ঢাকা: শুধু বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানে মনোযোগ নয় জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতের প্রতি সরকার ও সংশ্লিষ্টদের নজর দেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে প্রতিবেশি ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর সহযোগিতা দরকার।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিটের সাংবাদিক রফিকুল বাসার বাংলানিউজের ‘কীভাবে দেখছেন বিদ্যুতের দাম বাড়ানো’ শীর্ষক নাগরিক মন্তব্যে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেছেন।
বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সমন্বয় করে চলতে হবে। প্রয়োজন হলে দাম বৃদ্ধি করতে হবে। তবে বর্তমানে যে কারণগুলো দেখিয়ে দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে তা যথোপযুক্ত নয়।
তার মত, বিতরণ কোম্পানিগুলো লোকসান ছাড়া চলতে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন দেখিয়েছেন বিইআরসির (বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেশন কমিশন) পর্যবেক্ষকেরা তার চেয়ে বেশি দাম নির্ধারণ করেছে বিইআরসি। এর ফলে কোনো কোনো কোম্পানি লাভ করছে।
কীভাবে বিদ্যুৎ খাতের সমস্যা সমাধান করা যায়-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, দুর্নীতি, সিস্টেম লস রোধ ও ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন যথাযথভাবে করার মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের আংশিক সমস্যা সমাধান সম্ভব।
তিনি জ্বালানি নিরাপত্তা ইস্যুটিকে বড় সমস্যা হিসেবে দেখছেন। জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে জ্বালানির দাম দোদুল্যমান অবস্থায় থাকবে বলে মন্তব্য তার।
তিনি বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে আন্দোলন চলছে, একই সঙ্গে উন্নত দেশগুলোতে এ নিয়ে উন্নত বাণিজ্য রয়েছে। আবার আমাদের মতো জ্বালানি, অর্থ, ও মেধার ঘাটতির দেশে এগুলো (জীবাশ্ম জ্বালানি) ব্যবহারের প্রয়োজন রয়েছে। এ কারণে আমাদের সামগ্রিক অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত প্রেক্ষাপট ও আঞ্চলিক বিষয় বিবেচনা করে আজই জ্বালানির বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে।
তিনি মনে করছেন, ১০-১৫ বছর পর গ্যাস ফুরিয়ে যাবে। ততদিনে জলবায়ু ইস্যুতে আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে কয়লা ব্যবহারের ওপর বিধি-নিষেধও আসতে পারে। এসব বিষয় বিবেচনা করে আমাদের দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এ সমস্যা কাটিয়ে উঠার চেষ্টায় বিশ্ব ব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, জাইকার মতো উন্নয়ন সহযোগী ও ঋণদাতা সংস্থাগুলোর ইচ্ছেমত এড়িয়ে যাওয়া উচিত হবে না বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, এসব সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে এবং আঞ্চলিক সহযোগিতাকে ব্যবহার করে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আর যতদিন পর্যন্ত জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত না হবে ততদিন আমাদের জ্বালানির দাম দোদুল্যমান থাকবে, কখনও বাড়বে আবার কখনও স্থির থাকবে।
জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে বিদ্যুৎ বা জ্বালানি সেবা, এ খাতে বিনিয়োগ যেমন আমাদের মনোঃপুত হবে না, তেমনি এটি আমাদের শিল্প হিসেবেও মনোঃপুত হবে না, বলেন তিনি।
দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিটে কর্মরত এ সাংবাদিক বলেন, বাংলাদেশ এককভাবে সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। আমাদের প্রতিবেশী কোনো দেশের একার পক্ষে সম্ভব নয়। যৌথভাবে উদ্যোগ নিতে হবে।
যৌথ উদ্যোগের উদাহরণ হিসেবে ভারতের সঙ্গে বিদ্যুৎ উৎপাদনের চুক্তি ও কোম্পানি গঠনের কথা বলেন তিনি। চীনের সঙ্গেও যৌথভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগের প্রশংসা করে রফিকুল বাসার বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে এমন উদ্যোগ নেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। তারা আমাদের চেয়ে মেধাবী, তারা যেনো আমাদেরকে হারিয়ে না দেয়। আমাদেরকে আমাদের অধিকার, প্রাপ্তির জায়গাটা যথাযথভাবে নিশ্চিত করতে হবে।
দুর্নীতি কমলে বিদ্যুতের দাম কমে, নাগকিরকের এমন মন্তব্যকে আংশিক সত্য বলে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেশন কমিশন (বিইআরসি)-এর সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ বাংলানিউজকে যে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন তা সমর্থন করেছেন রফিকুল বাসার।
কিন্তু বিদ্যুতের দাম নিয়ন্ত্রণে বিইআরসির ক্ষমতা ও অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ের সেলিম মাহমুদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন তিনি।
রফিকুল বাসার বলেছেন, বিদ্যুতের দাম নিয়ন্ত্রণে (বিইআরসি)-এর আদতে কার্যকর কোনো ক্ষমতা আছে কিনা তা নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে।
অভিযোগ পেলে বিইআরসি ব্যবস্থা নেবে, সেলিম মাহমুদের এমন মন্তব্যে বাশার বলেছেন, এমন কোনো নজির পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১৪
** বিদ্যুতের দাম বাড়তেই থাকবে
** বিদ্যুতের দাম আরও বাড়বে
** মূল্যবৃদ্ধি কখনও কখনও প্রাসঙ্গিক
** বিদ্যুত ও কৃষি একটি অন্যটির পরিপূরক
** সৌরবিদ্যুৎ বড় ভুমিকা রাখতে পারে না
** সঠিক ব্যবস্থাপনায় বিদ্যুতের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব
** বিনিয়োগের টাকা দ্রুত তুলতেই দাম বাড়ানো
** কম খরচে স্থায়ী কেন্দ্র হচ্ছে না
** বিদ্যুতের সিস্টেম লস কমানো জরুরি