব প্রাক্তন শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে আমন্ত্রণ এই মিলন-উৎসবে যোগদানের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময় ২০৪০, জানুয়ারি ৯, ২০১১