ঢাকা, রবিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৮ মে ২০২৫, ২০ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

দার্জিলিং: পাহাড়চূড়ায় সাদা মেঘের শহর

ইবনুল করিম রূপেন, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০:৫৪, ডিসেম্বর ৬, ২০১৩
দার্জিলিং: পাহাড়চূড়ায় সাদা মেঘের শহর

একবার মনে মনে ভাবুন, আপনি ছুটে চলছেন পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে। জিপের ভেতর দাঁত কামড়ে বসে আছেন।

কারণ জিপটি পাহাড়ি পথ ধরে একেকবার বাঁক নিচ্ছে আর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বেশ কয়েক ফুট করে আপনি উপরে উঠে যাচ্ছেন। আপনার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুটছে সাদা মেঘ। কখনো মেঘগুলো জিপের বাঁ পাশের জানালা দিয়ে ঢুকে বের হয়ে যাচ্ছে ডান পাশ দিয়ে। আপনি ছুটছেন ৬হাজার ৭৩০ ফুট উচ্চতার এক শহরের উদ্দেশে। ঠিক ধরেছেন; দার্জিলিং এর কথাই বলছি।



বলিউড কিংবা কোলকাতার অনেক মুভিতেই দার্জিলিং এর দেখা পাওয়া যায়। শিলিগুঁড়ি থেকে দার্জিলিং যাওয়ার পথটা সত্যিই অসাধারণ। রাস্তার দুপাশে চা বাগান আর পাইন গাছের সারি। বেশ কয়েকবার দেখা পেয়ে যাবেন টয় ট্রেনেরও। ছোট ছোট বগির নীল রঙের এই ট্রেনটি খুব অল্প গতিতে রাস্তার পাশ দিয়েই চলতে থাকে। মাঝেমাঝে দেখে পাবেন ছোট্ট কয়েকটি শহরের।



ইচ্ছে হলে গাড়ি থেকে নেমে পাহাড়ের উপরের এই ছোট শহরগুলো ঘুরে দেখতে পারেন। এছাড়াও অনেক পাহাড়ের চূড়া থেকে দেখতে পারেন দিগন্ত বিস্তৃত পাহাড়ের সারি আর তার ফাঁকে উড়ে বেড়ানো খণ্ড খণ্ড সাদা মেঘের দল। আমি এবং আমার স্ত্রী আফরিনা হাবিব মুনমুন বারবার জিপ থেকে নেমে মেঘ ধরছিলাম আর ছবি তুলছিলাম।

দার্জিলিং এর মূল শহরের বেশ কিছুটা আগেই দেখা পাবেন ‘ঘুম’ রেল স্টেশনের। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচুতে অবস্থিত রেল স্টেশন। এরপর কিছুটা এগুলেই মূল শহর। গাড়ি থেকে নামতে পারেন চাঁদনী চক এলাকায়।

এখানে বিভিন্ন মানের অনেকগুলো হোটেল রয়েছে। বেছে নিতে পারেন নিজের পছন্দের মতো। হোটেলে দুপুরে খেয়ে বের হতে পারেন শহরটা দেখার জন্য।

পাহাড়ের চূড়ায় মল নামে একটি জায়গা আছে যা দার্জিলিং এর সবচাইতে পরিচ্ছন্ন জায়গা। ঘুরে ঘুরে শপিং করে নিতে পারেন এখান থেকে। পাহাড়ের গাঁ বেয়ে গাদাগাদি করে গড়ে ওঠা ঘরবাড়ি আর দোকানপাট দেখেই কাটিয়ে দিতে পারবেন অনেকটা সময়।

মল থেকে সেন্ট পল’স স্কুলে পাহাড়ি পথ ধরে হেটে যেতে ৩০ মিনিট সময় লাগবে। চাইলে গাড়িতেও যেতে পারেন। কিন্তু আমার সাজেশন হল হেটে যাওয়া, যদি খাড়া রাস্তা বেয়ে ওঠার দম থাকে আপনার। অন্য একটি পাহাড়ের চূড়ায় চমৎকার একটি স্কুল। বলিউডের ‘ম্যায় হু না’সহ অনেক সিনেমার শুটিং হয়েছে এই স্কুলে।

পরদিন আমরা একটা গাড়ি নিয়ে বের হলাম সেভেন পয়েন্ট দেখার উদ্দেশে। এখানে ফোর পয়েন্ট, ফাইভ পয়েন্ট, সেভেন পয়েন্ট এমন নানা ধরনের প্যাকেজ পাওয়া যায়। এর মানে হল আপনি কয়টি পয়েন্ট বা জায়গা ঘুরে দেখতে চান। তার আগে ভোরবেলা টাইগার হিলে যেতে ভুলবেন না।

টাইগার হিল থেকে সূর্যোদয় দেখা অনন্য সাধারণ এক অভিজ্ঞতা। এটি দার্জিলিং-এর সবচেয়ে বেশি উচ্চতার পাহাড়। আর আপনার ভাগ্য ভালো থাকলে, মেঘ কম থাকলে এখান থেকে দেখা মিলতে পারে এভারেস্ট এবং কাঞ্চনজঙ্ঘা রেঞ্জের। আমাদের ভাগ্য এতই ভালো ছিল যে আমরা হোটেল রুম থেকে দেখা পেয়েছিলাম কাঞ্চনজঙ্ঘার।

সেভেন পয়েন্টের একটি পয়েন্ট না বললেই না – রক গার্ডেন। চারটি পাহাড়ের পাদদেশে এই গার্ডেনটি। ইচ্ছে মতো ছবি তোলার জন্য চমৎকার একটি জায়গা। এছাড়াও ঘুরে দেখতে পারেন দার্জিলিং চিড়িয়াখানা। রেড পাণ্ডাসহ অনেক প্রাণীর দেখা মিলবে এখানে। পাশেই রয়েছে হিমালয়ান মাউন্টেইনারিং জাদুঘর। মন চাইলে চড়তে পারেন ক্যাবল কারেও।

সময় স্বল্পতার কারণে কালিমপং যেতে পারিনি আমরা। আপনি চাইলে দার্জিলিং থেকে গাড়ি নিয়ে কালিমপং-এ এক রাত থেকে আসতে পারেন। সেখানেও রয়েছে ভালো মানের হোটেল/রিসোর্ট।

দার্জিলিং থেকে ফেরার পথে মিরিক হয়ে ফিরতে পারেন। দার্জিলিং থেকে মিরিকের রাস্তাটা অসাধারণ। পুরো পাহাড়জুড়ে পাইন গাছ আর তার মাঝ দিয়ে চলে গেছে আঁকাবাঁকা রাস্তা। গাছের ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলোকরশ্মি। আপনি মুগ্ধ হতে বাধ্য। কিছুটা সময় কাটাতে পারেন নেপাল বর্ডারেও।

পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত বলে মিরিক লেকটি পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। পাহাড়ের উপর একটি লেক, টলটল করছে তার পানি, নানা রকম মাছের চাষও হচ্ছে এখানে, রয়েছে সুন্দর একটি ব্রিজ, ইচ্ছে হলে ঘোড়ায় চড়তে পারেন লেকের চারপাশ দিয়ে – সত্যিই অসাধারণ।

মিরিক থেকে শিলিগুড়ির রাস্তাটাও উপভোগ করেছি দারুনভাবে। প্রতিটি বাকেই আপনার জন্য অপেক্ষা করবে চমৎকার কিছু দৃশ্য।

দার্জিলিং এর সব মানুষ খুবই আন্তরিক। বেশির ভাগ মানুষই বাংলা এবং ইংরেজি জানে। আর আপনার হিন্দি জানা থাকলেতো কথাই নেই। অনেক নেপালিও আছে এখানে।

ঢাকা থেকে যেভাবে যাবেনঃ
শ্যামলী পরিবহন এর রাতের বাসে উঠে গেলে ভোরবেলা পৌঁছে যাবেন বুড়িমারি সীমান্তে। সেখানকার বাস কাউন্টারে কয়েক ঘণ্টা বিশ্রাম নিতে পারেন। নাস্তা করে ইমিগ্রেশন পার হতে ১০টা বা ১১টা বেজে যেতে পারে।

তারপর ঐ পার থেকে শ্যামলী পরিবহনের অন্য গাড়িতে সোজা শিলিগুড়ি। ইচ্ছে হলে শিলিগুড়িতে এক রাত থেকে যেতে পারেন অথবা ঐদিনই রওনা দিতে পারেন দার্জিলিং এর উদ্দেশে।

শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং যাওয়ার জন্য অনেক জিপ পেয়ে যাবেন। সময় লাগবে আড়াই ঘণ্টা। শিলিগুড়ির বিধান মার্কেট থেকেও শপিং করতে পারেন। শীতের শুরু কিংবা শেষদিক দার্জিলিং ভ্রমণের সবচেয়ে ভালো সময়। আর হ্যাঁ, বছরের যে সময়ই যান না কেন, সঙ্গে গরম কাপড় নিতে ভুলবেন না।

অবাক করা ব্যাপার হল ঢাকা থেকে দার্জিলিং ৩ রাত ৪ দিনের জন্য ঘুরে আসতে আপনার যাতায়াত, থাকা এবং খাওয়া মিলিয়ে প্রতিজনের খরচ মাত্র ১৫ হাজার টাকা বাজেট রাখলেই হয়ে যাবে।

* ইবনুল করিম রূপেন, অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার, মার্কেটিং, রিভ সিস্টেমস।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৩

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।