আমরা সবাই জানি শরীর-স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পরিমিত ঘুমের প্রয়োজন। আমরা চেষ্টাও করি ঘুমের নিয়মটা ঠিক রাখতে।
ছোটবড় প্রায় অনেকেই ঘুম নিয়ে নানা জটিলতায় ভোগেন। আমাদের আজকের এ ছোট ছোট টিপসগুলো তাদের জন্যই।
১.অ্যালার্ম সেট করে ঘুমুতে যান

যদি ঘুমুতে দেরি হয় স্বাভাবিকভাবে ঘুম ভাঙতেও দেরি হবে। আর সেই সঙ্গে সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারবেন কি পারবেন না, এ চিন্তাতে হয়তো ঠিকমতো ঘুমই হবে না। এ সমস্যা থেকে রেহাই পেতে এবং রাতে ভালো করে ঘুমিয়ে সকালে ঠিক সময় ঘুম থেকে জাগতে আপনার মোবাইল বা ঘড়িতে অ্যালার্ম দিয়ে ঘুমুতে যান।
২.শব্দ নিয়ন্ত্রণ
অতিরিক্ত বা উচ্চশব্দে কখনো ঠিকমতো ঘুম হয় না। আবার একেবারে নিস্তব্ধ পরিবেশেও কেমন যেনো অস্বস্তিবোধ হয়। উভয় ক্ষেত্রেই ঘুম হয় না। একটা তন্দ্রা ভাব হয় মাত্র। এ ধরনের ঘুম থেকে জেগে ওঠার পর আমাদের মধ্যে একধরনের মাতাল ভাব কাজ করে। আর এতে কোনো কাজই ঠিকমতো করা যায় না। যার প্রভাব সারা দিন ধরে চলতে থাকে। কাজেই শোবার ঘরটায় যাতে শব্দ খুব একটা প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখুন। আবার আপনার ঘরকে এতোটাই নীরব রাখবেন না যে সেটা মহাশূন্যের মতো নিস্তব্ধ হয়ে যায়। বরং হালকা শব্দ আপনাকে কিছুটা স্বস্তি ও নিরাপদ ভাব এনে দেবে। যা নিশ্চিন্তে ঘুমানোতে সহায়ক হবে।
৩. মৃদু আলো, শান্তির ঘুম

উচ্চ আলো ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। কাজেই যাদের আলো থাকলে ঘুম আসতে চায় না, তারা যতটা সম্ভব ঘরে আলো ঢোকার রাস্তা বন্ধ করুন। যদি সেটা কোনোভাবেই সম্ভব না হয় তবে চোখে মাকস ব্যবহার করুন।
৪. তাপমাত্রায় ঘুমের তারতম্য
অতিরিক্ত শীত বা গরমে ঘুমাতে কষ্ট হয় এমন অনেকেই আছেন। ঘুমটাকে আরামদায়ক করতে আর শীত থেকে রক্ষা পেতে লেপ-কম্বলের পাশাপাশি হাতে ও পায়ে মোজা ব্যবহার করুন। এতে আপনার হাত-পা গরম হয়ে তাড়াতাড়ি ঘুম চলে আসবে।
আবার অতিরিক্ত গরমে বারবার ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম না এলে মাথাও জাম হয়ে থাকে। ঘরকে এমন এক টেম্পারেচারে রাখুন যাতে ঘর অতিরিক্ত গরম বা ঠাণ্ডা না হয়। কেননা দুটোই ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়।
৫. শোবার ঘরে প্রশান্তির রং

শোবার ঘরে প্রশান্তির রং আপনার মনে ও শরীরে এক ধরনের উষ্ণতা এনে দেবে। হতে পারে এটা হালকা নীল বা নমনীয় হলুদ। আর আপনার শরীর-মনের এ উষ্ণতা ও প্রশান্তি আপনার আরামদায়ক ঘুমে সহায়ক হবে।
৬. দিনঘুম সাবধানে
দিনের বেলার ঘুম রাতের ঘুম হারাম করে ধারণাটা ঠিক না। দিনের সামান্য ঘুম রাতের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় না। বরং তা আপনার কর্মদক্ষতা আর সচেতনতা বাড়াতে সহায়ক। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন তা যেনো কোনা মতেই ৩০ মিনিটের বেশি না হয় এবং রাতে শোয়ার সময়ের খুব কাছাকাছি সময় না হয়।
৭. বিকেলে চা-কফি নয়

সন্ধ্যায় চা-কফি না হলেই যেনো নয়। আর তাই আপনি হয়ত আপনার ঝিমুনি বা শরীরের ম্যাজ্যম্যাজে ভাব কমাতে এক কাপ চা-বা কফির দারস্থ হনই। কিন্তু এতে যদি আপনার রাতে ঘুমাতে ব্যাঘাত ঘটে তবে এটা পরিহার করাই শ্রেয়। কেননা এতে যে ক্যাফেইন আছে তার প্রভাব আপনাকে দীর্ঘ সময় বিছানায় যাওয়া থেকে বিরত রাখবে।
৮. লেপ-কম্বল আলাদা
আমাদের দেশের পরিপেক্ষিতে এক বিছানায় একজন ঘুমান এমন লোকের সংখ্যা বেশি নয়। বিশেষ করে যাদের বেশ কয়েকজন ভাইবোন আছে। এক্ষেত্রে আলাদা কাথা, কম্বল বা লেপ ব্যবহারের চেষ্টা করুন।
৯. ফিটফাট বিছানা

আরামদায়ক ঘুমের জন্য চাই একটা আরমদায়ক ও ফিটফাট বিছানা। এক জরিপে দেখা গেছে যারা ঘুমের সমস্যায় ভোগেন তাদের অধিকাংশেরই বিছানার সমস্যা। আরমদায়ক না এমন বিছানা আপনার রাতের ঘুম কেড়ে নিতে পারে। আপনার বালিশটিকেও আরামদায়ক হতে হবে। সে সঙ্গে বিছানা বলিশ পরিষ্কার রাখুন এবং ঘুমাতে যাওযার আগে বিছানা ঝেড়ে নিন।
১০. টিভি-ল্যাপটপ দূরে থাক
ঘুমোতে যাওয়ার কমপক্ষে এক ঘণ্টা আগে টিভি, ল্যাপটপ বন্ধ করুন। সম্ভব হলে এগুলো শোয়ার ঘর থেকে দূরে রাখুন। আর অনেকসময় টিভি বা ল্যাপটপে মজার কিছু দেখতে থাকলে ঘুম আসা তো দূরের কথা উল্টো ঘুম চলে যায়। এছাড়া যে বিষয়টি আপনি টিভিতে দেখলেন তার প্রভাবও অনেক্ষণ পর্যন্ত আপনার মস্তিষ্কে থাকে।
১১. শরীর চর্চায় ভালো ঘুম

২০১৩ সালে আমেরিকায় করা ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশনের এক জড়িপে দেখা গেছে, নিয়মিত শারীরিক কসরত বা এক্সারসাইজ ভালো ঘুমের অন্যতম সহায়ক। তবে এ ব্যায়াম যে দীর্ঘসময় ধরে করতে হবে এমন কোনো ধরাবাধা নিয়ম নেই। প্রতিদিন সামান্য একটু এক্সারসাইজ আপনার দিনকে ঝরঝরে এবং রাতের ঘুমকে আরও আরামদায়ক করে তুলতে পারে। তবে যদি রাতে আপনি ব্যয়ামে অভ্যস্ত হোন তবে তা যেনো অবশ্যই বিছানায় যাওয়ার অন্তত দুই ঘণ্টা আগে হয়।
১২. রাতে ভারী খাবার একদমই নয়
একথা আজ আমরা সবাই জানি অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার বা জাঙ্কফুড শরীরের জন্য একেবারেই উপকারী নয়। আর তা যদি হয় রাতে তবে আপনার রাতের ঘুম হারামই বলা যায়। রাতে যদি আপনি বেশি প্রোটিনযুক্ত খাবার খান তবে তা আপনার পরিপাকে বা হজমে ব্যাঘাত ঘটাবে আর তা আপনার রাতের ঘুমকে হারাম করবে।
১৩. হালকা ধাঁচের বই পড়ুন

শোয়ার সময় বই পড়া আপনাকে অনেক রিলাক্স এনে দেয়, তাই কি? হ্যা আবার নাও। কেননা এমন অনেক বই আছে যা রহস্যময় এবং আপনার অতিরিক্ত মনোযোগ আকর্ষণ করে, সেক্ষেত্রে এটা আপনাকে রিলাক্সের চেয়ে বেশি বিক্ষিপ্ত করে তুলতে পারে। কাজেই বিছানায় হালকা ধাঁচের কোনো বই পড়ুন, দেখবেন তাড়াতাড়ি ঘুম চলে আসবে।
১৪. ছুটির দিনেও রাত জাগা নয়
সপ্তাহের কাজের দিনগুলোতে নিয়ম মেনে ঘুমাতে যাওয়া এবং সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠা অনেকের কাছেই যন্ত্রণা মনে হয়। কিন্তু সময় মেনে ঘুমাতে যাওয়া ও ঘুম থেকে জেগে ওঠা একটা বিজ্ঞ পদক্ষেপ। কিন্তু অন্যদিনের চেয়ে বেশি সময় জেগে থাকা বা না ঘুমুতে যাওয়া আপনার শরীরের প্রাকৃতিক ঘড়িকে নাড়িয়ে বা ওলট-পালট করে ফেলতে পারে। যে কারণে আপনি আপনার সাপ্তাহিক ছুটির পর দিনও ঘুমঘুম অনুভব করতে পারেন। ফলে একদিন বাসায় থেকেও আপনাকে ঠিক ফ্রেস দেখাবে না।
১৫. লোমযুক্ত বন্ধুদের দূরে রাখুন

গরগর করে এবং লেজ আছে এমন প্রাণী আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাবে। যদিও আপনি এর আদর উপভোগ করেন। তবে আরামের ঘুমের চেয়ে তো এটা বড় নয়! এদের রাগ, শ্বাস-প্রশ্বাস আপনার অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। উপরন্তু তাদের ঘুমও আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
আগামীতে থাকছে, ‘আরামদায় ঘুমে প্রার্থনা আর যোগব্যায়াম’।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০১৪