চট্টগ্রাম: বিরোধী জোটের বর্জনের মধ্যে বিক্ষিপ্ত ককটেল আর বোমাবাজির মধ্যে চট্টগ্রামে চলছে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। তবে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে রোববার সকালে ভোটারদের উপস্থিতি কম দেখা গেছে।
এদিকে শনিবার রাতে সহিংসতার ঘটনার জের ধরে সাতকানিয়ায় দু’টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে।
সাতকানিয়া থেকে আমাদের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট রমেন দাশগুপ্ত জানান, সাতকানিয়ায় বিক্ষিপ্তভাবে ককটেল বিস্ফোরণ এবং ভোট কেন্দ্রে আগুন দেয়ার চেষ্টা করেছে জামায়াত-শিবির।
উপজেলার ৭নং ঢেমশা আলমগীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে সকাল ৯টার দিকে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এর আগে রাতে এ কেন্দ্রের একটি বুথে আগুন দেয়। তবে এতে তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
m320140105111207.jpg)
ঢেমশা আলমগীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা প্রিজাইডিং অফিসার সুভাষ চন্দ্র দাশ জানান, এই কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৫৩৭ জন। তবে সকাল সোয়া ৯টা পর্যন্ত মাত্র দুইজন ভোটার তাদের ভোট প্রয়োগ করেছেন।
এদিকে এসব কেন্দ্রে নিরাপত্তার কথা বলা হলেও সেভাবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যকে দেখা যায়নি। ওই কেন্দ্রে দুই জন পুলিশ সদস্য এবং তিনজন আনসার সদস্যকে টহল দিতে দেখা গেছে।
সাতকানিয়ার ৮ নম্বর ঢেমশা ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স কেন্দ্রে মোট ভোটার ১ হাজার ৫২৫জন। এরমধ্যে সকাল সাড়ে ন’টা পর্যন্ত মাত্র চারজন ভোটার ভোট দিয়েছেন বলে জানালেন কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার আ ন ম শামসুদ্দিন।
সাতকানিয়ার ৫০ নং ঢেমশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল সাড়ে ন’টা পর্যন্ত ২০টি ভোটগ্রহণ করা হয়েছে। এখানে বুথ রয়েছে চারটি। আর এখানে ২ হাজার ৭৮০ ভোটার রয়েছে বলে জানালেন কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার আবুল কালাম আজাদ। এই কেন্দ্রে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটারদের উপস্থিতিও বাড়তে থাকে।
m420140105111215.jpg)
সাতকানিয়া আলিয়া এমইউ ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রের প্রিজাইডং অফিসার ইসকান্দর নূরী জানান, এখানে ২ হাজার ৭১৯জন ভোটার আছে। এরমধ্যে সকাল সাড়ে ন’টা পর্যন্ত ৩৩জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।
এই কেন্দ্রে ভোট দিতে আসেন ৮০ বছরের বৃদ্ধা আঞ্জুমান আরা বেগম। জানতে চাইলে বাংলানিউজকে তিনি বলেন,‘আমার ছেলেরা আমাকে কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। আমি ভোট দিয়েছি। ’
এদিকে লোহাগাড়াতেও বিভিন্ন কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ চলছে।
এছাড়া নগরীর মুসলিম সোসাইটি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে আমাদের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট আবদুল্লাহ আল মামুন জানিয়েছেন, সকাল ৮টার দিকে ১৫জন পুরুষ ও ৫জন মহিলা ভোটার ভোট দিতে এসেছেন। এদের মধ্যে কোতোয়ালি থানা এলাকার বাসিন্দা আবদুল বারী ১৯৮৯ সাল থেকে এই কেন্দ্রে ভোট দিচ্ছেন।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন,‘সেই ১৯৮৯ সাল থেকে প্রতিটি নির্বাচনে এই কেন্দ্রে ভোট দিয়ে আসছি। অন্যান্য বছর নির্বাচনের সময় এসময়ে কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি অনেক বেশি থাকে। কিন্তু এবার এখনও সেভাবে আসেননি কেউ। ’
নগরীর কুসুম কুমারী উচ্চ বিদ্যালয়, কুসুমবাগ বিদ্যালয়, ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়, কাজীর দেউরিতে লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রেও একই চিত্র দেখা গেছে।
নগরীর কাট্টলী নূরুল হক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল ন’টায় ককটেল বিস্ফোরণ করে দুর্বৃত্তরা। এতে কেন্দ্রের আশপাশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এই কেন্দ্রে সাতটি বুথে রয়েছে। আর ভোটার সংখ্যা তিন হাজার ৬৫৩। তবে সকাল সাড়ে ন’টা পর্যন্ত ৬৮টি ভোটগ্রহণ করা হয়েছে বলে প্রিজাইডিং অফিসার প্রসেনজিৎ পাল জানিয়েছেন।

এই কেন্দ্রে আবুল হাসেম নামে এক ভোটার বাংলানিউজকে বলেন,‘ভোট দেয়া আমার নাগরিক অধিকার। তাই ভোট দিতে এসেছি। ’
এদিকে ফটিকছড়ির আজিমনগর আহমাদিয়া রহমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্র থেকে আমাদের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট মো. মহিউদ্দিন জানিয়েছেন, সেখানেও ভোটারদের উপস্থিতি কম। এ কেন্দ্রে ১০ মিনিট দেড়িতে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে।
ফটিকছড়ির বিভিন্ন কেন্দ্রে নিরাপত্তা জোরদার করতে পুলিশ, র্যাব, বিজিবিসহ সেনাবাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে।
এদিকে চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের মধ্যে নয়টি আসনেই রোববার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে, চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি), চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ), চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড), চট্টগ্রাম-৯ (কোতয়ালী-বাকলিয়া), চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা), চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া), চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-পশ্চিম পটিয়া), চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) এবং চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী)।
এরমধ্যে ফটিকছড়িতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন নৌকা প্রতীকে তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারি ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ড.মাহমুদ হাসান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মো.নাজিম উদ্দিন।
সন্দ্বীপে আওয়ামী লীগের মাহফুজুর রহমান মিতা, জাতীয় পার্টির এম এ ছালাম ও জাসদের নূরুল আক্তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সীতাকুণ্ড আসনে আওয়ামী লীগের দিদারুল আলম, ওয়ার্কার্স পার্টির দিদারুল আলম চৌধুরী, জাসদের আ ফ ম মফিজুর রহমান এবং জেপি (মঞ্জু) থেকে অ আ ম হায়দার আলী চৌধুরী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নগরীর কোতয়ালী-বাকলিয়া আসনে জাতীয় পার্টি থেকে জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, ওয়ার্কার্স পার্টির অ্যাডভোকেট আবু হানিফ, ন্যাপের আলী আহমেদ নাজির এবং বিএনএফ’র অধ্যাপক আরিফ মঈনুদ্দিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
বন্দর-পতেঙ্গা আসনে আওয়ামী লীগের এম এ লতিফ এবং জাসদের মো.জসীম উদ্দিন বাবুল এবং জাতীয় পার্টির কামাল উদ্দিন চৌধুরী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
পটিয়ায় আওয়ামী লীগের সামশুল হক চৌধুরী এবং জাতীয় পার্টির সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
আনোয়ারা-পশ্চিম পটিয়ায় আওয়ামী লীগের সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, জাতীয় পার্টির তপন চক্রবর্তী ও বিএনএফ থেকে নারায়ণ রক্ষিত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় আওয়ামী লীগ থেকে ড.আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভি এবং বিএনএফ থেকে জয়নাল আবেদিন কাদেরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এসব আসনের সর্বমোট ভোটার সংখ্যা ২৮ লক্ষ ২৮ হাজার। নয়টি আসনে মোট ১ হাজার ৪৪টি ভোটকেন্দ্রে ৫ হাজার ৫৮৩টি ভোট কক্ষ রয়েছে।
আর ভোটগ্রহণের কাজে প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে ১ হাজার ৪৫ জন, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ৫ হাজার ৫৮৩ জন এবং ১১ হাজার ১৬৬ জন পোলিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫০ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৫, ২০১৪
সম্পাদনা: তপন চক্রবর্তী, ব্যুরো এডিটর