ঢাকা: মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। জয়-পরাজয়ের হিসাব নয়, ভীতুদের কাছে মৃত্যু আতঙ্কের কারণ।
মনুষ্য সমাজে ভীতুর পাশাপাশি দুঃসাহসী দেখা গেলেও প্রাণীকূলে দুঃসাহসের প্রমাণ সহসা পাওয়া যায় না। বিশেষ করে অপেক্ষাকৃত দীর্ঘকায় বা সবল কোনো প্রাণী ভয় দেখালে অথবা আক্রমণ করলে অপেক্ষাকৃত ছোট বা দুর্বল প্রাণীটি পালিয়ে বাঁচে-এমনটিই সচরাচর দেখা যায়।
তবে, ক্ষুদ্রকায় একটি বনবিড়ালের অবর্ণনীয় দুঃসাহসের প্রমাণ ফ্রেমবন্দি হয়েছে জার্মানির জীববৈচিত্র্য বিষয়ক চিত্রগ্রাহক ক্লাদিয়া হোফের ক্যামেরায়। আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণের দেশ বতসোয়ানার গালাগাদি ট্রান্সফ্রন্টিয়ার পার্কে একদল সিংহের সঙ্গে একটি ক্ষুদ্রকায় বনবিড়ালের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লড়াইয়ের দৃশ্য ফ্রেমবন্দি করেছেন ক্লাদিয়া।
নিজের ক্যামেরায় বন্দি হওয়া ছবিগুলোর বর্ণনা দিয়ে ক্লাদিয়া হোফ বলেন, অবিশ্বাস্য দৃশ্য ছিল সেটা। খুব সম্ভবত অসতর্কতাবশতঃ পার্কে ঝিম মেরে থাকা একটি সিংহের সামনে চলে আসে বনবিড়ালটি। স্বভাবতই সিংহটি বিড়ালটিকে থাবা মেরে আঁচড়ে ধরে। কিন্তু নিজের আকৃতির চেয়ে প্রায় ৩০ গুণ অতিকায় সিংহের ভয়ংকর গর্জনে-আঁচড়ে একটুও ভয় পেল না বিড়ালটি। বনের রাজার মুখের কাছে পড়া মানে মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও হিস হিস করে নিজের সামর্থ অনুযায়ী গর্জে ওঠে বিড়ালটি।
ক্লাদিয়া বলেন, বিড়ালের হিস হিস শব্দে আরও ক্ষেপে যায় সিংহ। ইতোমধ্যে তার সঙ্গে যোগ দেয় আরও গোটা কয়েক সিংহ। সবগুলো সিংহ মিলে বিড়ালটিকে নিয়ে ভয়ংকর খেলা খেলতে থাকে। কিন্তু দুঃসাহসী বিড়ালটি নিজের নখরের আঁচড় দিয়ে উল্টো আক্রমণ করতে থাকে সিংহগুলোকে। এভাবে সিংহের গর্জন-আক্রমণের সঙ্গে চলে বনবিড়ালের প্রতিরোধও।
চিত্রগ্রাহক ক্লাদিয়া জানান, দীর্ঘ সময় একদল সিংহের সঙ্গে লড়াই করার পর দুর্বল হয়ে পড়ে বিড়ালটি। ভয়ংকর আঁচড়-থাবায় বিড়ালটির শরীর থেতলে গেলেও সিংহগুলো যখন তার দিকে তাকাচ্ছিল তখনও বিড়ালটিকে প্রতিবাদী দেখাচ্ছিল। বিড়ালটি তখনও সিংহগুলোর নির্যাতনের জবাবে চেঁচিয়ে উঠছিল। তবে একসময় মরণ কামড় দেয় একটি সিংহ। ব্যস নিষ্প্রাণ হয়ে যায় একটি দুঃসাহসী বনবিড়ালের দেহ।
বিড়ালটির প্রাণ সংহারের পর সেটিকে কামড়ে বনের ভেতরে নিয়ে যেতে দেখা যায় একটি সিংহীকে।
ক্লাদিয়া বলেন, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লড়াইয়ের সর্বোচ্চটুকু দেখিয়ে গেল দুঃসাহসী বিড়ালটি।
বাংলাদেশ সময়: ০৩০৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০১৪