ঢাকা, রবিবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৮ মে ২০২৫, ২০ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

জিয়ার অন্তর্ভুক্তি দাবি অযৌক্তিক নয়, বিদেশিদের লিগে খেলাতে হবে

আসিফ আজিজ, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:৩১, মার্চ ১৪, ২০১৪
জিয়ার অন্তর্ভুক্তি দাবি অযৌক্তিক নয়, বিদেশিদের লিগে খেলাতে হবে

ঢাকা: নিরঙ্কুশ ক্রিকেটীয় বিনোদন টি-টোয়েন্টির বিশ্ব আসর বসছে ঢাকায়। মাঝে বাকি মাত্র দুটো দিন।

টাইগাররা এবার স্বাগতিক দল। দেশের মানুষের প্রত্যাশা তাই অনেক বেশি। দেশের মাটিতে অনুষ্ঠেয় টি-টোয়েন্টি ও বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে কি ভাবছেন ভাবছেন দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা, কি প্রত্যাশা, চাওয়া-পাওয়া তাদের?

এসব বিষয় নিয়ে সমর্থক ও ক্রিকেটামোদীদের নানা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন বিশিষ্ট ক্রীড়া বিশ্লেষক অঘোর মন্ডল। শুক্রবার বাংলানিউজের বিশেষ আয়োজন ‘কেমন ক্রিকেট চাই’ শীর্ষক নাগরিক মন্তব্যের নির্ধারিত সময়ে নিউজরুমে সরাসরি উপস্থিত ছিলেন তিনি।

জিয়াউর রহমানকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলে কেনো রাখা হয়নি কেন? গাজীপুর থেকে তুহিন রহমানের এ প্রশ্নের জবাবে অঘোর মন্ডল বলেন, এ সিদ্ধান্ত একান্তই জাতীয় দলের নির্বাচকদের। উত্তরটা তারাই ভালো দিতে পারবেন। কিন্তু টি-টোয়েন্টি ম্যাচে জিয়া খুবই কার্যকর একজন খেলোয়াড় বলেই আমি মনে করি। ইতোমধ্যে এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিনি যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছেন। জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ দলের জন্য একজন কার্যকর অলরাউন্ডার।

দলে নাসিরের অবস্থান নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি সরকারি কলেজের ছাত্র মনসুর আলমের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, নাসির হোসেনের খেলার ধরন দেখে মনে হচ্ছে কোথাও না কোথাও সমস্যা আছে। সেটা মানসিক কিনা তা বলতে পারবেন দলের মনোবিদ। তবে সেটা মানসিক নাকি শারীরিক, না ক্রিকেটীয় তা দূর থেকে দেখে বোঝা যায় না। তবে নাসিরের পারফরমেন্সে কিছু একটা ঘাটতি পরিষ্কার। হয়তো সেটা মনোযোগের ঘাটতি।

প্রশ্ন আসে ক্রিকেট বোর্ড নিয়েও। লন্ডন প্রবাসী ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়ার এ বিষয়ক প্রশ্নের জবাবে অঘোর মন্ডল বলেন, যারা বাংলাদেশ ক্রিকেটকে এগিয়ে নিতে পারবেন, বাংলাদেশের মানুষকে ক্রিকেট নিয়ে স্বপ্ন দেখাতে পারবেন এবং সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার ক্ষমতা যাদের আছে সে রকম সংগঠকদেরই ক্রিকেট পরিচালনায় থাকা উচিত। দল ব্যর্থ হলে দায়টা শুধু ক্রিকেটারদের দেওয়া ঠিক নয়। ক্রিকেটারদের কাজে পেশাদারিত্ব দাবি করতে পারে শুধু একটি পেশাদার বোর্ড-ই। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড কতটা পেশাদার তাদের কার্যক্রমে সেই প্রশ্নটা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সাফল্য পেতে দল হিসেবে খেলাটা টাইগার দলের জন্য ভালো হবে, নাকি আলাদাভাবে ভালো করাটা গুরুত্বপূর্ণ? যদি দল হিসেবেই জিততে হয়- তাহলে টাইগার দলে সেই মানসিক শক্তি আছে কিনা?

শুক্রবার বাংলানিউজের নাগরিক মন্তব্যে অংশ নিয়ে এমনটি জানতে চান সুব্রত দিব সাহা। একইসঙ্গে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অতীত টি-টোয়েন্টি ব্যর্থতা, বাছাই পর্বে খেলে মূল পর্বে যাওয়া প্রসঙ্গ ও কোনো ম্যাচে টাইগার বোলারদের বেশি রান খরচা নিয়ে প্রশ্ন করেন সুব্রত।

তার প্রশ্নের জবাবে ক্রীড়া বিশ্লেষক অঘোর মন্ডল বলেন, অবশ্যই বাংলাদেশকে দল হিসেবে খেলতে হবে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যে কোনো ম্যাচ একজন খেলোয়াড়ই জেতাতে পারেন। তবে সে রকম মানের ক্রিকেটার বাংলাদেশ দলে আছে কিনা সেটা আমার নিজেরও প্রশ্ন। এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ভালো করেছিলো ২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায়। এবারও ভালো করতে হলে দল হিসেবে খেলতে হবে বাংলাদেশকে। তাছাড়া, এই দলে ক্রিস গেইল বা শহিদ আফ্রিদির মতো কেউ নেই, যিনি একাই ম্যাচ বের করে দিতে পারেন।

অঘোরের মতে, যে দলটা এর আগে চার চারবার ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টি মূল পর্বে সরাসরি খেলেছে, তাদের এবার বাছাইপর্বে খেলতে হচ্ছে- এমনটা অবশ্যই অপমানজনক।

কোচ নিয়ে গার্মেন্টস কর্মকর্তা মোহাম্মদ তুহিত আহম্মেদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শেন জার্গেনসন একেবারে ব্যর্থ তা হয়তো বলা যাবে না। তার কোচিংয়ে এর আগে বাংলাদেশ খুব খারাপ ক্রিকেট খেলেনি। ২০১৫ বিশ্বকাপ পর্যন্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জার্গেনসনকে। এরপর বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব কাকে দেওয়া হবে সেই চিন্ত এখন থেকেই করা উচিৎ বিসিবির। বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন সাবেক ক্রিকেটার-আমিনুল ইসলাম বুলবুল, মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু এখন বিদেশে কোচিং করাছেন। আমাদের ক্রিকেটাররাও যে ভাল কোচ হ্তে পারেন সে প্রমাণ তারা রাখছেন।

বিদেশি কোচ আনার পাশাপাশি দেশি কোচদের উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি বিসিবির চিন্তা করা উচিত বলেও অভিমত এই ক্রিকেট বিশ্লেষকের।

ঘরোয়া ক্রিকেট লিগে বিদেশি তারকা ক্রিকেটারদের খেলানোর পরামর্শ দিয়েছেন ক্রীড়া বিশ্লেষক অঘোর মন্ডল। ঢাকার চাকরিজীবী ওয়াহিদুজ্জামানের করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ পরামর্শ দেন।

এ ক্রীড়া বিশ্লেষক বলেন, এক সময় আমাদের ঘরোয়া লিগে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার ওয়াসিম আকরাম, সনাৎ জয়সুরিয়া, অর্জুনা রানাতুঙ্গা, নেইল ফেয়ারব্রাদারের মতো উঁচু মানের ক্রিকেটাররা খেলেছেন। এর ইতিবাচক প্রভাবই পড়েছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটে। ওই সময় ঘরোয়া ক্রিকেটেও ৩০ থেকে ৪০ হাজার দর্শক মাঠে খেলা দেখতে আসতেন। ওটাই ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটের বড় সম্পদ। টেস্ট স্ট্যাটাস প্রাপ্তির পেছনেও দর্শক ছিল বড় ফ্যাক্টর। কিন্তু এখন সেই ঘরোয়া ক্রিকেট রং হারিয়েছে। ঢাকার লিগে গ্যালারি থাকে ফাঁকা। দর্শক টানার নতুন চিন্তাও কেউ করেন না। যে কারণে কেনিয়া-জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটারদের এনে খেলানো হচ্ছে।

আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে এশিয়া কাপে ম্যাচ হারা বিষয়ক প্রশ্নে তিনি বলেন, টি-টোয়েন্টি একেবারেই ভিন্ন ফরম্যাটের খেলা। নতুন একটা টুর্নামেন্ট।

আফগানিস্তানের সঙ্গে এশিয়া কাপের হার ভুলে বাংলাদেশ ভালো খেলবে এটা আশা করা যায়। আমরা বিশ্বাস করি বাংলাদেশ আফগানিস্তানের চেয়ে ভালো দল। অভিজ্ঞতাও বেশি টাইগার দলে। ও রকম একটা দলের কাছে হারলে সেটা ক্রিকেটীয় অঘটনই হবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মণ্ডল মোহাম্মাদ আরিফের দলের নেতৃত্বে পবিরবর্তন বিষয় প্রশ্নে তিনি বলেন, এখনো মুশফিকের পরিবর্তনের সময় হয়নি। তিনি উইকেটের পেছনে বা সামনে পারফর্ম করছেন। কিন্তু তার দল পারফর্ম করছেন না। এখন বিষয়টি হলো এই, মুশফিকের বিকল্প তৈরি করতে হবে।

দলের ফিল্ডিং বিষয়ে ই-মেইলে মাহমুদুর রহমান ভুঁইয়ার প্রশ্নের জবাবে অঘোর মন্ডল বলেন, ক্রিকেটে ব্যাটিং বোলিং ফিল্ডিং তিনটিই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই তিনটার ভিতর ফিল্ডিংয়ে দ্রুত উন্নতি করা সম্ভব। ফিল্ডিংয়ে উন্নতি করার একটাই শর্ত। প্রাকটিস, প্রাকটিস এবং প্রাকটিস.....। ক্রিকেট বিশ্বে যারা ভালো ফিল্ডার তারা অন্যদের চেয়ে ফিল্ডিংয়ে অনেক বেশি সময় ব্যয় করেন। ফিল্ডিয়ে উন্নতিতে দরকার বাড়তি পরিশ্রম।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২২ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।