ঢাকা: সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিদ্যুতের মূল্য ভোক্তার সাধ্যের মধ্যে রাখা সম্ভব বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি স্পেশালিস্ট সাংবাদিক রফিকুল বাসার।
বুধবার বাংলানিউজের ‘কীভাবে দেখছেন বিদ্যুতের দাম বাড়ানো’ শীর্ষক নাগরিক মন্তব্যে অংশ নিয়ে পাঠকের করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
মালয়েশিয়া প্রবাসী বিলাল হোসেন প্রশ্ন করেন, ‘প্রশাসনকে হাতে রাখতে তাদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করতে সরকার নাগরিকদের ওপর বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির আড়ালে অন্যায্য কর আরোপ করে চলেছে-এমন অভিযোগ সঠিক কিনা?’।
তার এ প্রশ্নের জবাবে রফিকুল বাসার বলেন, প্রশাসনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বেতন বাড়ানোর বিষয়টিই কেবল বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কারণ নয়, সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবও এর অন্যতম কারণ। সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আসলে সবখাতেরই পরিচালন খরচ কমানো যেতে পারে। এদিকে কর্তৃপক্ষের খেয়াল খুবই কম।
বিলাল হোসেনের আরেকটি প্রশ্ন ছিল, ‘শ্রমের মূল্য না বাড়লে বিদ্যুতের মূল্য বাড়বে কেন?’
তার এ প্রশ্নের জবাবে স্পেশালিস্ট সাংবাদিক রফিকুল বাসার বলেন, প্রশ্নটা যৌক্তিক। তবে, বিদ্যুতের সঙ্গে শ্রমের মূল্যও জড়িত। বিদ্যুৎ থাকলেই উৎপাদন ক্ষমতা বাড়বে। যদি উৎপাদন ক্ষমতা না বাড়ে তবে শ্রমের মূল্য বাড়বে না। তাছাড়া, আমাদের দেশের সামাজিক কাঠামোয় শ্রমিক-মালিকের মধ্যকার সম্পর্ক ও এ দু’য়ের মাঝখানে সরকারের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধই থেকেছে। এ কারণে আমরা ন্যায্যমূল্যে কোনো পণ্যই পাই না। এক ধরনের পণ্য হিসেবে বিদ্যুৎও এর চেয়ে ভিন্ন নয়। তাছাড়া, সাধারণ ৫টি পণ্যের সঙ্গে বিদ্যুৎকে তুলনা করার মতো সময় এখনও হয়ে ওঠেনি।
গত ১৩ মার্চ বিদ্যুতের মূল্য গড়ে ৬.৯৬ শতাংশ বাড়িয়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) জানিয়েছে, এ মূল্যবৃদ্ধি ১ মার্চ থেকেই কার্যকর হবে। দাম বৃদ্ধির ফলে ইউনিট প্রতি বিদ্যুতের গড় খুচরা মূল্য ৫.৭৫ টাকা থেকে ৪০ পয়সা বেড়ে ৬.১৫ টাকা হবে।
তবে কৃষিসেচ ও ন্যূনতম ব্যবহারকারীদের দাম বাড়ানো হয়নি। ন্যূনতম ব্যবহার সীমা (লাইফ লাইন) ৭৫ ইউনিট থেকে কমিয়ে ৫০ ইউনিট করা হয়েছে। সকল কোম্পানির বিদ্যমান ন্যূনতম চার্জ, সার্ভিস চার্জ, ডিমান্ড চার্জ এবং বিলম্ব চার্জও অপরিবর্তিত থাকবে।
এর আগে ৩ দিনের টানা গণশুনানিতে ভোক্তা-গ্রাহকসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ ও রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলো দাম না বাড়ানোর দাবি জানালেও মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয় বিইআরসি। এমনকি সরকারের ইতিপূর্বেকার প্রতিশ্রুতি মেনে দাম কমানোরও প্রস্তাব উঠে আসে গণশুনানিতে। এক্ষেত্রেও বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি দেওয়ার অনুরোধ আসে সাধারণ মানুষের মাঝ থেকে।
সরকারের নতুন মূল্যবৃদ্ধির তালিকা অনুসারে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) গ্রাহকদের বিদ্যুতের মূল্য ৭.১৭ শতাংশ, ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) ৭.১৪ শতাংশ, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) ৭.৬৯ শতাংশ, ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) ৭.৩৪ শতাংশ এবং পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) গ্রাহকদের বিদ্যুতের মূল্য ৫.৪১ শতাংশ বাড়ছে। ফলে গড় মূল্যবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৬.৯৬ শতাংশ।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১৩
**বিনিয়োগের টাকা দ্রুত তুলতেই দাম বাড়ানো
**কম খরচে স্থায়ী কেন্দ্র হচ্ছে না
**বিদ্যুতের সিস্টেম লস কমানো জরুরি