ঢাকা, রবিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৮ মে ২০২৫, ২০ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

ভবিষ্যদ্বাণী: আজগুবি না পাগলামি

জাকারিয়া খান, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭:৫৫, জানুয়ারি ৯, ২০১৪
ভবিষ্যদ্বাণী: আজগুবি না পাগলামি

ঢাকা: অনাগত দিনগুলো নিয়ে বিখ্যাতদের কাছ থেকে অনেক ভবিষ্যদ্বাণী শুনে থাকি আমরা। বর্তমান সময়ে ইন্টারনেটের বিভিন্ন সাইটসহ সামাজিক যোগাযোগ নেটওয়ার্কে আমরা নিজেরাই প্রযুক্তির উন্নতি-অগ্রগতি, অর্থনীতি সম্পর্কিত তথ্যাবলী, রাজনৈতিক-কূটনৈতিক নাটকীয় মোড় ছাড়াও অনেক বিষয়েই বিভিন্ন ধরনের ভবিষ্যদ্বাণী করে থাকি।



তবে বিখ্যাতদের ভবিষ্যদ্বাণী আর আমাদের মুখের কথা এক নয়। বেশিরভাগ সময়ই বিখ্যাতদের কথা ফলে যায়।

এটাও সত্য যে, ভবিষ্যতবক্তাদের অনেকে এমনকি তাদের সবচেয়ে জ্ঞানী মানুষটিও অনুমানের ওপর ভিত্তি করেই কোনো বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করে থাকেন। যার সবগুলো সবসময় সঠিক বলে প্রমাণিত হয় না। তেমনই কয়েকটি অনুমান নিয়ে এবারের উপস্থাপন।



সমুদ্রতলে শহর
শিগগির মানুষ সমুদ্রের তলদেশে শহর নির্মাণ করতে যাচ্ছে। এখনও এমন ঘোষণাকে অনেকেই বাতুলতা ভাবতে পারেন। কিন্তু ১৯৮৫ সালেই যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকো’র ‘ফিউচার ওয়ার্ল্ড এক্সপো’র আয়োজক টড মিলস এমন দাবি করেন। ইউনাইটেড প্রেস ইন্টারন্যাশনালকে (ইউপিআই) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এধরনের শহরে ‘লেজার ফিউশন’ পদ্ধতিতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।



কম্পিউটার কী দরকার!
স্ববিরোধী হলেও সত্য, ১৯৬০ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান কম্পিউটার বিক্রেতা কোম্পানি ‘ডিজিটাল ইক্যুইপমেন্ট কর্পোরেশন’র প্রতিষ্ঠাতা  ও প্রেসিডেন্ট  ক্যান ওলসন কম্পিউটারের কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই বলেই মনে করতেন। তিনি একবার বলেন, একজন মানুষের ঘরে কম্পিউটার থাকার মতো কোনো কারণ দেখি না আমি!

বর্তমান সময়ে এমন মন্তব্য করলে বেচারার কী অবস্থা হতো!



গাড়ি ঘোড়ার বিকল্প নয়
বর্তমানে এর বিপরীতই বলা উচিত। কিন্তু মিশিগান স্যাভিংস ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট হেনরিফোর্ডের এক আইনজীবী একবার দাবি এমন দাবিই করেছিলেন। তার মতে, ঘোড়াই (কিংবা ঘোড়ার গাড়ি) হলো বাস্তবতা। গাড়ি (কার) আসলে অলীক কল্পনা। ভাবুন তো, তাঁর কথা সত্যি হলে এখন আপনার গ্যারেজ হতো ঘোড়ার আস্তাবল!



সবার জন্য হেলিকপ্টার!
সবারই ব্যক্তিগত হেলিকপ্টার থাকবে। ভাবছেন লোকটা বলে কী? একবিংশ শতাব্দীতে এসেও সবাই একথা বিশ্বস করবেন না। কিন্তু ১৯৫১ সালের জানুয়ারিতেই এমন দাবি করেন ফ্রাঙ্ক টিনসলে। সবার জন্য স্বল্প-ব্যয়ে ব্যক্তিগত পরিবহনের চিন্তা থেকেই এমন দাবি করেন তিনি। তখন তার কথা কেউই বিশ্বাস করেনি। সুখবর হলো বর্তমানেও একথা বিশ্বাস করে এমন মানুষ হয়তো কমই আছে আমাদের সমাজে।



পৃথিবীপৃষ্ঠের বাইরে কল-কারখানা!
বিজ্ঞানীরা মনে করতেন মানুষের মধ্যাকর্ষণ গতি মুক্ত পরিবেশে কাজ করার সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে একদিন পৃথিবীর কক্ষপথে কল-কারখানা স্থাপন ও বিজ্ঞান বিষয়ক লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করা যাবে।



সুপার স্মার্ট প্রাণী
যেসব প্রাণী মানুষের কাজে লাগে না সেগুলো ক্রমান্বয়ে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। ১৯২৬ সালে ‘ল্যাডিস হোম’ সাময়িকীর এক প্রবন্ধে এ দাবি করা হয়। বলা হয়, প্রথাগত শ্রমের ক্ষেত্রে বানর হতে পারে মানুষের অন্যতম ভরসা। তবে বর্তমান সময়ে বিপরীত বাস্তবতা হয়তো আমাদের মতো অনেক কুঁড়েদের হতাশই করেছে।



পারমাণবিক শক্তির ভ্যাকুয়াম ক্লিনার
আপনি কি এখনো পুরনো ইলেক্ট্রিক ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ব্যবহার করেন। কী সেকেলে! হ্যাঁ ১৯৫৫ সালে লিউয়িট ভ্যাকুয়াম কোম্পানির প্রেসিডেন্ট অ্যালেক্স লিউয়িটের করা ভবিষ্যতবাণী ফললে হয়তো আমাদের এমন কথাই শুনতে হতো এখন। পরবর্তী ১০ বছরের মধ্যে পারমাণবিক শক্তি চালিত ভ্যাকুয়াম ক্লিনার বাজারে আসবে বলে দাবি করেন তিনি। আমরা কি এখনও ১০ বছরের অপেক্ষায়ই আছি?



উচ্চগতির রেলে চড়া নিষেধ
উচ্চগতির ট্রেনে ভ্রমণ সম্ভব নয় বলে মনে করতেন ঊনবিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞানী ড. ডিয়োনিসিস ল্যার্ডার। এতে মানুষ অ্যাসপিক্সিয়া (অক্সিজেনের স্বল্পতা এবং কার্বনডাই অক্সাইডের আধিক্য) আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারে বলেও ধারণা ছিল তাঁর। এটিও ভুল প্রমাণ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ‘অ্যামট্র্যাক’ কোম্পানি।

উড়ুক্কু বাড়ি!
২০০১ সালের মধ্যে মানুষের কাছে উড়ুক্কু বাড়ি আসছে! না ফললেও এমন এমন ভবিষ্যদ্বাণীই দিয়েছিলেন ব্রিটিশ সাইন্স ফিকশন লেখক আর্থার সি ক্লার্ক। ১৯৬৬ সালে ‘ভোগ ম্যাগাজিনে’ লেখা এক প্রবন্ধে তিনি বলেন, এ ধরনের উড়ুক্কু বাড়ির মাধ্যমে আপনি প্রচণ্ড শীতে এক এলাকা ছেড়ে গরম আবহাওয়ার অন্য এলাকায় উড়ে যেতে পারবেন। সত্যিই, এমন হলে হয়তো প্রচণ্ড শীতে এত কষ্ট করতে হতো না শীতপ্রধান দেশগুলোর বাসিন্দাদের!

কায়িক শ্রমের দিন শেষ
অচিরেই মানুষের কায়িক শ্রমের কাজগুলো রোবট করে দেওয়া শুরু করবে বলে দাবি করেন নোবেল জয়ী আমেরিকান সমাজবিজ্ঞানী হার্বার্ট সিমন। ১৯৫৬ সালে তিনি বলেন, ২০ বছরের মধ্যেই মেশিন (রোবট) মানুষের সব ধরনের কাজ করতে সক্ষম হবে। তাঁর ভবিষ্যদ্বাণীর ৬ যুগ পরও মানুষকে কায়িক শ্রমেই নির্ভর করতে হচ্ছে।

বিদায় C, X ও Q
ইংরেজি বর্ণমালার তিনটি বর্ণ C, X ও Q একদিন পরিত্যক্ত হয়ে যাবে বলে দাবি করেন জন এলফ্রেথ নামের এক সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। ১৯০০ সালে তিনি বলেন, ইংরেজি বানানে এগুলোর কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই!

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০১৪
সম্পাদনা: হুসাইন আজাদ, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।