ঢাকা: ক্রিকেট বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। তাই দল নির্বাচনে রাজনীতিমুক্ত দৃষ্টিভঙ্গি অপরিহার্য।
শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বাংলানিউজের ‘কেমন ক্রিকেট চাই’ শীর্ষক নাগরিক মন্তব্যে অংশ নিয়ে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এই মন্তব্য করেন।
সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এই টানা আয়োজনে ফোন ও ই-মেইলে অকপটে টাইগারদের কাছে প্রত্যাশা তুলে ধরেন দেশ-বিদেশের হাজারো পাঠক। দেন মূল্যবান পরামর্শও।
একই সঙ্গে বাংলাদেশ ক্রিকেট এবং টাইগারদের নিয়ে পাঠকের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট ক্রীড়া লেখক ও বিশ্লেষক অঘোর মন্ডল।
যুক্তরাজ্য প্রবাসী মাহবুবুর রহমান বলেন, রাজনীতি বা বাইরের কোনো শক্তি যেন আমাদের ক্রিকেটকে নষ্ট করতে না পারে, তা আমাদের খেয়াল রাখা জরুরি। দলের খেলোয়াড় নির্বাচনেও বিষয়টি আমাদের মাথায় রাখা উচিত।
তার সঙ্গে একই মত দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার তাজিম হোসেন তপু, আদিত্য আদিল এবং রিয়াজ হোসেনও।
ক্রিকেট বোর্ডে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব রয়েছে অভিযোগ করে রিয়াজ বলেন, ক্রিকেট সার্বজনীন খেলা। এখানে কোনো দলাদলি থাকতে পারেনা। ক্রিকেট বোর্ড থেকে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব উচ্ছেদ করতে হবে।
নিরপেক্ষ এবং নির্দলীয় ক্রিকেট বোর্ড গঠন করা হলে দেশের ক্রিকেট দল একদিন বাংলাদেশের সুনাম বয়ে আনবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আরেক তরুণ তাজিম হোসেন তপু বলেন, টাইগারদের আরও আত্মবিশ্বাসী এবং দল গঠনের ক্ষেত্রে অধিনায়কের মতামত নিতে হবে।
খেলায় হারজিত রয়েছে উল্লেখ করে আদিত্য আদিল বলেন, আমরা চাই বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম ইতিবাচক খেলাটাই খেলুক। তাতে হারলেও সমস্যা নেই। হারজিত খেলারই অংশ। তবে দিন শেষে ইতিবাচক খেলাটা দরকার।
রাজনীতির নোংরা আঁচড় থেকে ক্রিকেটকে বাঁচিয়ে রাখার আহ্বান জানিয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সাংবাদিক শহীদুল আলম ইমরান বলেন, ম্যাচে জয় পেতে হলে ধারাবাহিকতা প্রয়োজন, যা আমাদের ক্রিকেটারদের নেই।
তিনি বলেন, সদ্যসমাপ্ত এশিয়া কাপে ভালো খেলেও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। এর কারণ জানা না থাকলেও উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম টাইগারদের দলে কিছু একটা হয়েছে!
এদিকে দলীয় কোন্দলের কারণে টাইগাররা ভালো খেলতে পারেন না বলে অভিযোগ করেছেন সিলেট নগরীর ওসমানীনগরের ব্যবসায়ী রতন।
কোন্দল বলতে তিনি দলের সাবেক ও বর্তমান অধিনায়কদের মধ্যে মতপার্থক্যকে বুঝিয়েছেন। তার মতে, এ মতপার্থক্যে খেলায় প্রভাব ফেলছে।
ইতিবাচক সংবাদ প্রচার করতে মিডিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়ে রতন বলেন, টি-টোয়েন্টিতে টাইগারদের জন্য মুভ কামনা রইল, যেন তারা বোলিং-ফিল্ডিংয়েও ভালো করেন।
তবে ভালো-মন্দ যাই হোক মিডিয়াকে ইতিবাচক মনোভাব নিয়েই সংবাদ প্রকাশ-প্রচার করতে হবে।
জানতে চাইলে বিশিষ্ট ক্রীড়া লেখক ও বিশ্লেষক অঘোর মন্ডল বলেন, ক্রিকেট রাজনীতি, ক্রিকেট, কূটনীতি এসব তার নিজস্ব জায়গাতেই থাকবে। মুখে যতই বলি যে খেলাধুলা বা ক্রিকেটকে রাজনীতিমুক্ত রাখতে হবে। কিন্তু আদৌ তা সম্ভব নয়।
অলিম্পিক গেমসের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, অলিম্পিক গেমসও রাজনীতি মুক্ত হতে পারেনি। ভবিষ্যতে পারবে বলে আশা করা যায় না। তবে এ রাজনীতির প্রভাব দলের ওপর যাতে না পড়ে সে বিষয়ে নজর রাখা উচিত। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক সত্য, মুখে সব খেলাকে রাজনীতিমুক্ত রাখার কথা বললেও সেটা আমরা রাখতে পারি না।
ক্রিকেটকেও রাজনীতিমুক্ত করতে পারিনি মন্তব্য করে অঘোর মন্ডল বলেন, ক্রিকেটকে রাজনীতিমুক্ত করতে পারলে নিরেট ক্রিকেট সংগঠকদের আমাদের ক্রিকেট অঙ্গনে উদ্বাস্তুর মত ঘুরে বেড়াতে হত না।
‘এরপরও আমরা আশাবাদী’ জানিয়ে তিনি বলেন, দলীয় রাজনীতি থেকে মুক্ত থাক আমাদের ক্রিকেট, দল আর খেলোয়াড়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৬ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১৪