ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

স্মরণীয়-বরণীয় ১০ নারী

সানজিদা সামরিন, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০১ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০১৫
স্মরণীয়-বরণীয় ১০ নারী

ঢাকা: সভ্যতার শুরু থেকে নারীরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সমাজে নিজেদের অধিকার, কর্মক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিবেশ, শোষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন তারা।

পদে পদে এসেছে বাধা-বিপত্তি, তবুও দমে যাননি। আত্মবিশ্বাস আর বিজয়ের প্রেরণা নিয়ে লড়াই করে গেছেন।

সময়টা ১৮৫৭ সালের ০৮ মার্চ। ওই সময় নারী আন্দোলন প্রাতিষ্ঠানিকতার রূপ পায়। শুরুতে কর্মক্ষেত্রে যথাপোযুক্ত মজুরি ও নারী-পুরুষ সমানাধিকার দাবি করলেও, পরে নারীরা প্রতিষ্ঠা করেছেন নিজেদের ভোটাধিকার ও রাষ্ট্রীয় সম্মান।

বর্তমানে নারীর পদচারণা বিশ্বের সবখানে। রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে শুরু করে মহাকাশ ভ্রমণ, সব ক্ষেত্রেই রয়েছে তার বীরত্বগাথা। বহ্নিশিখার মতো নারী ব্যক্তিত্ব, যারা যুগে যুগে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন তাদের গল্প নিয়েই এবারের আয়োজন।

মাদার তেরেসা

মাদার তেরেসার কাছে সেবাই ছিল ধর্ম। ১৯১০ সালে জন্ম নেওয়া এ নারী সারাজীবন দুস্থ, অসহায় ও দ‍ুরারোগ্য রোগীদের সেবা করেই কাটিয়েছেন। তিনি ছিলেন রোমান ক্যাথলিক ও আলবেনিয়ান বংশদ্ভূত। ভারতে তিনি মিশনারিজ অব চ্যারিটি নামে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। মাদার তেরেসা নিজেই প্রায় একহাজারের বেশি অসুস্থ ও মৃত্যুপথযাত্রী রোগীর সেবা করেছেন। বর্তমানে ১শ’ ৩৩টি দেশে মিশনারিজ অব চ্যারিটির সেবাদান কার্যক্রম বহাল রয়েছে। মাদার তেরেসা তার অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৭৯ সালে নোবেল পদক পান। ২০০৩ সালে পান ‘ব্লেজড তেরেসা অব কোলকাতা’ উপাধি। ১৯৯৭ সালে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়।

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ

দ্বিতীয় এলিজাবেথ কমনওয়েলথভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর রানি হিসেবে ১৯৫২ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করছেন। তার পুরো নাম এলিজাবেথ আলেজান্দ্রা মেরি। ১৯২৬ সালে লন্ডনের মেইফেয়ারে তার জন্ম। তিনিই ব্রিটিশ সম্রাটদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে রাজ্য পরিচালনা করছেন। তার শাসনকালে কমনওয়েলথ ও ব্রিটেনের আর্থ-সামাজিক ব্যাপক উন্নতি হয়।

ইন্দিরা গান্ধী

ইন্দিরা গান্ধী ছিলেন ভারতের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। তার শাসনকাল ছিল ১৯৬৬ থেকে ১৯৭৭ ও ১৯৮০ থেকে ১৯৮৪। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম এ বন্ধুর জন্ম ১৯১৭ সালে। ১৯৭৭ সালের শেষের দিকে দেশে শান্তিশৃঙ্খলা আনার জন্য তিনি জরুরি অবস্থা জারি করেন। তবে তার জীবনের শেষ সময়টা ছিল অতি করুণ। ১৯৮৪ সালে শিখদের স্বর্ণ মন্দিরে সেনা অভিযানের নির্দেশ দেন ইন্দিরা গান্ধী। তার বিশ্বস্ত দেহরক্ষী নিজেই একজন শিখ ছিলেন। এ ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবে ১৯৮৪ সালে তার দেহরক্ষীই তাকে হত্যা করেন।

মেরিলিন মনরো

রূপালি পর্দার এ কিংবদন্তি সব সময়ের সেরা। মডেল ও অভিনেত্রী ছাড়াও তার আরেক পরিচয়, তিনি একজন সঙ্গীতশিল্পী। ছোটবেলায় অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠলেও বড় হয়ে করেছেন বিশ্বজয়। তার চলচিত্রের মধ্যে রিভার অব নো রিটার্ন (১৯৫৪), সাম লাইক ইট হট (১৯৫৯), অল অ্যাবাউট ইভ (১৯৫০)  উল্লেখযোগ্য। ১৯২৬ সালে জন্ম নেওয়া এ কালজয়ী নারী ১৯৬২ সালে মারা যান।

ভ্যালেন্তিনা তেরেসকোভা

রুশ বংশদ্ভূত ভ্যালেন্তিনা তেরেসকোভা হলেন মহাশূন্যের প্রথম নারী নভোচারী। তার পুরো নাম ভ্যালেন্তিনা ভ্লাদিমিরোভনা তেরেসকোভা। ১৯৩৭ সালে মধ্য রাশিয়ায় তার জন্ম। সোভিয়েত এ নভোচারী ১৯৬৩ সালের ১৬ জুন ভস্তক-৬ মহাকাশযানে ৭১ ঘণ্টায় ৪৮ বার পৃথিবীর কক্ষপথ প্রদক্ষিণ করেন। পরবর্তীতে তিনি সোভিয়েত বিমানবাহিনীতে একমাত্র ও প্রথম বেসামরিক ব্যক্তি হিসেবে মহাকাশ ভ্রমণের সৌভাগ্য অর্জন করেন।
তিনবছর পর ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের সুপ্রিম সোভিয়েতের সক্রিয় সদস্য পদ লাভ করেন। পরে তিনি ১৯৬৮ সালে পালন করেছেন সোভিয়েত নারী সমিতির পরিচালকের দায়িত্ব। ২০০৮ সালে তিনি ইউনাইটেড রাশিয়া দলের সহ সভাপতির পদ পান।

ম্যাডোনা

পপ কুইন ম্যাডোনার পুরো নাম ম্যাডোনা লুইস সিসোনি। তিনি একাধারে গায়িকা, গীতিকার, অভিনেত্রী ও ব্যবসায়ী। তার অসাধারণ মিউজিক ভিডিওগুলো লাখো ভক্তের মাঝে সাড়া ফেলেছে। ব্যক্তি স্বাধীনতায় বিশ্বাসী এ শিল্পী তার পপ মিউজিকের মাধ্যমে আধুনিক গানের জগতকে নিয়ে গেছেন কয়েক ধাপ এগিয়ে। ১৯৫৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে তার জন্ম।

প্রিন্সেস ডায়না

১৯৬১ সালে জন্ম নেওয়া ওয়েলসের এ রাজকুমারী তার মানবিক গুণাবলীর জন্য স্মৃতির পাতায় অমর হয়ে রয়েছেন। যুবরাজ তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তাদের এ বিয়ে ছিল সেসময়কার সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। সমাজের দুস্থ, অসহায় ও নিপিড়ীত মানুষের জন্য আমৃত্যু কাজ করেছেন তিনি। ১৯৯৭ সালের আগস্টে ডায়না এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন।

সিমন দ্য বোভোয়্যার

আত্মজীবনী থেকে শুরু করে দর্শন ও সাহিত্য, প্রতিটি ক্ষেত্রেই কলম চালিয়েছেন ফরাসি লেখক ও দার্শনিক সিমন দ্য বোভোয়্যার। এছাড়াও রাজনীতি ও সমাজের বিভিন্ন বিষয়েও তিনি দেখিয়েছেন অগাধ পাণ্ডিত্য। ১৯০৮ সালের ০৯ জানুয়ারি প্যারিসে তার জন্ম। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘সি কাম টু স্টে’ ও ‘দ্য ম্যান্ডারিনস’। নারীবাদী এ লেখক নারীর স্বনির্ভরতা নিয়ে লেখেন বিখ্যাত গ্রন্থ ‘দ্য সেকেন্ড সেক্স’। এছাড়াও পেশাগত জীবনে তিনি ছিলেন শিক্ষক। ১৯৮৬ সালের ১৪ এপ্রিল তিনি প্যারিসে মারা যান।

মেরি ক্যুরি

আধুনিক বিজ্ঞানে নারীর পথচলার অগ্রদূত হিসেবে যে নামটি সবার আগে আসে, তা হলো মেরি ক্যুরি। প্রথম নারী বিজ্ঞানী হিসেবে তিনি নোবেল পদক পান। এছাড়াও তিনি ছিলেন প্যারিসের প্রথম নারী অধ্যাপক। ১৮৬৭ সালের ০৭ নভেম্বর পোল্যান্ডের ওয়ার্সাতে মেরি ক্যুরির জন্ম। ১৯০৩ সালে তেজস্ক্রিয়তার উপর গবেষণার জন্য স্বামী পিয়ের কুরি ও অঁরি বেকেরেলের সঙ্গে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পান। আবার ১৯১১ সালে রসায়নে এককভাবে নোবেল পান তিনি। ১৯৩৪ সালের ০৪ জুলাই ৬৬ বছর বয়সে ফ্রান্সে মারা যান মেরি।
 
ডিড্রিকসন জাহারিয়াস

গলফে জিতেছেন ৮২টি টুর্নামেন্ট! বক্সিং, সাঁতার, হ্যান্ডবল, বেসবল, বাস্কেটবল আর ডাইভিং তো রয়েছেই। সাফল্যের তালিকা দেখে এখন মুগ্ধ হলেও, সে সময়ে নারীদের খেলাধূলা করাটা ছিলো রীতিমতো কঠিন ব্যাপার। নাম মিলড্রেড ডিড্রিকসন জাহারিয়াস। ডাক নাম বেব। জন্ম ১৯১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে। ১৯৩২ সালে অলিম্পিকে ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে পান  দু’টি স্বর্ণপদক। শরীরের ক্যান্সার ধরা পড়লেও দমে যাননি বেব। ১৯৫৪ সালে জেতেন গলফের ইউএস ওপেন। আরও রয়েছে নানা কৃতিত্ব। নিজের নামে গড়ে তুলেছিলেন একটি ক্যান্সার ফাউন্ডেশন। ১৯৫৬ সালে মাত্র ৪৩ বছর বয়সে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন তিনি।


বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৬ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।