ঢাকার রাস্তা ঘুরে: বুধবার মধ্যরাত, ঘড়ির কাঁটা তখন আড়াইটার ঘরে! ঘণ্টা ছয়েক আগের ব্যস্ত রাজধানী স্তব্ধ হয়ে গেছে শীতের তোপে।
অভিজাত-অনভিজাত পাড়ার উঁচু-নিচু ভবনগুলোর দরজা-জানালার ফাঁক গলিয়ে এবং গরম পোশাকের ‘প্রাচীর’ মাড়িয়ে শীত তার বাহাদুরি দেখাতে না পারলেও বস্তি-রাস্তা আর ফুটপথে শীতের প্রকোপ তখন অনেক নির্মমভাবে চোখে পড়ছিলো।
কনকনে শীতের রাতে রাজধানীর বস্তি-ফুটপাতের অনেক দৃশ্য নীরবে অশ্রু ঝরালেও মাঝে মাঝে এমন কিছু দৃশ্য চোখে পড়েছে, যাতে মনে হয়েছে সৃষ্টিজগত থেকে ‘ভালোবাসা’, ‘মমতা’ অথবা ‘আশ্রয়’ শব্দগুলোর অর্থ সহজে পুরোবে না।

রাতভর রাজধানীর বিভিন্ন ব্যস্ত-নিভৃত সড়ক ও এলাকা প্রদক্ষিণ শেষে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে পৌঁছে থমকে যেতে হয়।
টার্মিনালের বারান্দা ঘেঁষে বিছানা পেতে ছেঁড়া-আধা ছেঁড়া কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমোচ্ছিলেন কিছু ছিন্নমূল মানুষ। আর তাদের সেই বিছানায়ই জায়গা করে নিয়েছে ক’টি কুকুর।
শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে কুকুর যখন নিজের বিছানার পাশেই জায়গা করে নিচ্ছিল তখন নিশ্চয় বিছানাওয়ালা লোকটি বুঝতে পেরেছিলেন! কিন্তু তাড়িয়ে দেননি কুকুরটিকে।
শীতের তীব্রতায় নিজের কষ্টের কথা ভেবে হয়তো আর না বোঝার ভান করেই ঘুমিয়ে গেছেন বিছানাওয়ালা লোকটি। নিরাপদ এবং আরামপ্রদ আশ্রয় পেয়ে মুখটা কাঁথার মধ্যে আরও বেশি গুঁজে দিয়ে ঘুমিয়ে যায় কুকুরটিও।
মমত্ববোধ আর আশ্রয়বোধের এমন অভাবনীয় দৃশ্যবন্দী করার ইচ্ছে থেকে ছবি তোলার জন্য ক্যামেরা বের করলেও ‘ঘুমের দেশের প্রাণীগুলো’র ঘুম ভেঙে যাবে এই আশঙ্কায় খানিকটা দ্বিধায় পড়ে যেতে হয়। তবে শেষ পর্যন্ত অতি সন্তর্পণে কারও ঘুমেই ভ্যাঘাত না ঘটিয়েই সেই অভাবনীয় দৃশ্যগুলো ক্যামেরাবন্দি করা হয়।
ফেরার পথে অনেক শীত অনুভব করলেও ‘শীতরাত’কে ধন্যবাদ জানাতে ভুল হলো না। এই শীতইতো এক বিধাতার সৃষ্টিকূলের বৈষম্য দূর করে দিয়েছে। এই শীতইতো বাঁচিয়ে রেখেছে ‘ভালোবাসা’, ‘মমতা’, ‘আশ্রয়বোধ’!
বাংলাদেশ সময়: ০৬১৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৪
সম্পাদনা: হুসাইন আজাদ, নিউজরুম এডিটর