লাউয়াছড়া, শ্রীমঙ্গল থেকে ফিরে: একটি স্বচ্ছ কাচের গ্লাস। তাতে পানি।
আমরা ছিলাম দ্বিতীয় দলে। অর্থাৎ, এটা কীভাবে সম্ভব! কী এর রহস্য। শ্রীমঙ্গলের সাতরঙা চায়ের খ্যাতি দেশজুড়ে। এমনকি শ্রীমঙ্গলে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ভোলেন নি সাতরঙা চায়ের উদ্ভাবক রমেশের চা পান করতে। রমেশের রহস্য ভেঙে এখন দেশের আরো দু’এক জায়গায় তৈরি হয় সাতরঙা চা। তবে চায়ের উপাদান, তৈরির কৌশল এখনো অজানা।
তিন সদস্যের বাংলানিউজ টিম ভেদ করার চেষ্টা করেছে সেই রহস্য। আর এটা সম্ভব হয়েছে লাউয়াছড়া ট্যুরিস্ট শপের সাতরঙা চায়ের কারিগর গৌরাঙ্গ বৈদ্যের সহযোগিতা ও আন্তরিকতায়। সেদিন ছিল লাউয়াছড়া উদ্যানে আমাদের প্রথম দিন। সারাদিনের ক্লান্তি একটু ঝেড়ে ফেলতে যেন বিকল্প ছিল না চায়ের। চা-পানের অভ্যাস খুব একটা না থাকলেও সাতরঙা চা পানের ইচ্ছেটা দমন করতে পারলাম না।
একটু আলাপেই বেশ ভাব জমলো গৌরাঙ্গ দাদার সঙ্গে। দাদার কাছে জানতে চাইলাম সাত স্তরে সাত রঙের রহস্য। বললেন, ভিতরের ঘরে চলুন।
গিয়ে দেখলাম ছোট একটি ঘর। সেখানে সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষেধ। দেখলাম সাতটি আলাদা গ্লাসে সাত রঙের চা সাজানো। সেখান থেকে একটু একটু করে নিয়ে সাজাচ্ছেন সাতটি স্তর। বেশ ভালো মনের মানুষ এই গৌরাঙ্গ। এভাবে এর আগে কাউকে দেখান নি বলে জানালেন তিনি।
আমরা প্রস্তাব করলাম প্রতিটি স্তর আমাদের তৈরি করে দেখানোর। রাজি হলেন।
প্রথম স্তর, অর্থাৎ একেবারে নিচের স্তরের রংটা ঠিক চায়ের মতো না। এই স্তরের চায়ের উপাদান আদা, গ্রিন-টি ও চিনি। সবচেয়ে ঘন স্তর এটি।
দ্বিতীয় স্তরের উপাদান শুধু লিকার ও চিনি।
তৃতীয় স্তরের উপাদান চা, দুধ ও চিনি।
চতুর্থ স্তরে রয়েছে গ্রিন টি, সাধারণ চা, দুধ ও চিনি।
পঞ্চম স্তরের উপাদান গ্রিন টি ও চিনি।
ষষ্ঠ স্তরের লেবুর জল ও চিনিই প্রধান উপাদান।
সবশেষ অর্থাৎ, সবার উপরের স্তরের উপাদান গ্রিন টি লেবু ও চিনি।
পুরো প্রক্রিয়ায় গৌরাঙ্গ দাদা আমাদের একটি জিনিস শুধু নিষেধ করলেন। সেটা হলো, বিভিন্ন পাত্রে মেশানো তার উপাদানগুলোর ছবি যেন আমরা না প্রকাশ করি।
সবশেষে তার কাছে দুটো প্রশ্ন ছিল। নাড়াচড়া করলে এক স্তরের চা আরেক স্তরে মিশবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, চামচ দিয়ে না ঘুটে যতই নাড়াচাড়া করুন এক স্তর আরেক স্তরে মিশবে না। পরীক্ষা করে দেখলাম বিষয়টি একেবারেই ঠিক।
আবার প্রশ্ন করলাম এই না মেশার প্রধান কারণ কি? সেটাই আসলে মূল রহস্য। গৌরাঙ্গ দাদা এবার মুচকি হেসে বললেন, সেটা না বললে হয় না। আমরা বললাম সবই তো দেখালেন, এটুকু বলেই ফেলেন না। তারপর আস্তে আস্তে বললেন, জলের ঘনত্ব।
সব বলার পরও একটি রহস্য কিন্তু গৌরাঙ্গ দাদা তার কাছে রেখেই দিলেন। সেটিও কিন্তু কম গুরুত্বপূর্ণ নয়, মেশানোর পদ্ধতিটা। আমাদের বললেন, এই মেশানোর ছবিটা যেন আমরা না তুলি। এখানেই দক্ষতা কারিগরের। এটুকু রহস্য রহস্যই থাক!
বি.দ্র: প্রতি কাপ গ্লাস চায়ের দাম ৭০ টাকা। চাইলে কেউ তিন, চার বা পাঁচ স্তর পর্যন্তও খেতে পারেন। তখন প্রতি স্তরের দাম পড়বে ১০ টাকা করে। সাত স্তরের স্বাদও কিন্তু আলাদা। আর গৌরাঙ্গ দাদার দাবি, আবিষ্কর্তা অন্য হলেও তার চা-ই শ্রীমঙ্গলের সেরা।
বাংলাদেশ সময়: ০০৪১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৪