পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ের ভিতরগড়ে প্রাচীন মন্দিরসহ স্থাপনার সন্ধান পাওয়া গেছে।
প্রাচীন এই দুর্গনগরী ভিতরগড়ে মাটি খনন করে আরো দুটি প্রাচীন মন্দিরের স্থাপনার সন্ধান পেয়েছে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের গবেষকরা।
ধারণা করা হচ্ছে নতুনভাবে বের হওয়া দুটি স্থাপনা অষ্টম শতকে নির্মাণ করা হয়। পঞ্চগড় সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরের এ মন্দির সদৃশ্য প্রাচীন এসব স্থাপনা দেখতে প্রতিদিন ভিতরগড় এলাকায় অসংখ্য দর্শনার্থী ভিড় করছেন।
প্রায় পাঁচ বছর আগে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ এর অধ্যাপক ড. শাহাজ হুসনে জাহান শিক্ষার্থীদের নিয়ে এই দুর্গনগরীর খনন কাজ শুরু করেন। এখানে কয়েক দফায় মাটি খননে বেরিয়ে আসে বেশ কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। ইতোপূর্বে এ এলাকা থেকে ছয়টি স্থাপনা বের হয়।

অষ্টম শতকে পঞ্চগড় সদরের অমরখানা ইউনিয়নের ভিতরগড়ের প্রায় ২৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছিল এ দুর্গনগরী। বাংলাদেশ প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের অনুমোদনে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব) এর শিক্ষার্থীদের নিয়ে পাঁচ বছর ধরে অধ্যাপক ড. শাহাজ হুসনে জাহান নিজ উদ্যোগে এখানে খনন ও গবেষণা করছেন।
প্রতি বছর কয়েক দফায় গবেষণায় এ পর্যন্ত আটটি প্রাচীন স্থাপনা আবিষ্কার হয়েছে। খননের পর এসব স্থাপনা আবারও প্রতœতাত্বিক কায়দায় মাটি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়।
প্রায় এক মাস ধরে চলছে ১১তম খনন কার্যক্রম। সর্বশেষ ২৪ জানুয়ারি ( খনন কাজ এখনো অব্যাহত) ভিতরগড় মহারাজার দীঘির ২য় আবেষ্টনি দেওয়ালের বাইরে ২৫ বর্গমিটার এলাকায় একটি প্রাচীন স্থাপনা এবং ২য় আবেষ্টনি দেওয়ালের ভেতরে ১৫ বর্গমিটার এলাকা জুড়ে একটি প্রাচীন মন্দিরের স্থাপত্য বের হয়।
ধারণা করা হচ্ছে এই দুটি স্থাপনাও অষ্টম শতকে নির্মাণ করা হয়। নতুনভাবে বের হওয়া এ মন্দির সদৃশ্য প্রাচীন স্থাপনা দেখতে প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থী এলাকায় ভিড় করছে।
ভিতরগড় কাজীরহাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ভিতরগড়ের এই প্রচীন প্রতœতাত্ত্বিক নির্দশন শিক্ষার্থীদের প্রত্নতত্ত্ব, নৃতত্ত্ব, ভূগোলসহ বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা ও শিক্ষা কার্যক্রমে কাজে লাগবে।
ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ এর অধ্যাপক ড. শাহাজ হুসনে জাহান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ভিতরগড় এলাকায় প্রতœতাত্ত্বিক সমীক্ষা গবেষণা এবং খনন শুরু করেছি ২০০৮ সালে।
এই দুর্গনগরী ৪টি আবেষ্টনি দেওয়াল দারা পরিবেষ্টিত, এর ভেতর থেকে ৮টি স্থাপনার সন্ধান পেয়েছি এর মধ্যে ৪টি ধর্মীয় স্থাপনা, বাকিগুলো নিয়ে গবেষণা চলছে।

তিনি বলেন, ভিতরগড় দুর্গনগরী অনেকগুলো জায়গা থেকে বাংলাদেশ অন্যতম। এখানে যে সব বৈশিষ্ট লক্ষণীয় তা প্রাচীন ভারতীয় রীতি অনুসরণ করেই রচিত হয়েছে। এই দুর্গনগরী কে বা কারা নির্মাণ করেছেন, কারা এই সভ্যতায়, এই প্রচীন জনপদে বসবাস করেছে এখন পর্যন্ত তার সঠিক ইতিহাস আমরা বলতে পারছি না।
তবে স্থানীয় জনশ্রুতিমতে, কোনো এক পৃথুরাজা এখানে বসবাস করেছিলেন এবং তিনিই এখানে রাজত্ব করেছিলেন।
আমরা ভিতরগড়ে ইতিহাসের পাশাপাশি ভিতরগড়কে একটি পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছি। ভিতরগড় কেবল প্রত্বতাত্বিক স্থলই নয়, এখানে প্রাচীন ১০টি দিঘী ও ২টি নদী প্রবাহিত হয়েছে।
এখানকার অসাধারণ সৌন্দর্য বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে একটি নতুন সংযোজন। এসব প্রতœসম্পদ রক্ষায় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৪