ঢাকা, রবিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৮ মে ২০২৫, ২০ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

মালয়েশিয়ার ডায়েরি-২

রাজার বাড়ি ‘ইস্তানা নেগারা’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২:১৭, ডিসেম্বর ৬, ২০১৩
রাজার বাড়ি ‘ইস্তানা নেগারা’

মালয়েশিয়া থেকে ফিরে: হোটেলে ইশতিয়াক ভাইয়ের রুম চেক আউট করার পর দু’জনে সকালের নাস্তা করলাম। বুকিত বিনতাংয়ের রেডিয়াস হোটেলের লবিতে বসে ভাবছি মালয়েশিয়াতে ইশতিয়াক ভাইয়ের শেষ দিনটা ঘুরে দেখতে কতটুকু কাজে লাগানো যায়।

কোথায় ঘুরতে যাওয়া যায়? হাতে সময় তো মাত্র কয়েক ঘণ্টা।

টুরিস্টদের জন্য রাখা বুকলেটগুলো উল্টিয়ে দেখেই ইশতিয়াক ভাই সিদ্ধান্ত নিলেন মালাকা যাওয়ার। জানালেন, পর্তুগিজ খ্যাত এ শহরে যাওয়ার ইচ্ছ‍া নাকি তার অনেক আগে থেকেই ছিলো।

কেএলসিসি’তে স্যোশাল সামিট শেষ হয়েছে ৮ নভেম্বর সন্ধ্যায়। এরপর ৯ নভেম্বর রাতে দেশে ফিরে যাবেন ড. ইউনুসের সঙ্গে আসা বাংলাদেশি প্রতিনিধিদল।

আমি তখনো একটা নিউজ ইমেইল করার চেষ্টা করছি। হোটেলের লবির ওয়াইফাই সংযোগটাও খুব একটা সহায় হচ্ছে না।

ইশতিয়াক ভাই আমাকে বসিয়ে হোটেলের ট্যাক্সি রিসারভেশন ডিপার্টমেন্টে খোজঁ নিতে গেলেন। একটু পরই হতাশ মুখে ফিরে এসে বললেন, নাহ নয়ন যাওয়া হবে না। মালাকা যেতে প্রায় ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা লেগে যাবে। ওখানে গেলে সন্ধ্যার মধ্যে ফিরে আসতে পারবো না।

আবারও ট্যুর স্পটগুলোর ব্রুশিয়ার ঘাটতে শুরু করলেন ইশতিয়াক ভাই। মুখে অনুসন্ধানের ভাব ফুটিয়ে আবার দৌঁড়ে গেলেন ট্যাক্সি রিসারভেশন ডিপার্টমেন্টে। মুখ ভর্তি হাসি নিয়ে আসলেন। বললেন, পেয়েছি চল গেন্টিং হাইল্যান্ড যাই, পথে বাতু কেভটাও দেখা যাবে। সব মিলিয়ে তিন-চার ঘণ্টার মধ্যেই ঘুরে আসা যাবে।

কুয়ালালামপুর শহর থেকে মাত্র ১৩ কিলোমিটার উত্তরে হিন্দুদের পবিত্র স্থান বাতু কেভস। এখানে আছে সুদীর্ঘ মূর্তি।

ট্যাক্সির খোঁজ নেওয়া হয়েছে দূরত্ব এবং সময় সম্পর্কে ধারণা নিতে। তবে আমারা দুজন বাসেই যাতায়াতের কথা ভাবছি। কারণ রিঙ্গিতের হিসাবে কম মনে হলেও টাকার অঙ্কে গুনলে এখানে ট্যাক্সি খুবই ব্যয়বহুল। আরেকটি শঙ্কাও হচ্ছিল। সেটি হচ্ছে এখানকার দীর্ঘ ট্রাফিক জ্যাম।

আমি প্রস্তাব রাখলাম, যেহেতু আমরা এখনো ভাল করে বাস যোগাযোগের সঙ্গে পরিচিত নই। আর বাসে গেলে ট্রাফিক জ্যামের কারণে আমাদের পুরো প্ল্যানটাই ভেস্তে যেতে পারে।

স্যোশাল সামিটে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল থেকে অংশ নিয়েছেন একটি বেসরকারি সংস্থার প্রেসিডেন্ট এবং স্কলাস্টিকা স্কুলের সাবেক সহকারী অধ্যক্ষ ফরিদা মনি শহীদুল্লাহ। ইশতিয়াক ভাই তার সঙ্গে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেন। বয়সের ভার ৫০ পেরোলেও মননে এখনো আমাদের চেয়েও তরুণী মনি আপা।

আমরা দুই সহকর্মী নিজেদের দিকে দৃষ্টি বিনিময় করলাম। সমাধান এলো। বাতু কেভ আর গেন্টিং হাইল্যান্ডের কথা বলতেই এক বাক্যে রাজি হয়ে গেলেন মনি আপা। হোটেল থেকে বেরিয়ে ট্যাক্সি খুঁজতে বেরিয়ে পড়লাম তিনজনে।

এখানে তামিল ট্যাক্সিক্যাব চালকদের বেশ বদনাম আছে। গাড়ির মিটারে কারসাজি, পর্যটকদের অতিরিক্ত ঘুরানো ছাড়াও ছিনতাইয়ের সঙ্গেও জড়িত আছে বলে লোকমুখে শোনা যায়।

তবে আমাদের কপালে যে তামিল চালক পড়ল, তাকে বেশ আন্তরিক আর সুবোধ মনে হলো। বেশ পর্যটকবান্ধব এ চালক। তার ড্রাইভিং সিটের পাশেই আছে গাইড বুক। মালয়েশিয়ায় ট্যুরিস্ট স্পটগুলোর ক্যাটালগ।

তিনি জানালেন, একই পথে রাজপ্রাসাদ দেখিয়ে নিয়ে যাবেন আমাদের। আর তিনি ট্যুর গাইড হিসেবেও সাহায্য করবেন।

রাজার প্রাসাদ বলে কথা। বেশ দূরেই আমাদের ক্যাব থামলো। মূল ফটকের অনেক ভেতরে টিলার ওপর রাজার বাড়ি। ফটকের বাইরে থেকেই যতটুকু দেখে নেওয়া যায়।

মালয়ী ভাষায় রাজপ্রাসাদকে বলা হয় ‘ইস্তানা নেগারা’। এটা ইয়াং-দি-পার্তুয়ান-আগং (রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তি) এর বাসভবন। মালয়েশিয়ার ১৪তম ইয়াং-দি-পার্তুয়ান-আগং হিসেবে আছেন কেদা রাজ্যের সুলতান আবদুল হালিম। মালয়েশিয়ার ইতিহাসে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি দ্বিতীয়বারের মতো ইয়াং-দি-পার্তুয়ান-আগং হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।

রাজপ্রাসাদের ফটক এবং অশ্বারোহী রাজকীয় গার্ড এবং রাজপ্রহরীদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবি তুললাম আমরা। ব্রিটিশ রাজপ্রহরীদের মতোই লাল-সাদা ইউনিফর্মে সুসজ্জিত হয়ে রোবটের মতো দাঁড়িয়ে থাকে তারা। শুধু চোখের পাপড়ি আর কর্নিয়াটি ঘুরঘুর করে।

তামিল চালক এগিয়ে এসে বললেন, আপনারা তিনজনে দাঁড়ান, ছবি তুলে দেই। কিন্তু মনি আপা ব্যস্ত কিছু স্কুলের বাচ্চাদের সঙ্গে ছবি তুলতে।

আর বেশি সময় এখানে দিলাম না। ট্যাক্সির দিকে এগোলাম। বাতুকেভস হয়ে যেতে হবে গেন্টিং হাইল্যান্ডে। আর চড়া রোদটাও এখানে আর ঘুরে বেড়ানোর অনুমতি দিচ্ছিল না।

বাংলাদেশ সময়: ০২১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০১৩

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।