ভালুকা থেকে ফিরে : জল-জলাভূমি কমে যাওয়ায় গ্রামাঞ্চলে জলচর পাখি পানকৌড়ি হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ বিরল। এক সময় ময়মনসিংহ অঞ্চলে ছিল পানকৌড়ির উজ্জ্বল উপস্থিতি।
এ উপজেলার তেঁতুলিয়া, আমিড়িবিলে ঝাঁকে ঝাঁকে পানকৌড়ির দেখা মেলে। নিরাপদ স্বভাবের এ পাখির কলতানে মুখর হয়ে উঠেছে গ্রামগুলো। শীত বা গ্রীষ্ম বলে কথা নেই সারা বছরই পানকৌড়ির আনাগোনায় অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে এসব বিল।
স্থানীয় গ্রামের বাসিন্দা কিংবা পথচারীদের চলাচলে চকচকে কালো রঙের এ পাখির অবস্থানের ছন্দপতন ঘটে না। স্থানীয় এলাকার লোকজন ঠোঁট লম্বা ও সামনের দিকে কিছুটা বাঁকানো এ পাখিকে ‘পাইন্না কাক’ কিংবা ‘পাইন্না কাওয়া’ নামে ডাকে। ঝাঁক বেঁধে ডুব দিয়ে পোনা মাছ খাওয়া এ পাখিটির স্বভাব বৈশিষ্ট্য।
ময়মনসিংহ জেলা সদর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরের উপজেলা ভালুকা। এ ভালুকা উপজেলা সদর থেকে আরো ২৫ কিলোমিটার দূরের দু’গ্রাম পুরুড়া ও আমিড়ি। এ দু’গ্রামের বিলসহ আরো বেশ কয়েকটি বিলে পানকৌড়িদের উড়ে বেড়াতে দেখা যায়। স্থানীয় লোকজনও এ পাখিদের বিরক্ত না করে নিরাপদে আগলে রাখে।

উপজেলার দ্বিতপুর ইউনিয়নের পুরুড়া এলাকার কাঁচামাল ব্যবসায়ী ফারুক আহমেদ (৩৫) জানান, ‘পুরুড়ার পানকৌড়িদের বিশেষত্ব রয়েছে। বছরের পর বছর এরা বিলের মৎস্য খামারে নিজেদের আবাসস্থল গড়ে তুলেছে। ঝাঁক বেঁধে এদের উড়ে বেড়ানোর দৃশ্য দেখতে ভালো লাগে। ’
স্থানীয় তেঁতুলিয়া বিলে পানকৌড়িদের আনাগোনা দেখে পথ চলতে গিয়ে আলাপ হয় বিলের পাশেই লাটিম খেলতে থাকা স্থানীয় হাইস্কুল ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দু’ শিক্ষার্থী আশিক (১৩) ও আব্দুল কাদের জিলানী (১৫) এর সাথে। তারা জানান, ‘প্রায় শতাধিক পানকৌড়ি প্রতিদিন বিলের মধ্যে মাঁচার উপর দলবেঁধে বসে থাকে। ওরা ছোট ছোট পোনা মাছ খায়। আমরা এ পাখিকে ‘পাইন্না কাঁক’ নামে ডাকি। ’
স্থানীয় মল্লিকবাড়ি এলাকার বাসিন্দা জুয়েল (৩০) জানান, ‘পানকৌড়িগুলো মাছ ধরার পর বেশিরভাগ সময়েই পানি থেকে উঠে এসে মাঁচার উপর ডানা মেলে রোদ পোহায়। ’
তিনি জানান, পানকৌড়ির খাবার তালিকায় আছে ছোট ও মাঝারি মাছ। শিং, টাকি, ছোট শামুক, জলজ কীটপতঙ্গ, পোকামাকড় ও ছোট জলসাপ ইত্যাদি। পাবদা-সরপুঁটিও রয়েছে এ জলচর পাখির প্রিয় খাবারের তালিকায়। এদের খিদের পরিমাণ অনেক বেশি। বিশেষ করে ছোট পানকৌড়িদের অনেকটাই খাই খাই ভাব।
ভালুকা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রুমানা শারমিন বলেন, ‘জলাশয় কমে যাবার কারণে পানকৌড়ি পাখির সংখ্যা কমে আসছে। কিন্তু নিরাপদ আশ্রয়ের কারণেই এ পাখি ভালুকার এসব বিলে দীর্ঘ সময় যাবত অবস্থান করছে। বিরল প্রজাতির এ পাখি শিকার না করে সংরক্ষণে সহায়তা করার জন্য আহবান জানান। ’
বাংলাদেশ সময়: ০৮০০ ঘণ্টা, মার্চ ০২, ২০১৪