ঢাকা, শুক্রবার, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৬ মে ২০২৫, ১৮ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

গুগলের ‘নিরাপত্তা রাজকন্যা’

ফিচার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:২৭, অক্টোবর ৬, ২০১৪
গুগলের ‘নিরাপত্তা রাজকন্যা’ ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: বয়স মাত্র ৩১। তাকে চালাতে হয় ঠিক ৩১ জনেরই (নিজে সহ) একটি দল।

সবাই সাদা টুপির হ্যাকার। সাদা টুপি মানে তারা হ্যাকার হিসেবে ভালো। তাদের কাজ, সফটওয়্যার জায়ান্ট গুগলের ওয়েব ব্রাউজারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

যার কথা দিয়ে শুরু, তিনিই এই নিরাপত্তা রক্ষাকারী দলটির প্রধান। নাম পারিসা তাবরিজ। কাগজে-কলমে তার পদের নাম ইনফরমেশন সিকিউরিটি ইঞ্জিনিয়ার হলেও, গুগল পরিবার তাকে ভালোবেসে সিকিউরিটি প্রিন্সেস অর্থাৎ নিরাপত্তা রাজকন্যা বলে ডাকে।

সারা বিশ্বে প্রতিদিন কোটি কোটি মানুষ গুগল ক্রোম ব্যবহার করেন। গুগলের এই ওয়েব ব্রাউজারটিসহ ক্রিমিনাল হ্যাকারদের আক্রমণ থেকে ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন রাজকন্যা পারিসা। এছাড়াও, ব্রাউজারে নিরাপত্তাজনিত কোনো ত্রুটি সৃষ্টি হচ্ছে কিনা, সেটাও তাকে নজরে রাখতে হয়।    

সম্প্রতি টোকিও কনফারেন্সে এসেও এই মজার পদবি নিয়ে কথা বলতে হলো তাকে। পারিসাও মজা করে বলেন, সবাই এটা বেশ গুরুত্বের সাথে নেয়। আর আমার মধ্যেও রাজকন্যা রাজকন্যা ভাব আসে!

তবে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশ নেওয়া নিয়ে খেদ প্রকাশ করেন রাজকন্যা। গুগলের প্রকাশিত তথ্যমতে, গুগলে নারী কর্মী প্রতি একশ জনে মাত্র ৩০ জন।

সেটা ধরেই বলেন, আজ থেকে ৫০ বছর আগেও মেডিসিন ও আইন পেশায় নারী-পুরুষের শতকরা হার প্রায় সমান সমান ছিল। বর্তমানে প্রযুক্তি অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। কিন্তু এখানে নারীরা এখনও তাদের প্রাপ্য সম্মানটুকু পাননি।   

এ অবস্থায় আসতে পারিসাকেও কাঠখড় কম পোড়াতে হয়নি!  বিশেষ করে অজ্ঞতার বিরুদ্ধে লড়তে হয়েছে তাকে।

শোনা যাক তার মুখেই, ২০০৭ সালে আমি যখন গুগলে যোগ দিই তখন আমার এক পুরুষ সহকর্মী বলেছিলেন, আমি নারী বলেই চাকরিটা পেয়েছি।

তিনি আমার মুখের উপরই কথাটা বলেছিলেন! আমি নিশ্চিত, এরকম করে আরও অনেকেই ভাবেন। তবে আশাকরি একটা সময় এভাবে কেউ ভাববেন না। এজন্য নারীদেরকেই বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে, যোগ করেন পারিসা।

যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে বেড়ে উঠেছেন গুগল ক্রোমের এই নিরাপত্তা রাজকন্যা। দুই ভাই আর এক বোনের পরিবারে পারিসা বড়। বাবা একজন ইরানি ডাক্তার, অন্যদিকে মা পোলিশ-আমেরিকান সেবিকা। সেদিক দিয়ে তাকে ইরানি-আমেরিকান বলা চলে। মজার ব্যাপার হলো, যিনি বলতে গেলে কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ, তার বাবা-মা’ই কম্পিউটারে অজ্ঞ!

নিজের শৈশব সম্পর্কে জানান, ভাইরা ছোট হওয়াতে তাদের উপর নাকি নেতাগিরি ফলাতেন পারিসা। আর বড় হওয়ার সুবাদে তাদের সারক্ষণ পেটাতেন। ভাইরাও নানা কৌশলে লুকিয়ে তাকে আক্রমণের চেষ্টায় থাকত। কিন্তু অতি বুদ্ধিমতি রাজকন্যা তাদের সব জারিজুরি ধরে ফেলতেন।

আর ঠিক এটাই পরবর্তী জীবনে সবচেয়ে সুফল হয়ে দেখা দিল তার। হ্যাকারদের আক্রমণের বহুমুখী প্রচেষ্টা আগাম ভাবতে পারার সক্ষমতা তাকে দ্রুতই গুগলের এত বড় দায়িত্বে নিয়ে আসে।

স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১২ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিনের ৩০ বছরের নিচে প্রভাবশালী শীর্ষ ৩০ ব্যক্তির তালিকায় তার নামটিও ছিল। ওই তালিকায় ছিল ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গের নাম।

নিজে হ্যাকার ছিলেন। তাই হ্যাকার বা হ্যাকিং নিয়ে কথা হবে না, তা কী হয়!

‘অধিকাংশই হ্যাকারদের খারাপ ভাবেন। হ্যাঁ, অনেকেই খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে হ্যাকিং করেন। তবে আমি মনে করি, হ্যাকারদের আরও ভালো জনযোগাযোগ দরকার। সবাইকে এটা জানানো দরকার যে, আমরা হ্যাকররা সবাই একরকম নই। ’

ক্যালিফোর্নিয়ার মাউন্টেন ভিউয়ে গুগল ক্যাম্পাসের কাছেই থাকেন পারিসা। অবসরে এই রাজকন্যা ছবি তোলা, পাহাড়ে চড়া ও আইসক্রিম বানাতে পছন্দ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৬, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।