অনেকেরই অভিযোগ, কোনো অজানা কারণে হয়ে যাওয়া কাজ অন্তিমলগ্নে গিয়েও সফল হচ্ছে না। চাকরির পরীক্ষা ভালো দিয়েও চাকরি হচ্ছে না, ব্যবসায় আসা সুযোগ কার্যকর হচ্ছে না, অকারণে বাড়ির জিনিস-পত্রের ক্ষতি হচ্ছে, সন্তানদের পড়াশোনায় মন বসছে না, সংসারে বজায় থকছে না শান্তি।
হতে পারে এর কারণ বাস্তুদোষ। তবে সামান্য কিছু পরিবর্তন করলেই এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। আজকের কলামে রইল এসব সমস্যা সমাধানের কিছু সূত্র।
বাড়িঘর নির্মাণের ক্ষেত্রে বাস্ত্তশাস্ত্রের বহুবিধ রীতি-নীতি রয়েছে। সেই সব রীতি-নীতি কিন্তু নির্মাণ প্রক্রিয়াকে জটিল করার উদ্দেশে মোটেই তৈরি হয়নি। বরং একটু সর্তক হয়ে বাস্ত্তশাস্ত্রের এই রীতি-নীতি মেনে চললে সংশ্লিষ্ট বাড়ি বা ফ্ল্যাটে সারাজীবন সুখ -শান্তিতে বসবাস করা সম্ভব হয়।
অথচ শহরাঞ্চলের বেশির ভাগ ফ্ল্যাট বা বাড়ি তৈরির সময় বাস্ত্তশাস্ত্রের সাধারণ নির্দেশগুলি প্রায় মানাই হয় না। অনেক সময় নির্মাণকারী সংস্থা এমনকি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের হাতেও বাড়ির প্ল্যান তৈরির দায়িত্ব দিয়েও নিশ্চিন্ত থাকা যায় না। তাই নিজেদেরই কিছুটা জেনে রাখা প্রয়োজন।
আর এই প্রয়োজনের তাগিদে আগেই বাস্তু নিয়ে বিভিন্ন তথ্য জানিয়েছি। আজ জানাচ্ছি কিছু সহজ-সরল টিপস। আমার বিশ্বাস এই টিপসগুলি আপনাদের জীনের মান উন্নয়নের সাহায্য করবে।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় দেখেছি বহু ফ্ল্যাট বা বাড়ি নূন্যতম বাস্ত্ত পরিকল্পনা না করেই করা হয়েছে। এর ফলে এসব বাড়ি বা ফ্ল্যাটে বসবাস কালে সংশ্লিষ্ট বাড়ির অধিকাংশ বাসিন্দা নানা সমস্যা ও সংকটের মুখোমুখি হচ্ছেন। স্বাস্থ্যের অবনতি, মামলা-মোকদ্দমা, সাংসারিক কলহ , সন্তানের বিদ্যা স্থানে বাধা , বিয়ে হতে হতেও বাতিল হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
সমস্যার সমাধানে ডাক্তার, মনোবিদ, উকিল কোনো কিছুই বাদ যায় না, তাও যেন সমস্যা কাটতেই চায় না। এ সব ক্ষেত্রে অধিকাংশ সমস্যার মূলে রয়েছে বাস্ত্ত দোষ। তার এই বাস্ত্ত দোষ কাটাতে কী করণীয়।
বাড়িঘর বিক্রি করে দিয়ে চলে যাবেন? নাকি সব ভাঙচুর করে নতুন করে পুনর্নির্মাণ করবেন? বেশির ভাগ মানুষের সেই অর্থবল নেই। বা থাকলেও শহরাঞ্চলে মনের মতো ফ্ল্যাট বা বাড়ি সব সময় পাওয়াও যায় না।
সেই কথা মাথায় রেখে দেওয়া হলো কিছু বাস্তুর সাধারণ টিপস। যেগুলি মেনে চললে সমস্যার অনেকটাই সমাধান হবে বলে আশা করা যায়।
বাস্তুর টিপস-
• বাড়ি বা ফ্ল্যাট কেনার সময় পূর্বের মালিক ও ফ্ল্যাটটির ইতিহাস অবশ্যই জানবেন।
● লক্ষ্য রাখবেন বাড়ির সামনে যেন কোনো গর্ত বা বাধা না থাকে।
● বাড়ি তৈরির আগে মাটি পরীক্ষা করিয়ে নেবেন।
● উত্তর দিকে কিছুটা ঢালু হলে তা বাস্ত্তর পক্ষে শুভ।
● রাস্তার পাশে বাড়ি হলে সবসময় বাড়ি রাস্তা থেকে উঁচু হতে হবে।
● দক্ষিণ পশ্চিম কোণে কোনো জানালা রাখবেন না।
● বাড়ির প্রধান দরজা সর্বদা অন্যান্য দরজার তুলনায় বড় করবেন।
● প্রধান দরজার পাল্লা সবসময় বাইরের দিকে খুলবে। যদিও আজকের দিনের বাড়ি বা ফ্লাটে এই ব্যবস্থা করা একটু কঠিন। তবে বাড়ি থেকে বেরুনোর জন্য যদি কোনো দরজা থাকে তাহলে চেষ্টা করবেন সেই দরজাটি যেন বাইরে খোলা যায়। ।
● প্রধান দরজা যেন দেওয়ালের শেষ প্রান্তে না হয়।
● প্রধান দরজায় কখনও কালো বা ধূসর রং করবেন না। হলুদ, সবুজ চলতে পারে।
● টেলিভিশন, রেডিও, মিউজিক সিস্টেম দক্ষিণ-পূর্ব কোণে রাখবেন।
● দক্ষিণ -পূর্বে কোণে রান্নাঘর সব থেকে ভালো।
● গৃহকর্তা এবং গৃহকর্ত্রী যদি সূর্যোদয়ের আগে বিছানা ছাড়েন তা খুব মঙ্গলকারক।
● শোওয়ার ঘরে আয়না রাখবেন না।
● উত্তর -পূর্ব কোণে প্রার্থনার ঘর রাখবেন।
● প্রার্থনার ঘরে বেশি ওজনের কোনো বস্ত্ত রাখবেন না।
● বাড়িতে কোনো হিংস্রতা বা যুদ্ধের ছবি রাখবেন না।
● রাতে শোওয়ার সময় ঘর সম্পূর্ণ অন্ধকার করে শোবেন না।
● শোওয়ার ঘরের খাট দক্ষিণ-পশ্চিম বরাবর রাখবেন।
● স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক খারাপ হলে তাদের উত্তর-পূর্ব বা দক্ষিণ -পূর্ব কোণে মাথা রেখে শোওয়া উচিত।
● রান্না করার সময় রাঁধুনির মুখ যেন পূর্ব দিকে থাকে।
● কুয়ো -জলের ট্যাংক ইত্যাদি যেন উত্তর-পূর্ব দিকে থাকে।
● লোহা বা বাড়ি তৈরির জিনিসপত্র সর্বদা দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে রাখবেন ।
● জমি এবং বাড়ির আকার বর্গক্ষেত্র হলে সব থেকে ভালো।
● সিঁড়ির সংখ্যা সব সময় বিজোড় হওয়া উচিত। যেমন, ৩,১৩,১৭ ইত্যাদি।
● সেফটিক ট্যাংক উত্তর-পশ্চিম কোণে রাখবেন।
● টাকা -পয়সা গহনার বাক্স, মানিব্যাগ রাখবেন দক্ষিণ -পশ্চিম কোণে।
● উত্তর দিকে মাথা ও দক্ষিণ পা রেখে শয়ন করা বাস্তুমতে নিষিদ্ধ।
● নিজের বাড়ি নিজে তৈরি করলে সর্বদা ঈশান কোণ থেকে নির্মাণ শুরু করবেন।
বাংলাদেশ সময়: ০০০১ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৪