ঢাকা, রবিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৮ মে ২০২৫, ২০ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

হাসি পায়…

সাজেদা সুইটি,স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১:০৫, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৪
হাসি পায়…

নাইট ডিউটি ছিল। তাই পছন্দের কয়েকটি গান ছেড়ে ঘুম তাড়িয়ে কাজ করবো ভেবে ইউটিউবে ঢুকলাম সেদিন।


 
দেখতে না দেখতেই আমার প্রিয় অভিনেত্রী মাধুরি, ক্যাটরিনাসহ আরও কয়েকজনের শুধু গান নয়, ওয়ার্ডরোব ম্যালফাংশনের ভিডিও এসে গেলো।   মনোযোগ দিয়ে দেখছিলাম একই ভিডিও কয়েকবার করে।
 
ওঁদেরকে বিভিন্ন ছবিতে নামমাত্র পোশাকে বা অর্ধনগ্ন দেখতে দেখতে এমন অবস্থা হয়েছে যে, আমি কিছুতেই এসব ভিডিওতে অস্বাভাবিক কিছু ধরতে পারছিলাম না! ওঁরা যে কাপড় পরেছেন তাতেই উল্টা কৃতজ্ঞ হলাম।
 
কিছুতেই মাথায় আসছিল না, যারা বিকিনি পরে স্বাচ্ছন্দে ঘুরে বেড়ান, তাদেরই অদৃশ্য কোনো পোশাকের কোনাকাঞ্চি দৃশ্যমান হলে, সেটা ম্যালফাংশনের নিউজ হয় কীকরে!

আসলেই কি বেখেয়ালে ওয়ার্ডরোব ম্যালফাংশন হয় তাদের, নাকি টাকা দিয়ে কেনা সেই পোশাকও দেখাতে উদগ্রিব থাকেন সেলিব্রেটিরা? -এমন প্রশ্নও মনে আসতে পারে অনেকের।  
 
তারা কি আর জানেন না যে, কোনো কোনো ক্যামেরাম্যানের চোখ এসবই খুঁজে ফেরে! যাই হোক, তাদের দেখাতে আপত্তি না থাকলে, অন্যদের দেখতে আপত্তি থাকবে কেন?
 
অনেক নায়িকা নাকি আবার এসবের মাধ্যমে আলোচনায় থাকতে চান। কোথাও পড়েছিলাম, শো-বিজে পজিটিভ বা নেগেটিভ- যাই হোক, আলোচনায় থাকা নাকি সাফল্যের একটি প্রকাশ ও অংশ!
 
এদিক থেকে সফলদের অন্যতম হলেন পর্নো তারকা সানি লিওন। কোন ছবিতে সংক্ষিপ্ত পোশাক পরবেন, কোথায় স্নানদৃশ্য থাকবে, সেই খবর ফলাও করে প্রচার করে আমাদের কিছু মিডিয়াও।
 
* ককটেল আহত হয়ে যে ক’দিন বিছানায় ছিলাম, সারাক্ষণ রিমোট হাতে টিভি চ্যানেলগুলোতে চোখ ছিল। মনে মনে নানা খেলা খেলতাম বিভিন্ন চ্যানেলের নানা অনুষ্ঠান নিয়ে। হিন্দি সিরিয়ালগুলো এক সময় অনেক দেখতাম। তারা এমনভাবে পর্বগুলো তৈরী করে যে, এক পর্ব দেখলে পরের পর্ব দেখতে ইচ্ছে করে।
 
যদিও হাসি পায় অভিনেতা-অভিনেত্রীদের পোশাক আর সাজগোজ দেখে। রাতে বিছানায় যাওয়ার সময়ও তাদের যে পোশাক ও মেক-আপ নেওয়া থাকে, বিয়ের দাওয়াতে যেতে গেলেও তা বাড়াবাড়ি সাজ বলে গণ্য হবে অনেকের কাছে।
 
তাদের পোশাকের ও সাজের কারণে কোন দৃশ্যই মনে দাগ কাটে না। তারপর আবার বজ্রপাতের শব্দ চলে বিভিন্ন সময়। নানু একদিন জিজ্ঞেস করেন, কীরে নাতিন, ঠাডা পড়ে ক্যান?
 
কিছুদিন ধরে আমাদের কিছু নাটকেও তেমন দেখছি। অদ্ভূত সব পোশাক ও সাজসজ্জা নিচ্ছেন কেউ কেউ। অথচ আমাদের নাটক নিয়ে বরাবরই আমরা গর্ব করেছি যে, এগুলো জীবনের কথা বলে, বাস্তব তুলে ধরে।
 
বাস্তবে বাংলাদেশের কোনো গৃহবধূ এমন উৎকট সাজ নেয় কিনা জানি না। তাদেরতো ঘর-বর-শ্বশুরবাড়ি-বাপেরবাড়ি সামলে সামলে ত্রাহিদশায় দেখি। বিনামূল্যে অমূল্য সব দায়িত্ব পালন করেন আমাদের সবার মা, খালারা।
 
কলকাতার একটি চ্যানেলে রাতে বিজ্ঞাপন হচ্ছিল। ঝানু এক সিনিয়র অভিনেত্রীকে দেখলাম, বসে বসে একটি পন্যের নানা গুণগান করছেন। নামমাত্র সাইজের স্লিভলেস ব্লাউজ পরেছেন তিনি এবং তার সুউচ্চ ভূড়ি স্বচ্ছ শাড়ির কারণে টিভি পর্দা জুড়ে শোভা পাচ্ছিল।
 
তার কনফিডেন্স দেখে মুগ্ধই হয়েছি। তিনি অবশ্যই নজর কাড়ছিলেন, তবে সেটা তাকে সুন্দর লাগছিল বলে হয়তো নয়, পোশাকের কারণে হতে পারে।
 
* পোশাক সংক্ষিপ্ত হলেও তা সবসময় অশ্লীল হয় না নিশ্চয়ই।
 
গুলশানে বিএনপি নেতা খালেদা জিয়ার অফিসের কাছাকাছিইতো রয়েছে পার্ক। একদিন এ্যাসাইনমেন্টের বেশ আগে পৌঁছে যা্ওয়ায় সিএনজি ছেড়ে দিলাম, পার্কের ভেতর দিয়ে হেঁটে এগুচ্ছি।
 
দেখলাম, এক অল্পবয়সী হবু-মা ঢোলা ও সংক্ষিপ্ত পোশাকে আস্তে আস্তে হাঁটছেন। বাতাসে শরীরের নানা অংশ অনাবৃত হয়ে যাচ্ছে মাঝে মাঝে। ক্লান্ত মা একটু জিরিয়েও নিচ্ছিলেন।  
 
গর্ভবতী অবস্থায় সংক্ষিপ্ত এই পোশাক তিনি অতি-ফ্যাশন বা উগ্রতা থেকে পরেন নি। গর্ভবতী মায়েদের জন্য অসুবিধাজনক পোশাক শাস্তির মতো। তাই একটু আরামদায়ক ও ঢোলাঢালা পোশাকে খোলামেলা জায়গায় হাঁটার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
 
অল্পবয়সী ও মিষ্টি চেহারার এই মায়ের আরামের পোশাকটি মোটেই অশ্লীল লাগছিল না। বরং সেই মায়ের চোখে-মুখে এক প্রশান্তি ও স্বর্গীয় সৌন্দর্য ছিল, মায়াকাড়া চোখগুলো থেকে চোখ ফেরাতে পারছিলাম না।
 
* পরিবেশ, আবহাওয়াসহ অনেক কিছুর ওপর পোশাক পছন্দ নির্ভর করে।
 
ইদানিং কম পোশাক, স্বচ্ছ পোশাকই অনেক মেয়ের কাছে ফ্যাশনের মূল উপকরণ মনে হচ্ছে নাকি বুঝতে পারছি না?

অনেককেই দেখি খুব বেশি চিপাচাপা ড্রেস পরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কারও আবার পোশাক এমন যে, শরীরের যে অংশগুলো ঢেকে রাখার কথা, তারা সেই অংশগুলোই আরও দৃশ্যমান করার চেষ্টা করছেন।
 
আসলেই তাকে কেমন দেখাচ্ছে তা নিয়ে মাথা ব্যথা নেই। যেহেতু সবাই অদ্ভূত চোখে তাদের দ্যাখে, তারা মনে করেন খুব যেন সুন্দর, স্মার্ট দেখাচ্ছে!
* যারা কাজের সুবিধার্থে এসব পরেন, তাদের কথা অবশ্যই আলাদা। তাদেরকে কমফোর্ট জোনে থাকতেই হয়।
 
যে ভদ্রমহিলা সৎ জীবন যাপনের চেষ্টায় মাথায় ইটের ঝাঁপি নিয়ে দুই হাতে ধরে থাকেন, তার শরীরের অনাবৃত অংশ কি অশ্লীল দেখায়? কখনোই না। কোমরে শাড়ি গুঁজেই তাকে কাজ করতে হবে কাজের সবিধার্থে, নিরাপত্তার খাতিরে।
 
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নারী সদস্যদের পোশাক কখনোই অশ্লীল নয়, তা পরতেই হয় তাদের।
 
* কেউ কেউ কাজের ছুঁতোয় আজব পোশাক পরেন। অফিস নাকি ডিমান্ড করে। কোনো কাজেই অশালীন পোশাক পরার বাধ্য-বাধকতা আছে বলে আমার জানা নেই। যে অফিস কাজের চেয়ে রুচিহীন পোশাকের গুরুত্ব বেশি দেয়, সেই অফিস আসলেই কতটা সুবিধাজনক- সেটা একবার ভাবা উচিৎ।
 
অনেকেই ফর্সা সুন্দর পা বলে গোড়ালির অনেকখানি উপরে পাজামা বা সালোয়ার বা ক্যাপ্রি পরেন।

পেটের ত্বক সুন্দর বলে শাড়িটা এমনভাবে পরেন কেউ কেউ, যেন সুস্পষ্টভাবে সৌন্দর্যটা বোঝা যায়!
 
পিঠের অবাঞ্চিত রোম তুলে তা বেশ মসৃন করেন অনেক আধুনিকা। এত ঝামেলা করে পিঠ পরিস্কার করেছেন, সৌন্দর্যটা জনগণকে দেখাতে তাই পিঠখোলা বা আধা ঢাকা পোশাক পরছেন।  

* শুধু মেয়েরাই কেন, কিছুদিন আগেও কোনো কোনো ছেলেকে দেখতাম, প্যান্ট পরেছে নিতম্বের অর্ধেক মাত্র ঢেকে। তাকানো যেত না কারও কারও দিকে। এখন অবশ্য সেভাবে দেখা যায় না।
 
রোমশ বুক দেখাতে গরমের ছুঁতায় অনেকেই শার্টের বোতাম ক’টা খুলে রাখতে পছন্দ করেন। দাম দিয়ে ছেঁড়া প্যান্ট কেনেন তারা, বা পায়ের অনেক খানি নিচে পড়ে থাকা লম্বা প্যান্ট সবই আধুনিকতা অনেকের কাছে।
 
যাদের দুই বাহুর আকার বেশ আকর্ষনীয়, তারা তেমন পোশাকই বেছে নিচ্ছেন, যা পরলে ফোলা পেশীর সৌন্দর্য চোখে পড়বে।
 
* অফিস যাতায়াতের সময়টিতে একাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে-মেয়েদের দেখি। ভীষণ সুন্দর আর মিষ্টি মায়াবি চেহারা তাদের। কিন্তু অনেকেই অদ্ভূত পোশাক ও সাজসজ্জায় বদলে দিয়েছেন নিজ সৌন্দর্য।
 
যতদূর বুঝি,  পোশাকে মানুষের রুচি, মানসিকতা ও পরিবারের দেওয়া শিক্ষা প্রকাশ পায়। আরামদায়ক, রুচিশীল, পরিচ্ছন্ন পোশাক পরাই স্বাস্থ্যকর।
 
শুধু ফ্যাশনের নামে কম কাপড় পরা বা নামমাত্র কাপড় পরা বা শরীর অনাবৃত রাখাই যদি ফ্যাশন হয়, তাহলে অন্য প্রাণীরাই বরং বেশি ফ্যাশন সচেতন। কারণ তারাতো কাপড়ই পরে না! মানুষের সঙ্গে তাদের অন্যতম প্রধান পার্থক্যও রয়েছে এখানে!

বাংলাদেশ সময়: ০১০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।