ঢাকা: ভোক্তা-গ্রাহকসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ, রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের আপত্তির মুখেও সম্প্রতি বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এ নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
বুধবার বাংলানিউজের ‘কীভাবে দেখছেন বিদ্যুতের দাম বাড়ানো’ শীর্ষক নাগরিক মন্তব্যে অংশ নিয়ে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে বিইআরসি’র সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা ও মূল্যবৃদ্ধির পক্ষে ব্যাখ্যা তুলে ধরেন বিইআরসি’র সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ।
তিনি দাবি করেন, বিইআরসি অত্যন্ত পেশাদারিত্বের সঙ্গে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্য নির্ধারণ-পুনর্নিধারণের কাজটি করে আসছে।
ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিইআরসি ভোক্তা-গ্রাহকের স্বার্থকেই সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। এই কাজটি আর কোনো কর্তৃপক্ষের পক্ষেই এমন সুচারুরূপে পালন করা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, এবারের মূল্য সমন্বয় ছিল অত্যন্ত সহনীয় ও গরীববান্ধব। এবার ১-৫০ ইউনিট পর্যন্ত গ্রাহকের জন্য কোনো অর্থাৎ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য কোনো মূল্যবৃদ্ধি হয়নি। প্রায় ২ কোটি ৭০ লাখ মানুষ এই সুবিধা পাবে। গরীবের জন্য সৃষ্ট এই বিশেষ স্ল্যাবের সুবিধা অন্য কোনো গ্রাহক পাবেন না।
বিইআরসি’র এই সদস্য বলেন, বাংলাদশ কৃষি নির্ভর দেশ। কৃষক, কৃষিখাত ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিইআরসি এবার কৃষিক্ষেত্রে কোনো মূল্যবৃদ্ধি করেনি। অন্যদিকে শিল্পখাতেও মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে সহনীয় পর্যায়ে। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত গার্মেন্টস সেক্টরসহ কোনো সেক্টরের প্রতিযোগিতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে না। কারণ, এখনও আমাদের শিল্পখাতের বিদ্যুতের মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারের প্রতিযোগীদের চেয়ে অনেক কম।
ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য সারাবিশ্বেই ট্যারিফ সমন্বয় করে থাকে। পৃথিবীর অনেক দেশেই গত দু’দশক ধরে ট্যারিফ ও সাবসিডি নিয়ে এক ধরনের বিতর্ক চলছে।
তিনি বলেন, ট্যারিফ সমন্বয়ের উদ্দেশ্য হচ্ছে সমাজের বিভিন্ন খাতে সুবিধাভোগী ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মধ্যে এক ধরনের সুবিধা পুনর্বণ্টনের এক ধরনের উদ্যোগ নেওয়া। এতে সুবিধাভোগী শ্রেণী সবসময়ই ট্যারিফ সমন্বয়ের বিপক্ষে থাকে।
কারণ সাবসিডির নামে নিজের সুবিধাজনক অবস্থান ধরে রাখতে চায়। বঞ্চিতরা সুবিধা পাক- এমনটি সুবিধাভোগী মানুষ চায় না বলেও মন্তব্য করেন সেলিম মাহমুদ।
এক প্রশ্নের জবাবে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, কমিশন বিভিন্ন সময় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে সাশ্রয়ী মূল্যের বিদ্যুৎ উৎপাদনে নজর দেওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়ে আসছে। কমিশন আশা করে, অদূর ভবিষ্যতে বৃহৎ বেজলোড প্ল্যান্টগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করলে বিদ্যুতের দাম সহনীয় থাকবে।
গত ১৩ মার্চ বিদ্যুতের মূল্য গড়ে ৬.৯৬ শতাংশ বাড়িয়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) জানিয়েছে, এ মূল্যবৃদ্ধি ১ মার্চ থেকেই কার্যকর হবে। দাম বৃদ্ধির ফলে ইউনিট প্রতি বিদ্যুতের গড় খুচরা মূল্য ৫.৭৫ টাকা থেকে ৪০ পয়সা বেড়ে ৬.১৫ টাকা হবে।
তবে কৃষিসেচ ও ন্যূনতম ব্যবহারকারীদের দাম বাড়ানো হয়নি। ন্যূনতম ব্যবহার সীমা (লাইফ লাইন) ৭৫ ইউনিট থেকে কমিয়ে ৫০ ইউনিট করা হয়েছে। সকল কোম্পানির বিদ্যমান ন্যূনতম চার্জ, সার্ভিস চার্জ, ডিমান্ড চার্জ এবং বিলম্ব চার্জও অপরিবর্তিত থাকবে।
এর আগে ৩ দিনের টানা গণশুনানিতে ভোক্তা-গ্রাহকসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ ও রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলো দাম না বাড়ানোর দাবি জানালেও মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয় বিইআরসি। এমনকি সরকারের ইতিপূর্বেকার প্রতিশ্রুতি মেনে দাম কমানোরও প্রস্তাব উঠে আসে গণশুনানিতে। এক্ষেত্রেও বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি দেওয়ার অনুরোধ আসে সাধারণ মানুষের মাঝ থেকে।
সরকারের নতুন মূল্যবৃদ্ধির তালিকা অনুসারে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) গ্রাহকদের বিদ্যুতের মূল্য ৭.১৭ শতাংশ, ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) ৭.১৪ শতাংশ, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) ৭.৬৯ শতাংশ, ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) ৭.৩৪ শতাংশ এবং পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) গ্রাহকদের বিদ্যুতের মূল্য ৫.৪১ শতাংশ বাড়ছে। ফলে গড় মূল্যবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৬.৯৬ শতাংশ।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১৪
** দুর্নীতি কমলে দাম কমবে এ কথা আংশিক সত্য
** অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবে বিইআরসি
** বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি বিইআরসি নিয়ন্ত্রণ করে
**সমন্বয় করতে ডেসকো’র দাম বেশি বেড়েছে