ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

গাছের আড়ালে ঢাকা গ্রাম

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৩০ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০১৫
গাছের আড়ালে ঢাকা গ্রাম ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কিশোরগঞ্জ: 'শূন্য মাঠের দূর সীমানায়, সবুজ রঙের আভা আড়ালে তার একটি গ্রাম, যায় কি বলো ভাবা' এমনি সবুজ একটি গুচ্ছ গাছ আড়াল করে রেখেছে কিশোরগঞ্জের হাওড়াঞ্চলের একটি গ্রামকে। হিজল প্রকৃতির এ গাছটির নাম অনেকে বলেন করচ আর স্থানীয়দের ভাষায় গাছটির নাম চণ্ডীগাছ।



নাম যাই হোক না কেন, গাছটি এ গ্রামের মানুষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে গাছটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে গ্রামটিকে রক্ষা করছে। অন্যদিকে, এ গ্রামকে করেছে সৌন্দর্যমণ্ডিত।

গুচ্ছ এ গাছটির অবস্থান কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলার কলমা ইউনিয়নের কাকুরিয়া গ্রামে। এ গ্রামের জনসংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার।
হিজল জাতীয় গুচ্ছ গাছটির উচ্চতা প্রায় ৫০-৬০ ফুট। মূল গাছ থেকে অনেক ডালপালা বিস্তার লাভ করেছে। শিকড় থেকে তৈরি হয়েছে আরো ৩০/৪০টি গাছ। মাটিতে ডালপালা লেগে বেড়েছে গাছের বিস্তৃতি।

গাছের ভেতরে রয়েছে অনেক ফাঁকা স্থান। ছায়া-সুনিবিড় সেসব জায়গা। গাছতলায় না আছে রোদের প্রকোপ, না আছে বৃষ্টির তীব্রতা। পরিশ্রমে ক্লান্ত হয়ে এ গাছের নিচে কৃষক ও পথিক বিশ্রাম নেয়। সুশীতল এ জায়গায় ঘুমিয়ে পড়াটাও একদম স্বাভাবিক।

স্থানীয়রা জানান, বর্ষাকালে হাওড় বেষ্টিত এ গ্রামের চারদিকে পানি থৈথৈ করে। তৈরি হয় বড়বড় ঢেউ। এ সময় পানিবন্দি এ গ্রামকে ঢেউ থেকে রক্ষা করে গুচ্ছ করচ গাছ। এ গাছের গোড়ায় তখন ডুবে থাকে থাকে ৫/৬ফুট পানির ভেতরে। তবে,

বর্ষাকালেও এ গুচ্ছগাছ বিশ্রামের উপযোগী স্থান। হাওড়ের জেলেরা বিশ্রাম নিতে এ গাছের নিচে এসে ভীড় জমান।  

স্থানীয় লোকজন প্রধান গাছটিকে ঘিরে তৈরি করেছে একটি দেয়াল। ২০০৫ সালে স্থানীয়রা একটি পূজা মণ্ডব তৈরি করে। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মানুষ সুফলের আশায় এ স্থানে ‘মানত’ করে থাকে।

মূল গাছের নিচে প্রতি বছর কার্তিক মাসে রাসপূর্ণিমা তিথিতে তিন দিনব্যাপী হরিনাম সংকীর্তন উৎসব ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়। উৎসবে হাজার হাজার ভক্ত ভিড় জমায়।
উৎসবের কেন্দ্রবিন্দু এ গাছটির বয়স কত, বলতে পারেন না কেউ। কাকুরিয়া গ্রামের বৃদ্ধ নিরোধ চন্দ্র দাস (৭০) বাংলানিউজকে জানান, বাপ (বাবা)-দাদাদের মুখে শুনেছি একটি গাছ থেকে ডালাপালা বেড়ে অনেক গাছ হয়েছে। কিন্তু মূল (প্রধান) গাছ একটি। গাছটির কখন জন্ম হয়েছে, আমরা জানি না। বাপ (বাবা)-দাদারাও গাছটি জন্মের কথা বলতে পারেনি।
 
কাকুরিয়া গ্রামের ডা. আশীষ কুমার দাস (৪৫) জানান, গাছটি হাওর অঞ্চলে অবস্থিত বলে অনেক দর্শনার্থী এর সৌন্দর্য সম্পর্কে অবগত নয়। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া গেলে পর্যটনের জন্য এটি হতে পারে অন্যতম একটি উৎকৃষ্ট স্থান।

কিশোরগঞ্জ সহকারী বন বিভাগ কার্যালয়ের ফরেস্ট রেঞ্জার নারায়ণ চন্দ্র দাস বাংলানিউজকে বলেন, খোঁজ নিয়ে জেনেছি স্থানীয়রা গাছগুলোকে চণ্ডীগাছ বলে। তবে, চণ্ডীগাছ বলতে কোন গাছ নেই। এটি হিজল প্রকৃতির গাছ হতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ০৪৩০ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০১৫     
এমজেড/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।