প্রতিটি দেশেরই রয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতি। সেই সংস্কৃতি সে দেশের মানুষের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে।
আজ আমরা পরিচিত হবো বিশ্বের কয়েকটি দেশের বিয়ের রীতির সঙ্গে। দেখবো তাদের ভিন্ন সংস্কৃতির কারুকাজ।
চীন
চায়নিজ বিয়েতে রঙের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। লাল আনন্দের প্রতীক। আর বিয়ে মানেই তো আনন্দের ধুম। সেই আনন্দের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে চায়নিজরা তাদের বিয়ের পোশাক থেকে শুরু করে মোমবাতি পর্যন্ত সবকিছুতেই লাল ব্যবহার করে। বিয়ের কাজ শুরু হয় চিঠির মাধ্যমে। পাত্রপক্ষ কনের কাছে তার সম্মতি চেয়ে চিঠি পাঠায়। এক্ষেত্রে পাত্র ও কনে দু’পক্ষই নিশ্চিত থাকে যে বর ও কনে দু’জনেই দু’জনের জন্য উপযুক্ত।
এরপর বর ও কনের রাশি দেখে বিয়ের দিন ধার্য করা হয়। এখানে শুভ ও অশুভ দিনের বাছ-বিচার রয়েছে। সব ঠিকঠাক হলে শুরু হয় মূল আয়োজন। বরপক্ষ কনের বাড়িতে উপহার হিসেবে খাবার ও ঐতিহ্যবাহী উপহার সামগ্রী পাঠায়। এরপরই হয় দু’জনের বাগদান।
তবে চায়নিজদের মধ্যে যৌতুক দেওয়া-নেওয়ার প্রথা রয়েছে। কনের বাবা-মা যৌতুক হিসেবে বিয়ের দিনই বরকে জামা-কাপড় ও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দেয়। অন্যদিকে বরের পরিবার বিয়ের চিঠি কন্যার বাড়িতে পাঠায় কন্যা হস্তান্তরের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হিসেবে।
বিয়ের দিন পাত্র-পাত্রীকে পশ্চিমমুখী হয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হয় ও তিনবার হাঁটু ভেঙে একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনও করতে হয়। প্রথমবার স্বর্গ ও ধরনীর প্রতি, দ্বিতীয়বার পূর্বপুরুষের প্রতি ও বাবা-মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন, তৃতীয়বার একে অপরের প্রতি। তারপর শুরু হয় চা বিতরণ পর্ব। কনে নিজ হাতে বরের পরিবারের সবাইকে চা পরিবেশন করে। এসময় কনেকে উপহারস্বরূপ লাল মোড়কে গহনা ও টাকা দেওয়া হয়।
নবদম্পতি উপস্থিত সব অতিথিকে বিবাহভোজে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানায়। চায়নিজ বিয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো তাদের ভোজসভা। তাদের বিয়ের ভোজের মূল আকর্ষণ মাছ। মাছ তাদের কাছে প্রাচূর্যের প্রতীক।
বর্তমানে বিয়েতে সবসময় লাল রঙের পোশাক না পরলেও কনে কখনও কালো, নীল বা ধূসর রঙের পোশাক পরে না। কারণ এতে তাদের জীবনে নেমে আসতে পারে গভীর শোক। এটাই বিশ্বাস তাদের।
জাপান
জাপানে সাধারণত মন্দিরে বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। অতি প্রাচীন শিন্তো স্টাইলে তারা বিয়ের কাজ সম্পন্ন করে। বর্তমানে জাপানের কমিউনিটি সেন্টারগুলোর ভেতরেই মন্দির থাকে। সেই মন্দিরে বর ও কনেপক্ষের খুব কাছের আত্মীয়দের উপস্থিতিতেই বিয়ে সম্পন্ন হয়।
বিয়ের দিন বর ও কনে উভয়েই পরিশুদ্ধ হয়ে তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক কিমোনো পরে। বর বিয়ের শর্তগুলো পড়ার পর তাদের শক্তির দেবতা কামির কাছে অর্ঘ্য দেওয়া হয়। এরপর অতিথিদের রিসিপশন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সাধারণত এই অনুষ্ঠানে দুটি পরিবারেরই বিশ থেকে ২০০ জন অতিথি থাকে। ব্যাপক খাওয়া-দাওয়া ও নাচ-গান হয়। এসময় বধূ কয়েকবার তার পোশাক পাল্টায়।
ফ্রান্স
ফ্রান্সের বিয়েই যেন শান্তিময় জীবনের নতুন সূচনা। শান্তির সাদা প্রতীক। ফ্রান্সের বিয়ের পোশাকও সাদা। বর কনে উভয়ই বিয়েতে সাদা পোশাক পরে। বিয়ের সাজসজ্জা হয় সাদা গ্ল্যাডিওলাস, অন্য সাদা ফুল এবং পর্দা দিয়ে। বিয়ের শেষে পানীয় হাতে একই সঙ্গে চিয়ার্স ধ্বনি! শুরু হয় উচ্ছ্বসিত জীবনের শুভ সূচনা।
নেদারল্যান্ড
বিয়ে ব্যাপারটাই তো রোমান্টিক। বিয়ে মানেই জীবনে কাউকে আপন করে নেওয়া। যাকে বলা হয় জীবনসঙ্গী। আর এই বিয়ের প্রস্তাবটা যদি হয় কাঠখোট্টা তবে কি মানায়! তাই বুঝি নেদারল্যান্ডে বিয়ের প্রস্তাবের ধারাবাহিকতা দিয়েছে খানিকটা পাল্টে। নেদারল্যান্ডে যখন কেউ কাউকে বিয়ে করতে ইচ্ছা পোষণ তখন তার জানালায় ফুল রেখে আসে। আর এর মাধ্যমেই প্রকাশ পায় তার ভালোবাসা ও আনুগত্য।
জার্মানি
জার্মানিতে বিয়েটাই শুরু হয় ভাঙচুর দিয়ে। তবে এটা অশুভ কিছু নয়। বিয়ের কাজ সম্পন্ন হয় কোর্ট ও গির্জায়। কনের বাড়ির উঠোনে কাঁচের থালা বাসন ছুঁড়ে ফেলে ভাঙা হয়। তারপরই বর কনে কোমর বেঁধে নেমে পড়ে সেগুলো পরিষ্কার করতে! বিয়ের দিনটাই শুরু হয় সংসার পরিষ্কারের কাজ দিয়ে। আর এটাই তাদের সারাজীবন একসঙ্গে কাজ করার প্রয়াস যোগাবে বলে ধারণা জার্মান সমাজের।
বাংলাদেশ সময়: ০১২৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৫