গুলশান-১ থেকে গুলশান-২ এর দিকে যেতে হাতের ডান পাশে খানিকটা হাঁটলেই চোখে পড়বে ‘নীল মেঘের কাব্য’। রাস্তার পাশে দুটি নীল-সাদা চোখ আপনাকে স্বাগত জানাবে নীল মেঘের কাব্যের দুনিয়ায়।

ঢাকায় প্রথমবারের মত কোন চিত্র প্রদর্শনী পাওয়া গেল যা সকাল ৮টা থেকে রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত খোলা থাকবে। বিষয়টি বেশ মজার। যার যখন মন চাইবে একবার ঘুরে আসতে পারেন নীল এর দুনিয়া থেকে।
নেভী ব্লু, ব্লু, কালচে গাঢ় নীল ও নীলাভ সাদা, নীল রঙকে এই চারটি ভাগে ভাগ করেছে রঙ মনোবিজ্ঞান। রঙ নাকি মনের কথা বলে। নানা রঙের নানা মানে আছে। এক-একজন শিল্পী এক-একটি রঙের প্রতি দূর্বল থাকেন। শিল্পী মাহবুবুল হক নীলের প্রেমে পড়েছেন। অথবা তিনি নীলের মাঝেই বুঝি ডুবে আছেন। নীল আর সাদা রঙের হাজিরা তার প্রতিটি আর্টওয়ার্কে। রঙ মনোবিজ্ঞানের মতে নীলাভ সাদা রঙের মানে হচ্ছে নিজেকে চেনা, জানা ও বুঝার ইচ্ছা, আত্মজ্ঞান লাভের আকুতি, অনন্তসত্তাকে জানার আকুতি, সরলতা, তর্ক না করা, নির্লিপ্ততা, নিজেকে আড়াল করে রাখা, সাদাসিদে ভাব, সর্বদা মানুষের কল্যাণের মানসিকতা সহ আরো কত কি। আর এসব শব্দ ও বাক্য শিল্পী মাহবুবুল হকের সঙ্গে মিলে একাকার হয়ে যায়। মানুষটি যেমন তেমনই তার শিল্প। শিল্পীর সঙ্গে ব্যক্তি পরিচয় থাকার কারণেই কথাগুলো বলছি।

শিল্পী রঙ দিয়ে যেমন নিজেকে চিনিয়েছেন। তেমনি ছবির ভাষায় বলেছেন হাজারো নিরব কথা। একজন মেঘ চোরের গল্প বলেছেন, নীল সাদায় এঁকেছেন সাভার ট্রাজেডির রেশমাকেও, আছে রামুর ঘটনা, নির্বিকার চন্দ্রগ্রস্থ মানুষের দেখা মিলে এখানে। কাঁটা তারে আটকে যাওয়া চোখের ভেতরই দেখিয়েছেন সীমান্ত হত্যার ফেলানীর রুপ। এসব দেখতে দেখতে আপনি কাগজের নৌকায় করে ঘুরে আসতে পারেন নীলের ভুবন, দেখতে পারেন হলদে বাঘপাখি।
আছে নীল স্বপ্ন, সাদা চাঁদ, ফুল ও পাখি আর অসংখ্য চোখ। প্রায় প্রতিটি ছবিতেই কোন না কোনভাবে সাদা চোখ চুপ করে চেয়ে থাকে। যেন প্রতিটি ছবিই একটি ‘থার্ড আই’। সব স্নিগ্ধ মূহুর্ত ফ্রেম বন্দি আছে এ নীল কাব্যের দুনিয়ায়। শিল্পীর মতই সহজ আর সরল তার চিত্রকর্ম। এই চিত্র প্রদর্শনীটি দেখতে আপনাকে আর্ট ক্রিটিক হতে হবে না। বিমূর্ত বা অ্যাবাসট্রাক বলতে যা বুঝায় তার ভাবমার্কা দুনিয়ায় পড়ে আপনাকে অযথাই না বুঝে মাথা দুলানোর অভিনয় করতে হবে না এ প্রদর্শনী দেখতে এসে।


ঢাকা চারুকলা ইনস্টিটিউট এর সাবেক ছাত্র মাহবুবুল হক মূলত ভাস্কর্য শিল্পী। তাই তার চিত্রকর্মেও ভাস্কর্যের ছাপ ও রেখা চলে আসে অগোচরে। যেমন করে নীল বসত করে তার মনের ঘরে। প্রদর্শনীর ব্রোশিয়ারে লেখা মাহবুবুল হকের কথা দিয়েই শেষ করছি নীল মেঘের কাব্যের জার্নি।
তিনি লিখেছেন, নীলের মধ্যেই আছি। ডুবে আছি। যা দেখি সব নীল। নীলে নিজেকে দাঁড় করিয়ে দেখা। কতটা নীল দেখা যায়! নিজের ভেতর বসবাস করা অন্যকে কিংবা অন্য কিছুকে। চাঁদ সূর্য কতটা গ্রাস করতে পারে নীলকে? নীল কি আলো খেয়ে নিচ্ছে, নাকি আলোই নীলকে খেয়ে নিচ্ছে আজকাল...
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০১৪