ঢাকা, রবিবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৮ মে ২০২৫, ২০ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

রাশি রাশি আবর্জনায় হাসি!

ফটো: নূর-এ আলম; ক্যাপশনস্টোরি: আসিফ আজিজ, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩:৪৫, মার্চ ৫, ২০১৪
রাশি রাশি আবর্জনায় হাসি! ছবি : নূর / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শ্রীমঙ্গল থেকে ফিরে: সুন্দরের পসরা সাজিয়ে বসে আছে শ্রীমঙ্গল- এমন ধারণা নিয়ে পা রেখেছিলাম চায়ের দেশে। কিন্তু প্রথম দিনই মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল স্কুল, কলেজ আর মসজিদের পাশে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড় দেখে।

আবর্জনা স্তূপের কাছাকাছি গিয়ে দেখা পেয়েছিলাম আরেক ভিন্ন জগতের।

আবর্জনার ভিতর কুকুর, চিল, কাকের পাশপাশি পাওয়া গেল দুটি শিশুকে। একজনের বয়স ৮, একজনের ৬। দুই ভাই-বোন তারা। এই নোংরা, দুর্গন্ধ, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেই তাদের নিত্যদিনের কালগোনা।

সম্বল তাদের একটি বস্তা আর একটি কোদাল। উসুখুস চুল। চোখে-মুখে ছোপ ছোপ ময়লা। হলুদ দাঁত। ভন ভন মাছির সঙ্গে হাঁটুতে থুতনি রেখে একমনে খুঁজে চলেছে অমূল্য রতন! যদি পাওয়া যায় কোনো কাচের বোতল, প্লাস্টিক, লোহার টুকরো কিংম্বা খাওয়ার অযোগ্য কোনো খাবার!

শীতের শেষ বিকেলে একটি উলের টুপি পেয়ে দুভাই-বোনের মুখে ফুটলো হাসির ফোয়ারা। অকৃত্রিম সে হাসি। যেন এটাই তাদের অমূল্য ধন, বেঁচে থাকার অন্যতম উপকরণ।

বয়সটা তাদের স্কুলে যাওয়ার। দুশো গজ দূরের স্কুলে যখন সারি বেঁধে যায় শিশুরা, তখন অবুঝ এই শিশু দুটির চোখ জ্বল জ্বল করে কালো ময়লার স্তূপে। পরিবারে মায়ের পেশাও তাদের মতোই। এই বয়সেই তারা পেশাজীবী! ময়লা থেকে ‘রত্ন’ কুড়ানো পেশা!

পাশের কুকুর আর শিশুটি যেন দুজন দুজনের প্রতীকী রূপ। তাদের গন্তব্য একই। একই তাদের উদ্দেশ্য। পার্থক্য শুধু নাম, প্রজাতিতে।

এভাবেই চলছে তাদের জীবন, হয়তো চলবে এভাবেই। শত কষ্টেও হাসিমুখ রেখে কাজ করে যাবে এই অবুঝ শিশুরা। কোনো নিয়ম, আইন মানে না এদের জীবনযাপন। নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার তাগিদ জন্ম থেকেই। রঙিন আবর্জনার মতো জীবনটা রঙিন নয় তাদের। তবু কখনো গোমড়া মুখ, কখনো এই আবর্জনাই তাদের উৎস রাশি রাশি হাসির।

বাংলাদেশ সময়: ০৩৪০ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।